ইস! জিনিসটা কেনা না পুরো ভুল হয়ে গেল, অনেক বেশি দাম নিয়ে নিল। আমারও যে হঠাৎ করে কি হলো, হ্যা বলেদিলাম।

 

অনেক সময় কি হয়, কারো কথায় কেমন যেন একটা হিপনোটাইজ হয়ে যাওয়ার মতো হয়ে আমরা হ্যাঁ বলে দিই। আর পরে গিয়ে আফসোস করে মরি। কিন্তু আজকের এই লেখাটা পড়ার পর। আপনাকে আর কখনো সেই আফসোসটা করতে হবে না। কারণ আজ আমি সমস্ত হিপনোটাইজ করার টিপস গুলোই আপনার সাথে শেয়ার করতে চলেছি। যাতে করে কেউ যদি অসৎভাবে সেই ট্রিক্সগুলো আপনার উপর এপ্লাই করার চেষ্টা করে তাহলে যেন আপনি সতর্ক হয়ে যেতে পারেন। অথবা আপনি যেন চাইলে কোনো ভালো উদ্দেশ্যের জন্য সেই হিপনোটাইজ করার টিপস গুলো অন্য কারোর উপর এপ্লাই করে তাকে দিয়ে হ্যাঁ বলিয়ে নিতে পারেন। এই লেখাতে আমি রিয়েল লাইফ এক্সাম্পলস সহ মোট তিনটে ট্রিকস শেয়ার করছি। যার মধ্যে তিন নাম্বার ট্রিকটা কিন্তু সবথেকে কার্যকরী। তাই যদি আপনি আপনার কাউকে দিয়ে হ্যাঁ বলানোর কৌশল টিকে নেক্সট লেভেল এ নিয়ে যেতে চান তাহলে অবশ্যই কিন্তু লেখাটা আপনাকে একদম শেষ অবধি পড়তে হবে। 


কয়েক মাস আগে একদিন একটা শপিং মলে ঢোকার গেটের মুখে হঠাৎ করে দুজন মহিলা এগিয়ে এসে আমার গার্লফ্রেন্ডের হাতে একটা গোলাপ ফুল তুলে দিয়ে বললেন আজ নির্ভায়া হত্যাকাণ্ডের আসামিরা শাস্তি পেয়েছে। তাই আমাদের মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে সমস্ত মেয়েদের ফ্রিতে একটা করে গোলাপ ফুল দিচ্ছি। ফুলটা নিয়ে থ্যাংক ইউ বলে আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছি এমন সময় সে দুজন মহিলাদের মধ্যে একজন বললেন আর একটা রিকোয়েস্ট আছে যাতে করে মেয়েদের উপর যারা এই ধরনের অত্যাচার গুলো করছে তাদের যোগ্য শাস্তি হয় সেটা নিশ্চিত করতে পারার জন্য আমরা মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে ডোনেশান কালেক্ট করছি। তাই যদি আপনি কিছু ডোনেট করতেন। আর সাথে সাথে আমার গার্লফ্রেন্ড তার পার্স থেকে  50 টাকা বার করে সে দুজনের হাতে দিয়ে দিল।

 

এবার কথাটা হচ্ছে সেই মহিলা দুজন মুখে আমাদের যা বললেন। সত্যি যদি তারা সেই জন্য ডোনেশন কালেক্ট করছেন তাহলে তো অবশ্যই খুবই ভালো কথা। কিন্তু সেটা সত্যি নাও হতে পারে। কারণ সেই মহিলা সমিতির আদৌ কোন অস্তিত্ব আছে কিনা আমাদের দুজনের মধ্যে কেউই জানতাম না। সেটার কোন প্রমাণ আমরা দেখতেও চাইনি ঠিক যেন হিপনোটাইজ হয়ে যাওয়ার মতো হয়ে সম্পূর্ণ অচেনা দুজন মহিলা কে আমরা টাকাটা ডোনেট করে দিলাম। এখানেই মহিলা দুজন আমাদের হিপনোটাইজ করার জন্য যে যে অস্ত্রগুলো ব্যবহার করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম একটা অস্ত্র ছিল ওই গোলাপ ফুলটা। যেটা তারা শুরুতেই ফ্রিতে আমার গার্লফ্রেন্ডের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আর এই ট্রিকটিকে বলা হয় RECIPROCITY. হঠাৎ যখন কেউ আমাদের কোনো ফেভার করে তখন আমরা ভিতর থেকে একটা কৃতজ্ঞ উপলব্ধি করতে শুরু করি। সেই ফেভারটা তাকে রিটার্ন করতে পারার জন্য। কেউ যদি আপনাকে তার জন্মদিনের পার্টিতে ইনভাইট করে তাহলে যদিও তাকে হয়তো আপনার পছন্দ না কিন্তু তবু আপনার জন্মদিনের পার্টিতে আপনি তাকে ইনভাইট করে সেই ফেভারটা রিটার্ন করতে চাইবেন।

 আরও পড়ুন: চালাকি করে Credit Card use করতে শিখুন, DEBT TRAP থেকে কি করে বেরোবেন !


আর ঠিক এই কারণেই ফুড স্টল গুলো কাস্টমারদের আগে সেম্পেল টেস্ট করায়। আর এই অস্ত্রটা যে কতটা এফেক্টিভ হতে পারে সেটা আপনি আমাদের বানানোর Wow Momo সফলতার কথা জেনেই থাকবেন। গোলাপ ফুলটার পর  পরবর্তী হিপ্রোটাইস করার যে অস্ত্র টা সেই মহিলা দুজন আমাদের উপর অ্যাপ্লাই করেছিলেন সেটা হল LIKING। মেয়েদের উপর যারা অত্যাচার করছে তাদের যাতে যোগ্য শাস্তি হয় এটা আমরা সবাই চাই এবং এই মহান উদ্দেশ্য টাকে আমরা সবাই মন থেকে সাপোর্ট করি। ফলে স্বাভাবিক যারা আমাদের চিন্তা ভাবনার সঙ্গে একই রকম চিন্তাভাবনা রাখেন এবং মহান কোন উদ্দেশ্যের জন্য কাজ করছেন। যেটাকে আমরা মন থেকে সাপোর্ট করি তাদেরকে আমরা স্বাভাবিক পছন্দ করবোই। আর পছন্দের মানুষটিকে আমরা চট করে না বলতে পারিনা।

 


আমার এক বন্ধুর সাথে একবার কি হয়েছিল ওর ফ্যামিলির সাথে ডমিনোজ গেছিল পিৎজা খেতে। আর ডমিউনজের  কাউন্টারে সেদিন খুব সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে অর্ডার নিচ্ছিল। তো টেবিলে বসে ফ্যামিলি সবার সাথে কথা বলে অর্ডার টা ঠিক করে নিয়ে কাউন্টারে গেছে অর্ডার দিতে। এবারও যা অর্ডার দেবে ঠিক করেছিল তাতে 500 টাকার মধ্যে হয়ে যেত কিন্তু অর্ডার দেওয়ার সময় সেই সুন্দর দেখতে মেয়েটা যখন হাসিমুখে বলল স্যার চিজবাজ এবং  চিকেন কিমা টপকিং এড করে দিই তাহলে কিন্তু আপনার পির্জাটা আরো টেস্টি হবে। ও বলল আচ্ছা তাহলে দিয়ে দিন। আর স্যার কল্ড ড্রিক্সটা এড করবো তো? ও বললো হ্যা একটা এড করে দিন। এরকম ভাবে দেখা গেল 500 টাকার বদলে ওর ফাইনাল হয়ে দাঁড়ালো 850 টাকা। ঠিক এই কারণেই যে কোন সেলিং এর ক্ষেত্রে যেমন ধরুন বিলিং কাউন্টারে বা গাড়ি শোরুমে কোন মোবাইল স্টোরে রিসেপশনে ফিজিক্যালি অ্যাট্রাক্টিভ মেয়ে বা ছেলেদেরকে কাজে নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে বেশি প্রেফারেন্স দেওয়া হয়। যাতে হিপনোটাইজ করার জন্য লাইকিং এর যে অস্তটা সেটা মুখে কিছু বলার আগেই অটোমেটিক্যালি এপ্লাই হয়ে যায়। ইনফ্লেশন নাম্বার টু Likimg। গোলাপ ফুল, ওম্যান জাস্টিস এই দুটি এপ্লাই করার পর থার্ড যে হিপনোটাইজ করার অস্ত্রটা সেই মহিলা দুজন আমাদের উপর অ্যাপ্লাই করেছিলেন সেটা হল AUTHORITY। তারা যে মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে ডোনেশান কালেক্ট করছে এই কথাটা উল্লেখ করার মধ্যে দিয়ে তারা অথরিটি অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন। কারণ যে কেউ চাইলেই টাকা কালেক্ট করে এই সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে যেতে হয়ত পারবে না। কিন্তু কোন সমিতি বা সংস্থার পক্ষে এটা করা সম্ভব। আর তাই মহিলা সমিতি শব্দটা উল্লেখ করার মধ্যে দিয়ে তারা অথরিটির অস্ত্রটাকে কাজে লাগিয়ে নিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে কুড়ি বছর বয়সী একজন বেকার যুবতী দিল্লিতে ফেক পুলিশ ইউনিফর্ম পরে যারা মাক্স পরে নেই সোশ্যাল ডিসটেন্স মেইনটেইন করছে না তাদের নামে ফেক কোভিড চালান কেটে সাধারণ লোকদের কাছ থেকে ফাইন কালেক্ট করে টাকা রোজগার করছিল। যদি ও‌ পরে সন্দেহ হওয়ায় একজন পুলিশ কনস্টেবল সিভিল ড্রেসে ইচ্ছে না করে মাক্স না পরে  তার সামনে গিয়ে তার ফাঁদে পা দিয়ে তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এরকম প্রচুর ঘটনা প্রতিদিন আমাদের আশেপাশে ঘটে চলে যেখানে হিপনোটাইজ করার জন্য অথরিটি অস্ত্রটাকে অসৎ ভাবে ব্যবহার করা হয়। যেমন ধরুন যদি আপনি একটু লক্ষ্য করে দেখেন টুথপেস্ট থেকে শুরু করে যেকোনো হেলথ ডিক্স বা হেলথ রেলেটেড যত প্রোডাক্ট এর অ্যাডভার্টাইজমেন্ট টিভিতে দেখায় তার মধ্যে ম্যাক্সিমাম বিজ্ঞাপনে একজন‌ অভিনেতা। যে কিন্তু আসলে ডক্টর না সে একজন ডাক্তারের পোশাক পরে ডক্টর সেজে সেই এডভেটাইজে‌ বলে জে সেই প্রোডাক্টটা নাকি সমস্ত ডক্টররা রিকমেন্ট করেন। এরা ওপেনলি অথরিটি অস্ত্রটা অসত ভাবে উপযোগ করেন। কিন্তু এনাদের কোন শাস্তি হয় না। উল্টে আমার মায়ের মতো সহজ সরল মানুষরা এই অথরিটি অস্ত্রটা শিকার হন। কেন বলছি একদিন আমার মা আমাকে বলছে যে এই xyz টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজবি। আমি বললাম কেন? ওটা দিয়ে কেন মারতে হবে? মা বলল কেন দেখিসনা টিভিতে এড দেখায় ডাক্তারদের সুপারিশ করা এটাই নম্বর ওয়ান টুথপেস্ট।


তো এবার আমি যদি এই পুরো লেখাটাকে কে সাপোর্ট করি তো কাউকে হিপনোটাইজ করে তাকে দিয়ে হ্যাঁ বলানোর জন্য এই তিনটে অস্ত্র কাজে লাগানো যায়। নাম্বার ওয়ান Reciprocity। অর্থাং আগে অপরজন না চাইতেই তাকে সাহায্য করে এবার তার কাছ থেকে রিটার্ন ফেভার হিসেবে তাকে দিয়ে নিজের কাজটা আদায় করে নেওয়া। নাম্বার টু Liking শারীরিক চটক, চিন্তাভাবনা সমতা প্রদর্শন করে সামনের জনের কাছ থেকে লাইকিংঅ আদায় করে নিয়ে তারপর তাকে দিয়ে নিজের কাজটা আদায় করে নেওয়া। নম্বর থ্রি কোন ইউনিফর্ম, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা এই জাতীয় কোন  বিশ্বাসযোগ্যতা প্রকাশ্য এনে সামনের জনের চোখে নিজের অথরিটি প্রতিষ্ঠিত করার পর তাকে দিয়ে নিজের কাজটা আদায় করে নেওয়া। আপনিও কি কখনো এই ধরনের কোন অস্ত্রের শিকার হয়েছেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে গল্পটা আমাদের সবার সঙ্গে শেয়ার করুন যাতে আমরা সবাই সাবধান হতে পারি। 

 আরও পড়ুন: Mutual Fund কি? আমাদের কী Share Market Investment করা উচিত?

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন