2008 এ গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ক্রাইসিস এর সম্বন্ধে নিশ্চয়ই আপনারা জানেন।যার সাথে Lehmon Brothers crisis কে ধরা হয়ে থাকে । এটি হবার ফলে পুরো বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল। তাহলে এই যে আজকে বিশেষ ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলবো যেটা হলো Evergrande Debt Crisis , যেটি হলো চায়নার একটি জায়েন্ট কোম্পানি।যেটির ব্যাপারে বিস্তারিত থাকবে নিচে । কি এই ক্রাইসিস এর জন্য 2008 এর মতো অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে, বিশ্বের Stocks কি ক্রাস করতে পারে ?
তাহলে এখানে হচ্ছেটা কি । এখানে এক কোম্পানি আছে যার নাম Evergrande।যেটি একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। এই কোম্পানির কাছে আজ ক্যাশ না থাকায় তারা ব্যাংক থেকে ধার নেওয়া টাকার ইন্টারেস্ট বা সুদ দিতে পারছে না। আর সেখানেই এই কোম্পানিকে 305 বিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করতে হবে ব্যাঙ্ক কে । এই কোম্পানিটি হলো চায়নার প্রোপাটি জায়েন্ট । এই কোম্পানি প্রোপাটি তৈরি করে ,যে রিয়েল এস্টেট এর কাজ করে । আর এই কোম্পানি যেকোন সময় মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। আর এই যে প্রভাব সেটা চায়না ছেড়ে অন্য অন্য দেশেও এর প্রভাব পড়তে পারে ।
কেননা চায়নার মতো এমন অর্থনীতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ । আজকের সময় চায়না খুব ভালো অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী। আর এখানে যদি একটি বড় কোম্পানি মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে তার প্রভাব চায়না ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে দেখা দেবে।
এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয় 1996 এ গুনজাও (Guangzhou) এ । এটি হলো একমাত্র বড় রিয়েলস্টেট ডেভলপার্স চায়নার। এদের মূল কার ছিল যে রেসিডেন্সিয়াল প্রপার্টি গুলি থাকে যার উপর নির্মাণ কাজ শুরু করা। আর বর্তমানে এই কোম্পানি কাছে 1300 টি প্রোজেক্ট ছিল যেটা 280 টি চায়নার শহর জুড়ে বিস্তারিত। তার মানে বলাই চলে এটি একটি খুব বড় মাপের কোম্পানি। আর এই পোজেক্ট গুলি ছিল ভিন্ন। প্রথম প্রথম এই কোম্পানি শুধুমাত্র রিয়েলস্টেট বিজনেস করতো । কিন্তু যতই দিন গড়াল তাদের প্রোজেক্টো ভিন্নতা পেতে শুরু করলো , তার মনো নিবেশ করলো , electronic vehicles, sports and theme parks, food and beverage business, bottled water, groceries and dairy products। এই কোম্পানির কাছে প্রায় 2 লক্ষের বেশি কর্মী আছে এবং তারা জেনারেট করে 3.8 বিলিয়ান যব প্রতিবছর(the website says)।
2010 এ এই কোম্পানি একটি Soccer team কেনে । 185 মিলিয়ন ডলার খরচা করে একটি সকার স্কুল বানান। পুরো বিশ্বের সব থেকে বড় সকার স্কুল তৈরি করেন। এখন বর্তমানে এই কোম্পানি দ্বারা 'lotus-flower shaped soccer stadium' বানান চলছে। যার পেছনে খরচা আসছে 1.7 বিলিয়ন । যাতে সিটিং ক্যাপাসিটি 1 লক্ষের থাকবে।
এর যে শেয়ার আছে সেটি হং- কং এ লিস্টেড। যেমনটি হলো আপনি যদি রিলায়েন্স শেয়ার কিনতে যান তাহলে কোথায় যাবেন? হয় ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ অথবা বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে যাবেন । ঠিক তেমনি এর স্টক লিস্টেড আছে হং-কং এ । সাথে সাথে এই কোম্পানির গত বছরে সেল ছিল 110 বিলিয়ন ।
এটাতো জানলাম কোম্পানির সম্বন্ধে, কিন্তু এই কোম্পানির সমস্যা কোথায় অর্থাৎ মৃত্যু সংকটে কেন পড়েছে এই কোম্পানি? এখানে কোম্পানি ব্যাঙ্ক থেকে ক্রেডিট নেয় এবং বিজনেস বাড়াতে থাকে। ব্যবসা যদি ঠিকঠাক চলে তবে সবই ঠিক আছে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তাকে এমন মোটা অংকে ব্যাংকে রিপেমেন্ট দিতে হয় ওই সময় যদি কোম্পানির কাছে অর্থ না থাকে তবে সেখেত্রে কোম্পানির মৃত্যু সংকট দেখা দিতে পারে। আর এখানে সেটাই হয়েছে এই কোম্পানি প্রচুর লোন তোলে ব্যাঙ্ক থেকে । আর এখন কোম্পানিকে করতে হবে রিপেমেন্ট, কিন্তু কোম্পানি করতে পারছে না । আর যার জন্য কোম্পানি এখানে খুব দ্রুততার সাথে কম দামে রেসিডেন্সিয়াল অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই সমস্যা কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
গত বছর সেপ্টেম্বরে একটি লেটার প্রকাশ্যে আসে, যেখানে আরোপ লাগানো হয়, এই কোম্পানি সরকারের কাছে সাহায্য চাইছে। যাতে এই কোম্পানি কোথাও প্লান লিস্ট করতে পারে। কিছু অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। আর এই ধরনের লেটার যদি কোন কোম্পানি থেকে প্রকাশ্যে আসে তবে বিনিয়োগকারীদের মনে অনিশ্চয়তার অঙ্কুর দেখা দেয়। আর কোম্পানি অস্বীকার করে লেটার লেখার কথাটা।
আর এই ইভারগ্রেড কোম্পানি ওখানে একটি ব্যাংক আছে যার নাম Guangfa Bank এর থেকে প্রচুর পরিমাণে সুদ নিয়েছিল । আর ইভারগ্রেড অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছিল বারংবার আর এখানে ব্যাঙ্ক চাইনিজ কোর্ট এ চলে যায় আর চাইনিজ কোর্ট বলে প্রায় 20 মিলিয়ন ডলার যে আমানত আছে ইভারগ্রেড এর সেটাকে ফ্রিজ করে দেওয়া হোক বা আটকে দেওয়া হোক।
যদি বাজার থেকে ইভারগ্রেড এর মোট ধারের সংখ্যাটা বলি সেটা কোম নয় ।এখানে অনেক প্রোকারের ডেট হয়ে থাকে। শুধু যদি সুদ বহনকারী ধারের কথা বলি যেখানে বার বার সুদ দিতে হয় । তার পরিমান 571.8 বিলিয়ন ইউয়ান। যেটাকে ডলারে রুপান্তর করলে দাঁড়ায় 89 বিলিয়ন ডলার জুনের শেষে । 2020 শেষে এই সংখ্যা ছিল 716.5 বিলিয়ন ডলার । যদি সম্পূর্ণ দেনার কথা বলি তবে যেটা হবে 1.97 ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যেটা চায়নার জি. ডি. পি. এর 2%। এখনে ধার নেওয়া কোন খারাপ কাজ নয় তবে এটা দেখতে হবে কোম্পানি সেই ধার মেটাতে পারছে কিনা। এখান থেকে ধারনা করতে পারবেন কোন দেশের জি ডি পি এর 2% একটি কোম্পানি যদি বহন করে তাহলে সেই কোম্পানি ঋণে জর্জরিত।
তাছাড়া এটাও শোনা যায় এই কোম্পানি নানা জায়গা থেকে ফান্ড এক জায়গায় করছিলেন। 2020, 14 সেপ্টেম্বর কোম্পানি সম্পদ এবং ইক্যুইটি বেচতে অসমর্থ হয়। এর থেকে অর্থ উপার্জনে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি।
কে কে এই কোম্পানি দ্বারা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এখানে Banks, suppliers, home buyers and investors সবাই সমস্যায় পড়বেন। যদি এই কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায় । 'cross default' হয়ে যেতে পারে অর্থাৎ আপনি যদি লগ্নিকারীকে অর্থ প্রদান করতে না পারেন। তাহলে অন্য লগ্নিকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। ওনাকে পেমেন্ট করতে পারবেন না। ওনাকে পেমেন্ট করতে পারবেন না অন্য কেউ চলে আসবে । যার জন্য এটি বৃত্তাকারে বাড়তেই থাকবে। আর শেষমেষ দেউলিয়ার দিকেই বাড়তে থাকবে ।
আরও পড়ুন:মোবাইলের কাজ করবে ফেসবুকের সানগ্লাস
2018 তে চায়নার সেন্ট্রাল ব্যাংক সতর্ক করেছিলেন যে, Evergrande এর মতো কোম্পানিগুলি বড়ো সড়ো ঝুঁকি রাখে দেশের অর্থনীতি কে নিচে করতে । এখানে ইভারগ্রেড 128 টি ব্যাঙ্ক এবং 121 নন-ব্যাঙ্কিয় সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে। সবথেকে বেশি ঋণ নিয়েছে চায়নার Minsheng bank থেকে । তাছাড়া কাল থেকে থেকে স্থরে বন্ড জারি করেও ডলার এ ঋণ নিয়েছেন । আর এখানে যদি পেমেন্ট না করতে পারে কোম্পানি। তাহলে এখানে ডিফল্ট চালু হয়ে যাবে মার্কেটের মধ্যে।
যার জন্য বড় সড় সমস্যা তৈরী হতে পারে চায়নায়। যে এই কোম্পানির শেয়ার যেটা হং-কং এ লিস্টেড। এক বছরের মধ্যে 80% নিচে নেমে গেছে। তাছাড়া এখানে এটাও শোনা যাচ্ছে 13ই সেপ্টেম্বর প্রায় 100 লগ্নিকারী যারা Evergrande's headquarters পৌঁছে গেছিলেন যেটা সেন্জেন এ অবস্থিত। এখানে শেষমেষ দেখার চাইনিজ সরকার কোন প্রকারে এই কোম্পানিকে বাঁচায় কিনা।
এখন একটাই কথা বিশ্ব অর্থনীতিকে এই কোম্পানির পতনকি প্রভাবিত করবে? চাইনিজ সংবাদপত্র Global Times এর লেখায়, এই কোম্পানি কে সরকারের উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিৎ নয়। যা ফান্ড লাগবে তা মার্কেট থেকেই যেন তোলে। তবে যদি কথা বলি বিশ্ব অর্থনীতির কথা তবে Lehmon Brothers এর সাথে Evergrande's এর তুলনা করা যায় না। Lehmon Brothers ছিল এক প্রকারের ব্যাঙ্ক বা লগ্নিকারী ব্যাঙ্ক। আর ইভারগ্রিড একটি রিয়েলস্টেট কোম্পানি যার বিল্ডিং বানায় । এখানে Lehmon Brothers এল সাথে বিভিন্ন দেশের লগ্নিকরী সংস্থার একটি লিঙ্ক ছিল। যেটা এক্ষেত্রে দেখা যায় নি। তবে চায়নায় এই কোম্পানি যদি ডোবে তবে চায়না তো সমস্যার সম্মুখীন হবেই । তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাকি দেশগুলো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তবে এটাও না যে খুব বড় মাপের কোন গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ক্রাইসিস আসবে।
আরও পড়ুন:ক্রমাগত লোকসান গুনতে থাকায় ভারতে উৎপাদন বন্ধের ঘোষনা দিয়েছে বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন