স্যার আপনি কি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন? আমাদের ব্যাংকে তরফ থেকে লাইফটাইম ফ্রি ক্রেডিট কার্ড অফার করা হচ্ছে। আপনি কি একটা নেবেন?

 

যদি আপনার বয়স 18 বছর পেরিয়ে গিয়ে থাকে তবে সম্ভবত এর মধ্যে বেশ কয়েকবার আপনি এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। কিংবা হয়তো আপনি একটা ক্রেডিট কার্ড অলরেডি ব্যবহার করছেন। অথবা ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ডেভ ট্রাপে ফেঁসে রয়েছেন। যদি এই তিনটির মধ্যে যেকোনো একটাও আপনার সাথে মিলে যায়, তাহলে আজকের প্রতিবেদনটি শেষ  অবধি পড়ুন কারণ আজ এই লেখাটায় আমরা ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপারে A-Z  জানবো। আর তার সাথে জানব যে কিভাবে আপনি চালাকি করে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে এমন কিছু সুবিধা ভোগ করতে পারেন যেটা অন্য কোনভাবে সম্ভব না। তো চলুন এই জীবন সমস্যার সমাধান টাও জেনে নেওয়া যাক। 

সবার প্রথমে আমরা জেনে নিই ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ডের মধ্যে তফাতটা কি। ডেবিট কার্ডের সাথে আপনার ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট লিংক করা থাকে। ফলে আপনার সেভিংস একাউন্টে  যত টাকা রাখা আছে.

 

সেই টুকু টাকায় আপনি আপনার ডেবিট কার্ড দিয়ে খরচ করতে পারেন। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের সাথে সেভিংস একাউন্ট এর কোন লিংক থাকে না। এক্ষেত্রে আপনার ইনকাম এর উপর নির্ভর করে ব্যাংক আপনাকে একটা ক্রেডিট লিমিট দিয়ে দেয় আর সর্বোচ্চ সেই পরিমাণ টাকা আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ড  দিয়ে প্রতি মাসে খরচ করতে পারেন। তাতে আপনার ব্যাংকে সেই পরিমাণ টাকা থাক কি না থাক। অর্থাৎ এক কথায় বললে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যাংক আপনাকে আপনার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের পিছনে খরচ করার জন্য লোন বা ধার দেয়। এরপর প্রতি মাসের একটা নির্দিষ্ট তারিখে বিল জেনারেট হয় এবং একটা ডিউ ডেট দিয়ে দেওয়া হয়। যে ডিউটির মধ্যে আপনাকে সেই বেলটা পে করে ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকাটা ব্যাংকে ফেরত দিয়ে দিতে হয়। আর যদি আপনি সেই দিনের মধ্যে টাকাটা ফেরত না দিতে পারেন তাহলে থাক 35- 40 শতাংশ হারে আপনাকে ইন্টারেস্টে প্রদান করতে হয় এবং  লেট ফী পেমেন্ট অন্যান্য হিডেন চার্জ যুক্ত হতে থাকে। ফলে টাকা সময়মত ফেরত না দিতে পারলে মোটামুটি জীবন কয়লা করে ছেড়ে দেয়। যেটাকে বলা হয় DEBT TRAP।

 

আসুন এবার জেনে নেই ঠিক কী কী কারণে বেশিরভাগ মানুষ ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার পরে এই Debt Trap এ ফাঁসেন।

 

সমস্যা নাম্বার 1. সমস্যার বাইরেই গিয়ে ব্যয় করে ফেলা। যদি আপনার প্রতি মাসে রোজগার করার ক্ষমতা থাকে 10,000 টাকা ব্যাংক আপনাকে আপনার ক্রেডিট কার্ড ও ক্রেডিট লিমিট দেবে হয়তো এক লক্ষ টাকা। কারণ ব্যাংক চাই এটা যে আপনি আপনার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে খরচ করে ফেলুন আর তারপর ডিউ ডেটের আগে যেন আপনি টাকাটা ফেরত না দিতে পারেন। আর Dept trap এ ফেঁসে যান। কারণ তবেই তো ব্যাংকের প্রচুর পরিমাণ লাভ হবে। আর স্বাভাবিক টাকা হাতে পেয়ে অনেকেই লোভ সামলাতে না পেরে ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ব্যয় করে ফেলে। আর সুন্দর করে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ফাঁদের শিকার হয়। 


সমস্যা নাম্বার 2. সময় মতো বিল পে করতে ভুলে যাওয়া। ধরুন আপনি সেট করে রেখেছেন যে প্রতি মাসের 5 তারিখে আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিল জেনারেট হবে। তাহলে প্রতি মাসের 25 তারিখে হয়তো আপনার ডিউ ডেট পড়বে। এবার ধরুন আপনি জুন মাসের 6 তারিখে আপনার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে 10,000 হাজার টাকা পে করে একটা মোবাইল ফোন কিনলেন। তাহলে দশ হাজার টাকাটা আপনাকে ব্যাংকে ফেরত দিতে হবে জুলাই মাসের 25 তারিখের মধ্যে। কিন্তু আপনি যদি জুলাই মাসের 25 তারিখের মধ্যে টাকাটা ফেরত দিতে ভুলে যান তাহলে সাথে সাথে আপনাকে 35% Per Annum Interest প্রদান করতে হবে এবং মজার বিষয় যদি আপনি জুলাইয়ের 26 তারিখে ও টাকাটা ফেরত দিতে জান তাহলে আপনাকে একদিনের ইন্টারেস্ট না যেদিন আপনি জিনিসটা কিনেছেন অর্থাৎ জুনে 6 তারিখ থেকে শুরু করে জুলাই 26 তারিখ অব্দি 50 দিনের ইন্টারেস্ট পে করতে হবে। তাই বিল পে করতে যদি আপনার একদিন দেরী হয়ে যায় তাহলেই মোটামুটি গল্প শুরু হয়ে যায়। সমস্যা নাম্বার তিন ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ক্যাশ উইথড্রল করা। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আপনি যদি এটিএম থেকে ক্যাশ টাকা তোলেন তাহলে সেই মুহূর্ত থেকেই সেই টাকার উপর 35%- 40% Per Annum Interest প্রযোজ্য হতে শুরু হয়ে যায়। তাহলে কখনোই ক্যাশ টাকা উইথড্র করা উচিত না। কিন্তু তবুও অনেকে ডেবিট কার্ড সাথে নিয়ে বেরোতে ভুলে যাওয়ায় অনেক সময় জরুরীভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ড  দিয়ে টাকা উইথড্র করে Debt Trap  গিয়ে ফাঁসেন। 


এই সমস্যাগুলি কথাগুলো শুনে আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে, এত সমস্যা যখন তাহলে দরকার কি ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার। কিন্তু ব্যাপারটা হল ক্রেডিট কার্ডে আপনি যে  সুবিধাগুলো পাবেন সেগুলো আপনি আর অন্য কোন ভাবে পাবেন না। তো চলুন এবার জেনে নি সেই সুবিধা গুলো ঠিক কী কী 

সুবিধা নাম্বার 1. 50 দিন অব্দি ইন্টারেস্ট ফ্রি লোন পাওয়া যায়।  ধরুন আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কারোর বাই চান্স একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেল আর অপারেশন করতে এক লক্ষ টাকা আজি জমা দিতে হবে। এদিকে মাসের শেষ আপনার হাতে এখনো অত টাকাও নেই এবার সেই মুহূর্তে কার কাছ থেকে আপনি অত টাকা ধার হিসেবে পাবেন। এরকম সময় যদি আপনার কাছে ক্রেডিট কার্ড থাকে আর সেটাতে এক লক্ষ টাকা ক্রেডিট লিমিট থাকে। তাহলে আপনি তখনই ক্রেডিট কার্ডটা দিয়ে হাসপাতালের বিল টা প্লে করে দিলেন। আর তারপর পরের মাসের ডিউ ডেট এর আগে সেই টাকাটা জোগাড় করে ব্যাংকে ফেরত দিয়ে দিলেন। তো এরকম এমার্জেন্সি সিচুয়েশনে ক্রেডিট কার্ড আপনার অনেক বড় উপকারে আসতে পারে।


সুবিধা নাম্বার 2. ক্রেডিট কার্ড দিয়ে প্রতি 100 টাকা খরচ করাতে বেশিরভাগ ব্যাংক সাধারণত দুই টাকা করে রিওয়ার্ড পয়েন্ট হিসেবে ক্যাশব্যাক দেয়। ফলে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে খরচ করে আপনি চাইলে মোটামুটি 2 পার্সেন্ট টাকা বাঁচাতে পারেন। 

 

সুবিধা নাম্বার 3. সাবস্ক্রিপশন সার্ভিসেস, বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার যদি আপনি সাবস্ক্রিপশন নিতে চান। তাহলে তখন ক্রেডিট কার্ডের দরকার পড়ে। যেগুলো কিন্তু ডেবিট কার্ড দিয়ে নেওয়া যায়না। তো এই সুবিধাগুলো পেতে চাইলে আপনাকে তো ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু তাহলে আগে আমাদের চালাকি করে পেরিয়ড কার্ডে যে সমস্যাগুলো রয়েছে তার সমাধান গুলো খুঁজে বার করতে হবে।


 

তো চলুন এবার সমাধান গুলো জেনে নিন 

সমাধান নাম্বার 1. ক্ষমতার ভিতর ক্রেডিট লিমিট সেট করে রাখা। যদি আপনার মাসিক আয় 10 হাজার টাকা হয় তাহলে ব্যাংক আপনাকে এক লক্ষ টাকা ক্রেডিট লিমিট দিয়ে রাখলেও। আপনি সেটা 5000 টাকায় সেট করে রাখুন। এখন প্রায় সমস্ত ক্রেডিট কার্ডে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে নিজের থেকে ক্রেডিট লিমিট সেট করার অপশন টা থাকে। তো এই লিংকটা সব সময় নিজের মাসিক আয়ের অর্ধেক এ সেট করে রাখুন যাতে আপনি কোনোভাবেই DEBT TRAP গিয়ে না ফাঁসেন। আর সব থেকে বড় কথা এটা করে রাখলে যদি আপনার ক্রেডিট কার্ডে কোন ফ্রড ট্রানজাকশন হয় সেটাও আপনার ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। তাছাড়া এমার্জেন্সি আসলে তখন তো আপনি মোবাইল ফোন দিয়েছে লিমিট টা বাড়িয়ে নিতে পারবেন। 

আরও পড়ুন: শেয়ার মার্কেটের খেলাটা বুঝতে শিখুন , শেয়ার বাজার কোন জুয়া না !

সমাধান নাম্বার 2. Auto-Debit অপশন অন করে রাখা।  এটা করে রাখলে যেদিন আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিল পেমেন্ট ডিউ ডেট থাকবে সেদিন আপনার সেভিংস একাউন্ট থেকে অটোমেটিক সেই টাকাটা কেটে গিয়ে আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিল পেমেন্ট হয়ে যাবে। ফলে আপনার সময় মত বিল পে করার কথা মনে রাখা সমস্যাটা মিটে যাবে।


 সমাধান নাম্বার 3. একটা খামে ক্রেডিট কার্ড ডেবিট কার্ড একসাথে ক্যারি করা। যাতে ক্রেডিট কার্ডটা সঙ্গে নিয়ে ডেবিট কার্ড টা একই সঙ্গে চলে আসে। টাকা তোলা দরকার পরলে সব সময় ডেবিট কার্ড। আর কোথাও পে করার দরকার পরলে সব সময় ক্রেডিট কার্ড। যাতে করে রিপোর্ট পয়েন্ট পাওয়া যায়। এই নীতিটা মাথায় রেখে চলতে হবে। আর যদি আপনি অলরেডি ক্রেডিট কার্ড নিয়ে Debt Trap এ ফেঁসে গিয়ে থাকেন। তাহলে সবার আগে যে কোনোভাবে সেই পুরো টাকাটা শোধ করুন। দরকার পরলে পার্সোনাল লোন নিয়ে সেটা সত্য করুন। কারণ ক্রেডিট কার্ডে আপনাকে হয়তো 35 পার্সেন্ট স্পিড করতে হচ্ছে। সেখানে পার্সোনাল লোন নিলে আপনাকে হয়তো খুব বেশি হলে 18% ইন্টারেস্ট প্রদান করতে হতে হবে। এভাবে আপনার ঋণের বোঝা টা অন্তত অর্ধেক হয়ে যাবে। আর সবসময় খেয়াল রাখবেন আপনি যখন ক্রেডিট কার্ডের বিল পে করছেন তখন ফুল ডিউ অ্যামাউন্ট টাই যেন পে করেন। মিনিমাম ডিউ অ্যামাউন্ট পে করতে বলে ব্যাংক আপনাকে Debt Trap ফাঁসানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু সেই ফাঁদে পা দিলে চলবে না। কারন ধরুন আপনার ফুল ডিও অ্যামাউন্ট রয়েছে 1,000 টাকা। ব্যাংক আপনাকে বলবে আপনি মিনিমাম দিও আমার 100 টাকা পে করে দিন তাহলেই আপনি ক্রেডিট কার্ডটা ব্যবহার করতে থাকতে পারবেন। কিন্তু এটা করলে আপনাকে বাকি 900 টাকার উপর কিন্তু সেই 35%-40% ইন্টারেস্ট বোঝা বাড়তে থাকবে। তাই সবসময় ফুল অ্যামাউন্ট পে করবেন। আশাকরি পুর ব্যাপারটা আমাদের কাছে পরিস্কার। 

আরও পড়ুন:ইন্সুরেন্স কি এবং কেন করবেন ? ইন্সুরেন্স করলে কি উপকার পাবেন ভবিষ্যতে?

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন