ফগানিস্তান এবং তালিবান ইস্যুতে রিজিওনাল জিওপলিটিক্স, সেই জিওপলিটিক্সে চারটে বড় খেলোয়াড় রয়েছে।  ইরান-পাকিস্তান রাশিয়া এবং চাইনা।  যে মুহূর্তে তালিবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসবে সেই মুহূর্তে পাকিস্তান চায়না এবং রাশিয়া তাদেরকে সমর্থন দেবে তাদের স্বীকৃতি দেবে।  আফগান তালিবান ইস্যুতে ইরানের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ করবে ইন্ডিয়ার সাথে। আফগানিস্তানে তালিবান ইসুতে সবচেয়ে বড় যে ডিজাস্টার ইরানের রয়েছে তার কারণ কি এর সঙ্গে আফগানিস্তানের প্রায় 150 কিলোমিটার দীর্ঘ বর্ডার রয়েছে। ইতালি বন্ধুদেরকে নতুন করে উপদ্রব সহ্য করতে হবে.

 

কেন তালিবানদের ইরান জন্তু বলে তার পেছনের কিন্তু একটা নয় একাধিক কারণ রয়েছে, এবং সেই বীভৎস কারণগুলো যদি আপনারা জানেন। তাহলে আপনাদের রক্ত গরম হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। আপনারা জানেন ইরান হচ্ছে একটা সিয়া দেশ আধুনিক সভ্য এবং প্রগতিশীল দেশ। অন্যদিকে তালিবান হচ্ছে গোঁড়া সুন্নি মুসলমান। এখানে বলে রাখা দরকার যে সুন্নি মুসলমানের খারাপ এরকম কথা কিন্তু আমি বলিনি বা বলছিনা। সৌদিয়ারাবিয়া বলে একটা দেশ আছে তারাও কিন্তু সুন্নি মুসলমানের দেশ এবং তারাও আধুনিক প্রগতিশীল এবং সভ্য দেশ। কিন্তু যদি আপনি তালিবানদের কথায় আসেন তারা যে চূড়ান্ত ফান্ডামেন্টালিস্ট এবং আধুনিক  পৃথিবী থেকে শত শত মাইল দূরে এটা মধ্যযুগীয় আচরণ তারা করে। তালিবানি শাসন মেয়েদেরকে কালো কাপড়ে ঢেকে ফেলুক, মেয়েদের কোন অধিকার নেই তাছাড়া চোখ পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে জাল দিয়ে। তালিবানি শাসন মানে এডুকেশনে তো পাওয়া দরকার নাই। মধ্যযুগের এডুকেশন কিহবে। তালিবান শাসন মানে মুভি মিউজিক এবং খেলাধুলা পর্যন্ত বন্ধ ঘুড়ি ওড়ানো বন্ধ তালিবানি শাসন।


আপনারা জানেন যে কথায় কথায় হাত কেটে দাও, কথায় কথায় পাথর ছুড়ে মারো। মধ্যযুগীয় বর্বরতা তার সমর্থক হচ্ছে তালিবানি শাসন। অপরদিকে যদি আপনি ইরানের কথা চিন্তা করেন লিবারেল সিয়া মুসলমানদের দেশ।যার জন্য তালিবানদের সঙ্গে ইরানিদের মতবাদ গত সংঘাত তো আছে। তার পরেও জানতে হবে আফগানিস্তানে তালিবানি দখল করে নিয়েছে সেই আফগানিস্তান কিন্তু 10 থেকে 15 শতাংশ সিয়া মুসলিম রয়েছে। তালিবান শাসনের উত্থান যদি হয় তাদের কিন্তু এখন এই দেশে বাঁচা মুশকিল হয়ে যাবে এর আগেও 1991 সালে যখন একইরকমভাবে তালিবানরা ক্ষমতায় এসেছিল। এই সিয়া মুসলমানদের উপর কি অত্যাচার নেমে এসেছিল তার অভিজ্ঞতা কেন্দ্রিক ইরানের রয়েছে। তাদের মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল। তাদের বাড়িঘর লুঠ করা হয়েছিল। তাদের ধর্ষণ করা হয়েছিল। তাহলে বলা হয়েছিল তারা সুন্নী মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করুক। না হলে দেশে তাদের থাকতে দেয়া হবে না। তার ফলও তো হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ সিয়া মুসলিম তারা ইরানের সিমানায় এসেছিল উদ্বাস্তু হিসাবে।


তো খুব স্বাভাবিকভাবেই এখন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে সাধারণ যে আফগানিস্তানের মুসলমান তারা তালিবানদের ভয় কিভাবে বিমানে চড়ে পাড়াচ্ছে। সেক্ষেত্রে তারা যারা শত্রু মনে করে সেই সিয়া মুসলমানদের সঙ্গে কি হবে তারা একবার ভাবুন। অথয়েব এই  তালিবানের উত্থান তারা আশঙ্কা করছে সিয়াদের  উপরে আবার আগের মত অত্যাচার নেমে আসবে। এটাতো একটা পয়েন্ট বললাম, আর একটা পয়েন্ট আমি এখন বলতে চাচ্ছে সেটা অত্যন্ত ইমোশনাল একটা পায়েন্ট। আপনারা জানেন কেউ কেউ 1998 সালে আফগানিস্তানে একটা শহর মাজার--শরীফ সেই মাজার--শরীফ আক্রমণ করে কারা তালিবানরা।আর সেখানে ডিপ্লোম্যাট বা কূটনীতিবিদ যাদেরকে বলে তারা সেখানে অবস্থান করছিল, তালেবান জঙ্গিরা সেই 11 জন ইরানীয় ডিপ্লোম্যাট কে সেখান থেকে কিডন্যাপ করে.

 

কেন কিডন্যাপ করে কারন । সেই সময় ইরান ইউএসএ এবং ইন্ডিয়াকে সাপোর্ট করছিল।আপনারা জানেন যে কোনো সভ্য দেশের রাজদূত বা কুটনীতিবিদদের মারা কিন্তু ঘোর অন্যই কাজ। কিন্তু এরাতো তালিবান। সভ্য সমাজের ধার‌ এরা ধারে না। সেই সময় গোটা ইরান প্রার্থনায় ভেসে যাচ্ছিল তারা আবেগে ভেসে যাচ্ছিল। এই বুঝি কিছু একটা ঘটবে এই বুঝি ইরান গভমেন্ট কিছু একটা করবে। যাতে করে এই 11 জন ডিপ্লোমার কে মুক্তি দেয় তালিবানরা।আর ঠিক এই ঘটনা ঘটেছিল  ভারতীয় এয়ার কমান্ডার হচ্ছে অভিনন্দন যখন  পাকিস্তানের সেনার হাতে বন্দী হয়ে গেছিল। তখন একই রকম ভাবে গোটা ভারত বর্ষ আমরা আমাদের দেশ আবেগের ভেসেছিলাম মনে পড়ছে। তাকে মুক্তি দেয়া হোক তাকে মুক্তি দেয়া হোক এবং আমাদের আবেগ কে লক্ষ্য করে ভারত সরকার রীতিমতো যুদ্ধের হুংকার দিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানকে। সেই চাপ সামলাতে না পেরে পাকিস্তান শেষমেশ অভিনন্দন কে মুক্তি দিয়েছিল.

 

একইরকমভাবে কিন্তু ইরানি এদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। সেই 11 জন ডিপ্লোমা বন্দি হয়েছিল  তালেবানদের হাতে। কিন্তু এরি তো তালিবান।এরাতো মুক্তি দেওয়ার কথা তো অনেক দূরের ব্যাপার। প্রতিদিন মুক্তির বদলে একজন একজন করে ইরানীয় কুটনীতিবিদ কে তারা হত্যা করেছে নিশংস ভাবে এবং তার ভিডিওটাকে ইরানে পাঠিয়েছে। ভাবুন এই ঘটনা যদি আমাদের সঙ্গে ঘটতো তাহলে কি হতো। ইরানিরা ঘৃনায় ক্রধে এমন জায়গায় পৌঁছায় যে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার পরিস্থিতিতে পৌছে যায়।  শেষমেষ আমেরিকা এবং ইন্ডিয়া এটাকে সংবরণ করে। যে টোটাল ইনভেশন দরকার নেই।ইরানি সেনা কিন্তু থেমে যায়।  আর ইরানের যে রাগ দীর্ঘমেয়াদী রাগ পোষন করছে ইরান এবং তার ছাপ আছে এখনও। একবার ভাবুন 1998 সালে ঘটে এই ঘটনা 17 বছরেও ভোলেনি তারা। 

 

 2015 সালে এই ঘটনার ওপর বেশ করে একটা সিনেমা তৈরি হয় ইরানীয় সিনেমা।  নাম মাজার--শরীফ 17 বছর পরও তারা এই ঘটনাকে তারা ভোলেনি। সেটা কোথায় লক্ষ্য করা যায় না এই সিনেমাটা সুপার ডুপার হিট হয়েছিল ইরানে। তালিবানদের প্রতি যে ঘৃণা রয়েছে সেখানে ইরানের সরকারের সাধ্য নেই সেই ঘৃণাটা কে সরিয়ে তারা আফগানিস্তানে তালেবানদের কে সমর্থন দেবে। অথয়েব এক্ষেত্রে  আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যে সরকার কাজ করবে সেটা কে আমাদের সুবিধা নিতে হবে। ইরান আমাদের  স্ট্যাটিজিক পার্টনার এই ইসুতে।  আর একটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে সময় আফগানিস্তানে ভিতরে সিয়াদের ইরানি গ্রুপ তৈরি করে কে ইরান সরকার 1998 সালের ঘটনার পর ইরান এতটাই রেগে যায় যে আফগানিস্তানের মধ্যে তালিবানদের এগেনস্টে পাল্টা একটা সিয়া সংগঠন তৈরি করে.

 

যার নাম হিজবুল্লাহই আফগানিস্তান আর হিজবুল্লাহ অস্ত্র এবং অর্থ সাহায্য পায় কার কাছ থেকে ইরানের কাছ থেকে। তাদের কাজ কি তারা আফগানিস্তানের মাটিতে রয়েছে এখনও রয়েছে যদিও ছোট সংগঠন কিন্তু তাদের কাজ আছে তালিবানদের ঘাঁটি আক্রমণ করা। তালিবানের লিডার দেরকে গুপ্ত হত্যা করা এবং তালিবানদের কে কোন রকম ভাবে আফগানিস্তানের মাটি না ছাড়া। এই হিজবুল্লাহ কে  সহায়তা করছে কে ইরান করছে। তার ফলে যেহেতু হিজবুল্লাহ  তালিবানদের বিরুধি স্থানে তালিবানদের সহ্য করতে পারে না। তাদের কেউ একই রকমভাবে সহ্য করতে পারে। না উল্টো ঘৃণা তালিবানদের মনে হয়েছে ইরানের সম্পর্কে ইরানের সম্পর্কে। এর মধ্যে আরেকটা সমস্যা রয়েছে নদীর জল নিয়ে সমস্যা। আপনারা জানেন যে হেলমন্দ নদী রয়েছে যে নদী আফগানিস্তান থেকে ইরানের মধ্যে ঢুকেছে.

 আরও পড়ুন:আকাশ ছোঁয়া রান্নার তেলের দাম !! দায়ী কে ?

আর সেখানে আফগানিস্তান কিছু ড্যাম তৈরি করে, কতটা জল হেলমন নদীতে ইরানে আসবে তা নিয়ন্ত্রণ করে। এত দিন পর্যন্ত আফগানিস্তান নিচে গণতন্ত্র সরকার ছিল । তাদের সঙ্গে কথা বলে ইরান সামলে নিয়েছে । কিন্তু এখন তালিবান ক্ষমতায় এসেছে তাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসবে কি করে ইরান। তারাতো মধ্যযুগীয় একটা ব্যাপার তারা তো সভ্য সমাজের কোনো আইন-কানুন মানেনা। আর এখানে একটা বড় সমস্যা তৈরি হবে ইরানের। কারন এটি  খরা কবলিত এলাকা। আপনারা জানেন জল সেখানে সবথেকে বেশি দামি। ইরানের পক্ষে তালিবানদের সাহায্য করা বা তাদেরকে ঘৃণা করা বা তালেবানদের বিরুদ্ধে যাওয়ার সবচেয়ে বড় যে কারণটা রয়েছে সেটা হচ্ছে অর্থনৈতিক কারণ।ইরান ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য ইরান জাভার পোর্ট নামক একটা পোর্ট তৈরি করছে আরব সাগরে। ভারত এখানে মিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট একটা সহযোগীর ভূমিকায় রয়েছে.

 

এই জাভার পোর্ট কে ব্যবহার করে ইরান আফগানিস্তানের মধ্যে দিয়ে যদি রাস্তা সেই রাস্তা থ্রুতে গোটা মধ্য এশিয়ায় মাল রপ্তানি করতে চাই এবং সেখান থেকে সেই ঘটনাটা ঘটে তাহলে ইরানের যাওয়ার জন্য পোর্ট এলাকায় একটা বড়সড় অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হবে এবং ইরান সরাসরি সেখান থেকে লাভ হবে। সেখানে তাদের সঙ্গে ইরানের কথাবার্তা চলতে সেক্ষেত্রে কোন প্রবলেম ছিল না। কিন্তু এখন আফগানিস্তানের চলে এসেছে  তালিবান। আর আপনারা জানেন যে তালিবান রয়েছে পাকিস্তানের একটা পুতুল সরকার হতে যাচ্ছে। আফগানিস্থান পাকিস্তান এর কলোনি হয়ে গেছে এটা আমার কথা নয়। যারা আফগানিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে এসেছে তারা বলছে যে যে তালিবানরা আফগানিস্তান দখল করেছে তারা দেখবে পাকিস্তান পাকিস্তানের ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে যেটা নিয়ে গণ্ডগোল তার কারণ এতোদিন জাভার পোর্ট। এতদিন জাভার পোর্ট তৈরি হয় নি ।যার পছনে ভারতেরও একটি বড় হাত ছিল। এর ফলে পকিস্থানের করাচি বন্দর ও গোয়াদার বন্দরের উপর চাপ কমে যাবে।  তারপর এখানে চায়না এবং পাকিস্তানের স্বার্থ জড়িত ছিল যার জন্য যার জন্য পাকিস্তান বন্দর আসল বন্দর হিসাবে তুলে ধরতে পাকিস্তানের সুবিধায় হল । 


আরও পড়ুন: ১৯৯৬এ  বিমানের চাকা ধরে -৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৪০০০ মাইল পথ অতিক্রম ভারতীয় দুই ভাইয়ের।

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন