রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একেবারে শেষ বয়সের গল্প। তার কিডনির অসুখ ইউরিমিয়া হয়েছে। রক্তে শুরু হয়েছে বিষক্রিয়া। অপারেশন করাতে হবে। সেছাড়া কোনও বিকল্প নেই। শান্তিনিকেতন থেকে তড়িঘড়ি কলকাতা নিয়ে যাওয়া হল। সমস্ত ডাক্তার মত দিলেও; মত দিলেন না বিখ্যাত ডাক্তার স্যার নীলরতন সরকার। তিনি ১৯১৬ সাল থেকেই কবির চিকিৎসা করছেন। তিনি জানালেন এতে কবির প্রাণ হানির আশঙ্কা আছে। অতএব অপারেশন স্থগিত।
আষাঢ় মাসের শেষের দিকে কবিকে আবার শান্তিনিকেতনে ফিরেয়ে আনা হল। সেই রোগ যন্ত্রণার মধ্যেও রবীন্দ্রনাথ আষাঢ়ের রূপ দেখার জন্যে ব্যাকুল। তাই তাকে নিয়ে আসা হয়েছে উত্তরায়ণের দোতলায়। এখন কবি এখানে থাকেন। এইসময় শুরু হয়েছে তার কবিরাজি চিকিৎসা। চিকিৎসা করছেন কবিরাজ বিমলা নন্দ তর্কতীর্থ(Kobiraj Bimala Nanda Tarkatirtha)। কিন্তু কোনও উন্নতি দেখা যাচ্ছে না।
ডাঃ নীলরতন সরকার (Dr Nilratan Sircar) কবিকে দেখতে আসতে পারছেন না। সদ্য তার স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে এবং তিনি এখন গিরিডিতে। এমন সময় একদিন কলকাতা থেকে তাকে দেখতে এলেন ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় (Dr Bidhan Chandra Roy)। বিধান চন্দ্রের তখন ষাট বছর বয়েস। তার চিকিৎসা তখন প্রবাদের মতো।
তিনি কবিকে দেখলেন এবং বললেন, এই শ্রাবণ মাসেই অপারেশন হবে! আর বললেন – “অপারেশনটা করিয়ে নেওয়াই ভাল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। সাবধানের মার নেই”।
রবীন্দ্রনাথ বিধান চন্দ্রে মুখে সেই কথা শুনে হেসে বললেন- “মারেরও সাবধান নেই!” দুঃখের বিষয় এই অপারেশনের (৩০ জুলাই ১৯৪১) পর রবীন্দ্রনাথের শরীরের অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে। তার অপারেশনের জন্য জোড়াসাঁকোর বাড়িতে তিনি যে ঘরে থাকতেন তার পাশের ঘরে একটি অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটার তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেই তার অপারেশন হয়। এবং ০৭ আগষ্ট ১৯৪১ তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
রাণী চন্দের “গুরুদেব” বইটিতে উল্লেখ রয়েছে যে কবিকে বলা হয়েছিল ছোট্ট একটা অপারেশন; এটা করিয়ে নিলেই তাঁর আচ্ছন্ন ভাবটা ঠিক হয়ে যাবে, পরের দশ বছর আবার আগের মতোই লিখতে পারবেন। নীলরতন সরকারকে একবার জানানোও হয়নি এত বড় একটা সিদ্ধান্ত।
যদিও বিধান চন্দ্র রায় নীলরতন সরকারকে গুরুদেব মানতেন। অপারেশন সম্পর্কে নীল রতন সরকার বলেছিলেন – “ভুলে যেওনা লোকটার নাম রবীন্দ্রনাথ”।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন