একটা কথা ফেসবুকে ভীষণ শোনা যাচ্ছে। পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে, মোদিকে গালাগাল করতে করতে, কখন যে রান্নার তেলের দাম 100 টাকা থেকে বেড়ে 200 টাকা হয়ে গেল আপনি ধরতে পারবেন না। ইঙ্গিতে খুব স্পষ্ট, পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আমরা মোদিকে দায়ি করছি। আর রান্নার তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আমরা দায়ী করছি মমতাকে। সে দায়ি যেই হোক না কেন ভুক্তভোগী কিন্তু, আমার আপনার মতো সেই মধ্যবিত্তরা। একদিকে কোভিড পরিস্থিতি তার ওপরে লকডাউন। আমাদের কারো কারো রোজগার যেমন কমছে কারো কারো তো শুন্যে নেমে চলে এসেছে। তার ওপরে যে রান্না তেলের দাম গত বছর 100 টাকা 110 টাকা পার লিটার ছিল। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 180 থেকে 200 টাকা। অথয়েব মধ্যবিত্ত কিন্তু চিন্তায় ঘুম উড়ে গেছে এবং তারা ভাবছে যে কি করবে অসহায় অবস্থার মধ্য দিয়ে তারা পাস করছে। হঠাৎ করে তেলের দামটা কেন বৃদ্ধি হল? মদি দায়ী না মমতা দায়ী না অন্য কোন পরিস্থিতি দায়ী?
আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সেই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবো। রান্না তেলের দাম ঠিক কতটা বেড়েছে? কেন বেড়েছে? দায়ী কে? এবং তিন নম্বর পয়েন্ট সরকার এখন কি করছে? এবং কি করা উচিত ? রান্নার তেল বলতে আমরা মোটামুটি সাত রকমের তেল বুঝি সরিষার তেল, সয়াবিন অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, পাম অয়েল, বনস্পতি অয়েল, চিনে বাদাম অয়েল, কোকোনাট অয়েল যেটা খুব একটা প্রচলিত না। এখন এই 7টি ভোজ্য তেলের মধ্যে মূলত চারটে তেল বেশি ব্যবহার হয় ইন্ডিয়াতে মাস্টার্ড অয়েল বা সরিষার তেল, সয়াবিন অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল এবং পাম অয়েল।
এই পাম অয়েল অনেকে চেনেন না এটি অত্যন্ত কোনষম দামি তেল, অধিকাংশ চকলেট, সাবান ,শেম্পু , টথপেস্ট সমস্ত কিছুতেই কিন্তু পাম অয়েলের ব্যবহার করা হয়। যদি পাম অয়েলের দাম কোন কারণে বাড়ে। তাহলে যে প্রোডাক্ট গুলোর নাম বললাম সেই প্রোডাক্টগুলোর কিন্তু দাম বাড়ছে, খেয়াল করতে পেরেছ নিশ্চয়ই। এবার যে চারটে রকমের ভোজ্য তেলের নাম বললাম তাদের দামটা কত বেড়েছে। দামটা যদি হিসেব করা যায়। যে 100- 110 টাকা তেল মোটামুটি 180-200 টাকা হয়ে গেছে। চারটা তেলের দাম কতটা বেড়েছে ঘরে যদি আমরা হিসেব করি তাদের 20 থেকে 60 শতাংশ পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এই কয়েক মাসের মধ্যে.
এখন কেন দাম বাড়ছে এটা আলোচনা করা শুরু করার আগেই আমাদের জানতে হবে যে আমাদের দেশে যে পরিমাণ তেল লাগে তার কতটা আমরা উৎপাদন করতে পারি আর কতটা আমাদের আমদানি করতে হয়। যদি সরষের তেলের কথা বল হয়, তাহলে মোটামুটি সর্ষে তালেন বিজ আমাদের দেশে অনেক পরিমাণে উৎপাদন করা হয়, খুব একটা আমদানি করতে হয় না। কিন্তু যদি পাম অয়েলের কথা বলেন। তাহলে পাম অয়েলের যে পরিমাণ তেল আমরা কনজামশন করি ব্যবহার করে আমাদের দেশে তার 62% কিন্তু আমাদের আমদানি করতে হয়। শোয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে আমাদের যা দরকার হয় তার 21 শতাংশ আমদানি করতে হয়। সূর্যমুখী তেলের কথা যদি বলেন আমরা যেটুকু উৎপাদন করি তার থেকে 16শতাংশ আমাদেরকে আমদানি করতে হয়। তার মানে গড়ে 22-50 শতাংশের তেল আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি না করতে পারলে আমাদের চাহিদাটাই পূরণ হবে না।অথয়েব বুঝতে পারছেন এখান থেকেই আমাদের সমস্যা তৈরি হচ্ছে ।কেন সমস্যা তৈরী হচ্ছে । একটা একটা করে আলোচনা করা যাক। প্রথমে আসি পাম অয়েলের কথায়।
পাম অয়েল বেশির ভাগটি উংপাদন হয় মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া মতো প্রতিবেশে দেশে। কিন্তু গতবার, কাশ্মীর ইস্যুতে মালয়েশিয়া সরাসরি পাকিস্তানকে সাপোর্ট করে দেয়ায়, আমরা কিন্তু মালয়েশিয়াকে বয়কট করেছিলাম আমরা মালয়েশিয়া থেকে তেল আমদানিতে একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। যদিও এখন আমরা মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কটা কামা স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে গেছি। আমরা আমার পামওয়েল সেখান থেকে আমদানি করছি। কিন্তু এই পাম অয়েল টা যেখান থেকে মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করতে হয় চীন আমাদের প্রতিবেশী দেশ শত্রুদেশ। সেই চীন কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে তেলের আমদানি পরিমাণটা অনেক পরিমাণে বাড়িয়ে নিয়েছে এই সুযোগে।
চীন যেখানে 100 লিটার আমদানি করতো, এখন সেখানে 130 লিটার, অর্থাৎ 30% কনজামশন 30 শতাংশ আমদানি মালয়েশিয়া থেকে পামঅয়েলের তাদের নিজেদের বাড়িয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ চিন যদি এত পরিমান বাড়িয়ে দেয় কোথাও-না-কোথাও তেলের ঘাটতি হবে। এখন চিন কেন এই এক্সট্রা 30 পার্সেন্ট তেল মালয়েশিয়া থেকে আমদানি বাড়িয়ে দিল তার পেছনে কিছু কারণ থাকবে নিশ্চয়ই! সিচুয়েশন থেকে খুব চট-জলদি চিন বেরিয়ে এসেছে। পৃথিবীতে একমাত্র চীনের ইকোনমিক কিন্তু বাড়ছে, বড় হচ্ছে। আর এ ইকোনমি যদি বড় হয় তাহলে সেখানে যেকোনো প্রডাক্টের প্রোয়জন বাড়ে খুব স্বাভাবিকভাবে। আর দু'নম্বর কারণ হচ্ছে পৃথিবীতে চীন এবং আমেরিকায় দুটো দেশ। এই পাম অয়েল এবং এডিবেল অয়েল টাকেৎ ্কাজে লাগিয়ে জৈব ডিজেল তৈরি করছে যার সাহায্যে বাস পর্যন্ত চালানো হচ্ছে। পেট্রোলের দাম থেকে একটু কম পড়ছে। অথয়েব তারা অনেক বেশি বেশি করে পাম অয়েলকে নিজেদের দেশে আমরা এটা বাড়িয়ে দিয়েছে। অতএব এই হাইপটাই কিন্তু মূলত এই কারণে কিন্তু হচ্ছে পাম অয়েলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে গেছে।
সয়াবিন তেলের কথা বললে, ম্যাক্সিমাম প্রোডাকশন হয় ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনায়।আর আর্জেন্টিনা থেকে বেশি আমদানি করে আমাদের দেশে। কিন্তু সে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনায় খরা হওয়ার করনেউৎপাদন কমে যায় । খরার প্রকোপটা গত 10 বছরে এমনটা হয়নি। সেখানে প্রোডাকশন এক রকম ভাবে যেমন কম, তার ওপরের লকডাউন এর জন্য তো ব্রাজিলের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছিলো। লকডাউন জনিত কারণে কলকারখানা বন্ধ হয়ে রয়েছে। অতএব যেটুকু প্রোডাকশন হচ্ছে সেইটুকু প্রোডাকশন করার কারখানা বন্ধ থাকার জন্য বাকি প্রোডাকশন টাও কিন্তু করা যাচ্ছে না সেখানেও দামটা বেড়ে যাচ্ছে। সানফ্লাওয়ার তেলের মূলত উৎপাদন করে রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে আমদানি করি।
কভিডের কারনে এবং আবহাওয়ার এর কারণে এ বছর 5 মিলিয়ন টন পর্যন্ত উৎপাদন কম হয়েছে সানফ্লাওয়ার বিজের। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই যে সমস্ত জায়গা থেকে আমদানি করা হয় । তাদের দেশেই প্রোডাকশন কম হওয়ার জন্য বা এই কারণে আমাদের দেশেও কিন্তু তেলের দামটা খুব স্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে.
এখন সরকার তো এটা নিয়ে চুপ করে থাকলে চলবে না। সরকার কি করতে পারে? সরকার যখন আমদানি হিসাবে আমাদের দেশে আসে। তখন 40 থেকে 60 শতাংশ আমদানি শুল্ক আইনে ট্যাক্স নেয় সরকার।যেটি কেন্দ্র সরকারের কোষাগারে জমা পড়ে। এখানে কেন্দ্র ইম্পোর্ট খানিকটা কমিয়ে দিলে নিতে পারে। তাহলে আমাদের তেলের দাম মার্কেটে কমে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক কমে যাবে। কিন্তু কোভিড সিচুয়েশনে এই ইমপোর্ট ডিউটিটা কেন্দ্র একেবারেই কমিয়ে দিতে পারবে, এতটা আশা করা যাচ্ছে না এমনিতেই দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। কেন্দ্র সরকার হাতেও কিন্তু টাকার পরিমাণটা কমছে তা সত্ত্বেও গত নভেম্বরে 10 পার্সেন্ট মত কেন্দ্র সরকার ইম্পোর্ট ডিউটি কমিয়ে দিয়েছিল। তার ফলে কিছুটা দাম কন্ট্রোলে এসেছিল কিন্তু করোনার সেকেন্ড ঢেউ আসার জন্য যে দেশগুলো থেকে অয়েল বীজ ইমপোর্ট হয়। সেই দেশগুলোতে প্রোডাকশন আবার নেমে গেছে।আর প্রোডাক্সন নেমে গেছে যার ফলে দাম বেড়েছে । কি হয় প্রাইস টা বেড়ে গেছে গত নভেম্বর মাসের 10 পার্সেন্ট ডিউটি কম হমেছিল তার ফলটা কিন্তু আমরা এ বছর ভোগ করতে পারছিনা।
আরও পড়ুন:মানিকে মাগে হিথে গানের গায়িকার অজানা গল্প !
এইরকম অবস্থাতে সরকার কি খরতে পারে । কেন্দ্র সরকার যে আয়েল বীজ মজুদ করে রাখে কখনো কখনো ইমারজেন্সি পরিস্থিতির কথা মথায় রেখে। এর জন্য সেই মজুদ করা বীজ এই এমার্জেন্সি অবস্থাতে বাজারে ছেড়ে দেবে বলে ঠিক করেছে এ মাসেই সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যে মজুদকৃত বীজ বাজারে আসে তোবে বাজারে একটুখানি কমবে আশা করা যেতে পারে। এতেও যদি না হয় তাহলে কেন্দ্রকে 30 40 শতাংশ ইমপোর্ট ডিউটি সেটা কিছু টা কমাত হতে পারে। না হলে উপায় নেই। মানুষ বাঁচবে না মানুষকেতো আগে বাঁচাতে হবে। আর শেষে গিয়ে রাজ্যের হাতে খানিকটা ক্ষমতা রয়েছে এই তেলের দামটা নিয়ন্ত্রণ করবার জন্য। যে খুচরা মার্কেটে বিক্রি হয় সেটার উপর যে GST যেটা কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকার উভয়েই নেয়,সেই GST টা যদি একটু কমিয়ে দেয়।
যদি তাও না কমানো যায় তাহলেও কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকারকে দরকারের রেশনে যদি আমরা ভোজ্যতেল বা রান্না তেলটা আমরা দিতে পারি তাহলে অন্তত কোভিড সিচুয়েশনে পড়ে মানুষ একটু বাঁচবে। এই হল সরকার কি করতে পারে। তাই আসলে খুব বেশি কেউই দায়ী নয়। প্রকৃতি বা সিচুয়েশন দায়ী। কেন্দ্র সরকার খানিকটা কমাতে পারে রাজ্য সরকার ও কমানোর ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা নিতে পারে। ভাইছু প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন।
আরও পড়ুন:ঋতাভরী চক্রবর্তী এই নামটি আজ গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিতে ঝড় তোলে, তিনি বরাবরই ছিলেন খুব প্রতিভাশালী


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন