ছেলেটা জন্মেছিল কেরালার আজি কুরি গ্রামের এক মালায়ালি পরিবারে 1980 সালে। বাবা-মা দুজনেই শিক্ষকতা সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাবা পড়াতেন পদার্থবিদ্যা মা অংক। বাড়ির কাছেই একটা মালায়ালাম মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করেছিল সে। কালিকাট ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে। ছোট থেকেই খেলাধুলার আগ্রহ ছিল তার ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস সবরকম খেলাতেই আগ্রহ ছিল তার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর একটা মাল্টিন্যাশনাল শিপিং ফ্রম সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করা শুরু করে ছেলেটা। এই কাজের দরুন সে সুযোগ পায় সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোর। এই সময় তার বেশ কিছু বন্ধু এমবিএ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা ছেলেটির কাছে এসে বলে সে যদি তাদের এমবিএ পরীক্ষার জন্য কিছুটা সাহায্য করতে পারে তাহলে খুব উপকার হয়। ছোট থেকে এসে ছাত্র হিসেবে ভীষণ ভালো ছিল।
বিশেষত অংকে বরাবরই ছিল ভীষণ দক্ষ। ছেলেটা বন্ধুদের টিউশন দেওয়া শুরু করে। সে বছর বন্ধুদের সাথে সেও বসে পরীক্ষা দিতে। আর দেখা যায় ফাইনাল পরীক্ষায় 100% নম্বর পায় সে। এই ঘটনা শুধু ছেলেদের বন্ধুদেরই নয় ছেলেটাকেও অবাক করে দিয়েছিল ভীষণভাবে। রেজাল্ট দেখে ছেলেটা বন্ধুরা তাকে পরামর্শ দেয় এবার সত্যি কারের একটা কোচিং ক্লাস খুলে ফেলা দরকার। সেই সময়ে যথেষ্ট মোটা অংকের একটা চাকরি করছিল ছেলেটা। খানিক ভেবে নিয়ে সে চাকরি ছেড়ে দেয় আর শুরু করে নিজস্ব একটা ছোটখাটো কোচিং স্কুল। এক কাছের বন্ধুর বাড়ির ছাদে শুরু হয় তার প্রথম কোচিং স্কুল। প্রতিমাসে একটা সপ্তাহের জন্য সে বিনামূল্যে পড়াত ছাত্র-ছাত্রীদের। ছাত্রের সংখ্যা বাড়তে লাগল বন্ধুর বাড়ির ছাদ ছেড়ে দিয়ে একটা ঘর ভাড়া নিল ছেলেটা। তার একার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ানয়, তারই কিছু প্রাক্তন ছাত্র পাশে এসে দাঁড়ায়। 2009 সালে বিভিন্ন রকমের শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করেএবং সেগুলি পৌঁছে দিতে থাকে বন্ধুদের কাছে ছাত্রছাত্রীদের কাছে।
আরও পড়ুন: গঙ্গা সাগর মেলা কিভাবে চালু হল ? এর মাহার্ত কি ? কেন গঙ্গাকে পুজো করা হয় ?
এই প্রথম সে তার কোচিং ক্লাসে টেকনোলজির ব্যবহার করে। তার এই অনলাইন ভিডিও এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে যে দেখা যায় অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় কুড়ি হাজার। আর বিদ্যার্থীরা ছড়িয়ে রয়েছে মুম্বাই, দিল্লি, পুনে, চেন্নাই সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। ছেলেটা সিদ্ধান্ত নেয় একটা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করবার যে অ্যাপের মাধ্যমে যখন ইচ্ছে অনলাইন ভিডিও দেখতে পাবে ছাত্ররা। এই অ্যাপ তৈরি করতেই কেটে যায় বছর চারেক। এই অ্যাপ এর মূল লক্ষ্য ছিল ক্লাস ফোর থেকে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত প্রতিটা ছাত্র-ছাত্রী কাছে অনলাইন শিক্ষামূলক ভিডিও পৌঁছে দেওয়া। শুধু তাই নয় এর সাহায্যে নেওয়া যায় এমবিএ, কেট, নিট, জি.ম্যাট, জে.ই.ই এবং জি.আর. ই মতো পরীক্ষার প্রস্তুতি ও। আমরা এতক্ষণ যে মানুষটার কথা বলছিলাম তার নাম বাইজু রবীন্দ্রন।
আর তার তৈরি বাইজুস দ্য লার্নিং অ্যাপ এর নাম তো আপনারা সকলেই শুনেছেন। প্রতিবছর প্রায় 4 লাখ ছাত্র-ছাত্রী বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন নেয় এই অ্যাপটির। গত কয়েক বছরে প্রায় 6 মিলিয়ন বার ডাউনলোড করা হয়েছে এটিকে। বর্তমানে ভারতের সবথেকে বড় এডুকেশন কোম্পানি গুলোর মধ্যে অন্যতম বাইজুস। এই অ্যাপটি বাজারে আসার পর খুব সহজেই শিক্ষামূলক অনলাইন ভিডিও পৌঁছে যেতে পেরেছে ভারতের সেই সব জায়গাতেও। যেখানে সচরাচর শিক্ষার আলো পৌঁছাতে পারে না। বর্তমানে শাহরুখ খান এই অ্যাপটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। ভাল থাকুন বাই রবীন্দ্রন আপনার প্রচেষ্টায় শিক্ষার আলো এভাবে ছড়িয়ে যাক ভারতবর্ষের কোনায় কোনায়।
Cradit-UltiMad Media youtube
আরও পড়ুন:সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও বদলাননি সাউথের এই অভিনেতা !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন