যদি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশী বা আপনার আত্মীয়দের শেয়ার মার্কেটের টাকা ইনভেস্ট করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। তবে তাদের বেশিরভাগই আপনাকে নিরুৎসাহিত করবেন এবং বলবেন যে ওটা জুয়া খেলার জন্য একটা রুপ। অনেকে এখনো বিশ্বাস করেন যে স্টক প্রাইস ওঠানামা করার পিছনে কোন যুক্তি নেই। যারা শেয়ার মার্কেট থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন তারা কেবল ভাগ্যবান। অন্যদিকে মজাদার ঘটনাটি হল বিশ্বের প্রায় সমস্ত কোটিপতিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে তাদের বিপুল সম্পত্তি অর্জন করেছেন। প্রত্যক্ষভাবে বলতে নিজে সরাসরি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে এবং পরোক্ষভাবে বলতে নিজের কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করে। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেট সরাসরি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে তার ভাগ্য তৈরি করেছিলেন। যেখানে বিল গেটস তার কম্পানি মাইক্রোসফটকে শেয়ার মার্কেটে তালিকাভুক্ত করে তার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। এমনকি ভারতেও আপনি রাকেশ ঝুনঝুন ওয়ালার মতো মতো অনেক কোটি প্রতি বিনিয়োগকারীদের দেখতে পাবেন।
যারা তাদের সম্পূর্ণ সম্পদ সরাসরি শেয়ার মার্কেটে টাকা ইনভেস্ট করে তৈরি করেছেন। এখন প্রশ্নটা হল যে যদি শেয়ার বাজারে টাকা বিনিয়োগ করার জুয়াখেলা হয়, তবেই কোটিপতিরা কিভাবে শেয়ারবাজার থেকে তাদের এই বিপুল সম্পত্তি অর্জন করেছেন। ভাগ্য একবার দুবার, তিন বার সাত দিতে পারে কিন্তু এই কোটিপতিরা কয়েক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে শেয়ারবাজার থেকে উপার্জন করে চলেছেন। একজন জুয়াড়ি ধারাবাহিকভাবে কখনো কয়েক কোটি টাকা উপার্জন করতে পারে না। সুতরাং নিশ্চয়ই অন্য কিছু ব্যাপার আছে। অন্যদিকে আবার ছোট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে 80% তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করা টাকা শেয়ারবাজারে হারাচ্ছেন। তাহলে সিক্রেট টা কি যেটা এই কোটিপতি বিনিয়োগকারীরা জানেন কিন্তু ছোট বিনিয়োগকারীরা তা জানেন না। প্রসেনজিৎ পালের লেখা How to avoid loss and earn consistently in the stock market বইটি থেকে সেই সিক্রেটাই আজ আমি আপনার সাথে শেয়ার করবো।
বইয়ের একেবারে শুরুতে লেখক শেয়ার বাজারে 80% ছোট বিনিয়োগকারীদের করা ভুলগুলো একটা গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। গল্পটা হলো কয়েক মাস আগে রোহিতের শেয়ার বাজার সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না তবে রোহিত বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল কারণ তার বন্ধু মহিত একজন স্টকব্রকার ছিল যে নিয়মিত শেয়ার মার্কেটে ট্রেড করতো। প্রায়ি মহিত রোহিত কে বলতো আজকে একদিনে মার্কেট থেকে 10 হাজার টাকা রোজগার করলাম। তাই রোহিত আগ্রহী হয়ে মহিতের কাছে গেল। মোহিত আর দেরি না করে রোহিতের জন্য একটা ট্রেডিং এবং একটা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলে দিল। এরপর রোহিত মহিতের হাতে এক লক্ষ টাকা তুলে দিল। তার হয়ে শেয়ার মার্কেটে ট্রেড করার জন্য শেয়ার মার্কেটে কিভাবে কেনা বেচা হয় সে সম্পর্কে রোহিতের খুব বেশি জ্ঞান ছিল না বলে এটাই তখন ওর কাছে বেস্ট অপশন ছিল। প্রথমদিকে সবকিছু ভালই চলছিলো প্রায় প্রতিদিন তার ব্রকার কাম বন্ধু মহিত তাকে কিছু সংবাদের উপর নির্ভর করে কিছু টিপস দিতো।
সেই স্টকটিতে ট্রেড করার জন্য তার কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে নিত। তার পরের দিনের শেষে রহিত রাজ কত টাকা আয় হলো সেই বিষয়ে ফোন কল পেত। কিছু প্রাথমিক লাভের পর এ ট্রেড করার জন্য তার বন্ধু কাম ব্রকার মহিতের হাতে আরো 50 হাজার টাকা তুলে দিলো। শুরুটা ভিষন দুর্দান্ত ছিল কেননা কিছু না জেনেই রোহিত ইতিমধ্যে টোয়েন্টি পার্সেন্ট লাভ অর্জন করে ফেলেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে পরিস্থিতি বদলে গেল 15-20 দিনের বেশি হয়ে গেল তার কাছে আর কোন ফোন কল এলো না। তা ব্রোকার বন্ধু মহিত আর তাকে ফোন করছে না। চিন্তায় পড়ে রোহিত যখন নিজে থেকে তার বন্ধু মোহিত কে ফোন করে খবর নিল তখন সে জানতে পারল যে তার মোট টাকার অর্ধেক টাকা ইতিমধ্যে শেয়ার মার্কেটের লস হয়ে গেছে। খবরটা শুনে রোহিত হতবাক হয়ে গেল যে প্রথমবার শেয়ার মার্কেটের টাকা বিনিয়োগ করছে তার কাছে ফিফটি পার্সেন্ট লস হওয়া মানেই অনেক বড় ক্ষতি। রহিত এটাও জানতে পারল যে করনা মহামারির কারনে শেয়ারবাজারে ধস নামায় তাকে এত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং এই পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি আর বদলাবেনা।
গভীর হতাশায় রোহিত তার ব্রকার কাম বন্ধুকে তার পুর শেয়ার হোল্ডিং বিক্রি করার নির্দেশ দিয়ে দিল ট্রেডিং একাউন্ট বন্ধ করার সময় রোহিত বুঝতে পারল যে ব্রক্রেজ ফী অন্যান্য চার্জ সহ তার সব মিলিয়ে 55% লস হয়ে গেছে। বলুনতো রোহিত ঠিক কোথায় ভুল করেছিল? শেয়ারবাজারে আপনার ব্রোকার কাম বন্ধুকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা আপনার মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। আপনি কি এটা লক্ষ্য করেছেন যে আপনার লাভ হোক বা ক্ষতি আপনার ব্রোকার বন্ধুটি কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই প্রফিটে থাকে। শেয়ারবাজারে করা প্রতিটা ট্রানজাকশন এর জন্য আপনাকে আপনার ব্লগার বন্ধুকে ব্লক্রেজ ফ্রি দিতে হয়। তাতে সেটা কেনা হোক কিংবা বিক্রি। ফলে আপনার ব্রোকার কেবলমাত্র যদি আপনি কেনাবেচা করেন তবেই একমাত্র আয় করতে পারে।
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে ব্রোকার আপনাকে ঘনঘন কেনাবেচা করতে উৎসাহিত করবে। আমরা সবাই আমাদেরকে সর্বাধিক করতে চাই আপনি যেমন শেয়ারবাজার থেকে যতটা সম্ভব সর্বাধিক আয় করতে চান তেমনি আপনারও ব্রকারো তার আয় সর্বাধিক করতে চায়। ফলে বেশীরভাগ ব্রোকার ঘনঘন কেনাবেচা করার জন্য উৎসাহ দেয়। ঠিক এখানে সমস্যা দেখা দেয়। শেয়ারবাজারে আপনি যত বেশি কেনাবেচা করবেন আপনার ক্ষতির সম্ভাবনা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে এবং একইসাথে আপনার ব্রোকারের আয় বাড়তে থাকবে। ঠিক এই কারণে বড় বড় ব্রোকারেজ হাউসগুলো এসএমএস বা ইমেইলের মাধ্যমে কিছু স্টক টিপস শেয়ার করে বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি বেশি করে কেনাবেচা করার জন্য উৎসাহ দেয়। মহিতের মতো সাব ব্রকাররা ন্যূনতম ট্রেড ভলিউম পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তারা তাদের লাইসেন্স হারাতে পারে। ফলে এই পুরো প্রক্রিয়াটি তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় আমার এবং আপনার মত ছোট বিনিয়োগকারীদের। আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যদি আপনি ঘন ঘন কেনাবেচা করেন তবে আপনার ব্রকার ব্রক্রেজ ফি কমিয়ে দিতেও রাজি থাকে। এটা আপনি যাতে ঘনঘন কেনাবেচা করেন সেটা নিশ্চিত করার জন্য অন্য একটা ফাঁদ। দুঃখের বিষয় 80% ছোট বিনিয়োগকারী এই ফাঁদে পড়েন এবং তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করা টাকা শেয়ারবাজারে হারিয়ে ফেলেন। বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পর তারা অবশেষে শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং তারপরে সারা জীবন তারা শেয়ারবাজার থেকে দূরে থাকেন এবং অন্য কেউ শেয়ার বাজার জুয়া খেলার অন্য একটা রূপ ছাড়া আর কিছুই না বলে সেটা থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দেন। এবার আপনি হয়তো ভাবছেন তা হলে এর সমাধান কি? কোটিপতি বিনিয়োগকারীরা কি সিগারেট উপায় অবলম্বন করেন। সমাধান টা এতটাই সহজ যে লোকেরা সেটা বিশ্বাস করতে চায় না সমাধানটা হল Intraday short-term Trading, Future Option এগুলো সব ভুলে যান মনে রাখবেন রাতারাতি বড়লোক হওয়ার কোনো শর্টকাট নেই।
আরও পড়ুন:পাইথন প্রোগ্রামিং কি ? আর আপনি পাইথন প্রোগ্রামিং দিয়ে কি করতে পারবেন? আর কেন পাইথন এতটা জনপ্রিয়?
প্রতিটা রাতারাতি বড়লোক হওয়ার কৌশল রাতারাতি পথে বসার কৌশলমাত্র। লেখকের কথা অনুযায়ী সমাধানটা হল উচ্চমানের স্টকগুলিতে বিনিয়োগ করা এবং সঠিক সময়ের জন্য সেগুলো ধরে রাখা শেয়ারবাজার থেকে সম্পদ তৈরি করার একমাত্র উপায়। এবার আপনার মনে হয়ত এই প্রশ্নগুলো আসতে পারে নাম্বার ওয়ান উচ্চমানের স্টক বলতে কী বোঝায় এবং সেগুলি কিভাবে নির্বাচন করবেন? সঠিক সময়ের জন্য ধরে রাখা বলতে কী বোঝায়? কখন কোন স্টক কেনা উচিত এবং কখন বিক্রি করা উচিত? ক্ষতি এড়াতে এবং লাভের পরিমাণ সর্বাধিক করার জন্য কিভাবে স্টক পোর্টফোলিও তৈরি করা উচিত? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এই বইটাতে খুবই সহজ সরল ভাষায় বলা রয়েছে সুতরাং আপনি যদি আমার মত রোহিতের মত কেউ হন যিনি শেয়ারবাজার থেকে টাকা রোজগার করতে আগ্রহী তবে আমি প্রসেনজিং পালের লেখা How to avoid loss and earn consistently in the stock market এই বইটা পড়ার জন্য আপনাকে রিকমেন্ট কোরবো.
এই বইটাতে একদম সহজ ভাষায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বলা রয়েছে যা যে কেউ চাইলেই শিখতে পারে। 1. কিভাবে একটা কোম্পানির মাত্র দুটো জিনিস Return on Equity এবং Debt to Equity ratio এই দুটো জিনিস দেখেই আপনি সেই কোম্পানির স্টকটি কতটা ভালো বা মন্দ চট করে বিচার করে ফেলতে পারবেন। 2. কোন কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট কতটা ভালো বা মন্দ তা সেই কোম্পানিতে না গিয়েই এই কিভাবে ঘরে বসেই আপনি বিচার করতে পারবেন। 3. লাভের পরিমাণ সর্বাধিক করার জন্য কখন কোন স্টক কেনাবেচা করবেন এবং কিভাবে আপনার স্টক পোর্টফোলিও তৈরি করবেন? 4. একটা 10 টাকা স্টক কিভাবে 1000 টাকার একটা স্টক এর তুলনায় ব্যয়বহুল হতে পারে এবং 5. বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীরা যে সাধারণ ভুলগুলি করেন সেগুলো কে কি ভাবে এড়িয়ে চলবেন। ঠিক এই কারণেই বইটি গত পাঁচ বছর ধরে অ্যামাজন ইন্ডিয়া বেস্ট সেলার লিস্ট নিজের জায়গা করে নিয়েছে এবং বেশিরভাগ মানুষ বইটি সহজ সরল ভাষায় ব্যাপারগুলোকে তুলে ধরার জন্য প্রশংসা করে ফাইভ স্টার রেটিং দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:ইন্সুরেন্স কি এবং কেন করবেন ? ইন্সুরেন্স করলে কি উপকার পাবেন ভবিষ্যতে?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন