সনু সুদ( Sonu Sood) এই নামটি সবার কাছেই পরিচিত কারন তিনি গরিবের হিরো। আসল হিরো তিনি তাকে নিয়ে যতই বেশি বলি কোথাও না কোথাও কম হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁর চলার পথ ছিল না মশৃণ, তিনি কত বার রিজেকশন হয়েছেন। কেমন ছিল তার সংঘর্ষের দিন সব কিছু বিস্তারিত লিখলাম আপনাদের জন্য।
সনু সুদের এর জন্ম 30 জুলাই 1973 তে হয় পাঞ্জাবের মোগাতে । ওনার মা ছিলেন একজন প্রোফেসর, ওনার মা এবং বাবার সপ্ন ছিলো ছেলেও ভাল পড়াশুনা করে। তারপর সনু ইস্কুলের পড়াশোনা শেষ করে। সনু ইঞ্জিনিয়ারিং করতে নাগপুরে চলে যায়। যেখানে যশবন্ত রাও কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে উনি ইলেকট্রনিক্স এ বিটেক করেন । পড়ালেখার পাশাপাশি তার অভিনয় এবং মডেলিং ইন্টারেস্ট ছিল। কলেজ থেকেই মডেলিং শুরু করে দিয়েছিলেন । একদিন তার মাকে বলেন যে সে অভিনয় করতে চায়। আমকে দেড় বছর সময় দিন আমি পুরো চেষ্টা করতে চাই যদি আমি সফল না হয় তবে আমি বাবার সাথে কাজ করে ঘরোয়া ব্যবসাকে আগে নিয়ে যাব। ওনার পিতার কাপড়ের দোকান যেখানে আজ সনু সুদ নিজে বসেন।
সনু সুদ তার পিতাকে নতুন স্কুটি গিফট করেছিলেন তবে তার পিতা এখনো তার পুরানো স্কুটি নিয়েই দোকানে গিয়ে থাকেন। সনু সুদ যখন বাড়িতে থাকেন তখন সেই পুরনো স্কুটির পেছনে বাবাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান।
সনু মাত্র 5,500 টাকা নিয়ে চলে আসেন মুম্বাই । যেখানে সনু একদম নতুন। যেভাবে প্রত্যেক জিবন সংগ্রামি যেভাবে সংঘর্ষ করে এগিয়ে যায় সনুও তেমনটাই ছিলেন। একটি প্রোডাকশন হাউজ থেকে অন্য প্রোডাকশন হাউসের ছবি নিয়ে ঘোরা। ঠিক সব জায়গা থেকে পারছিলেন রিজেকশন আর রিজেকশন। আর এটাও সনুর সাথে হয় তবে একেইতো একটি অভিনেতার সংগ্রাম বলা যায় । তখন সনু বুঝে যায় ঘর থেকে যে সময় নিয়ে এসেছি সেটা মুম্বাইয়ের রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে আর এই সিস্টেম বুঝতে লেগে যাবে। খুব খারাপ সময় চলছিল আর তার সাথে সাথে একটি জব করছিলে। মুম্বাই এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত যেতে পশ্চিম রেলওয়ের একটি পাশও কেটে নেন । কম থেকে কম পয়সায় দিন কটাতে হত তাকে। সাথে সাথে দিতে হতো অডিশন কারণ রিজেকশন এর জন্য তিনি থেমে থাকেননি।
একটি জুতোর এডে কাজ পান তিনি প্রথম । প্রতিদিন তিন হাজার করে টাকার বিনিময়ে। সনু সুদ এটা নিয়ে খুশি ছিলেন দু'তিন দিনের কাজ ছিল মাসের খরচা চলে যাবে ভালোভাবে এটা ভেবে। আর যখন সেটে গেল দেখলো তার মত 50 জনকে অলরেডি সিলেক্ট করে রেখেছে। আর সেই এডে তাকে আউট ফোকাস রেখে একটি কোনায় দাঁড় করিয়ে রাখা হলো। পয়সাতো পেয়েছিলেন, কিন্তু অ্যাডভার্টাইজমেন্ট তাকে দেখা যায় নি। আর এটা ভেবে সে চিন্তিত ছিল যে এমন ভাবে সে কিভাবে সফল হবে । কিন্তু এই ভাবে কাজ করতে বাধ্য ছিল সে। বড় কাজ না পাওয়া না পর্যন্ত তাকে মুম্বইতে থাকতে হবে। খরচার জন্য যাই কাজ পাক করা জরুরী ছিল ।
তারপর একদিন কেউ তার ছবি পছন্দ করলো এবং তাকে একটি তামিল ছবির জন্য ডাকা হল। তারপর সোনু জি ট্রেনটি নিয়ে চেন্নাই চলে যান।যদিও তিনি তামিল জানতেন না, কিন্তু তারপক্ষে, এর থেকে ভাল সুযোগ আর ছিল না। সনুজির মা তাকে একটি বই দিয়েছেলেন তামিল শেখার জন্য । সনু ট্রেনে যেতে যেতে ততটুকু শিখতে পারেন ততটুকু শিখে নিয়েছিলেন। ওখানে যাওয়ার পর লুক টেস্ট হয়। মেকিং হয় অডিশন হয় এবং সনু সুদ পেয়ে যায় তার প্রথম সিনেমা। তিনি প্রথম সিনেমা সাইন করেন যেটি ছিল তামিল সিনেমা।
ভাষার একটা সমস্যা ছিল জানতেন না তিনি এই ভাষা যার জন্য তাকে খুবই পরিশ্রম করতে হয়। ডায়লগ বুঝতে পারতেন না। শুটের সময় খাওয়া, স্নান করা, শোবার সময় ও ডায়লগ মুখস্ত করতেন। তারপর ছুটির সময় পুরো মনোনিবেশ করতেন অভিনয়ের দিকে। আর ওই সময় ডায়লগের মুখস্থ নিয়ে থাকত না কোন প্রেসার। আর এইসব করে সনু সুদ এমন স্থানে একটা জায়গা করে নেয় যেখানে তার কোনো সম্পর্কই ছিলনা এর আগে।
আস্তে আস্তে কাজ বাড়তে থাকে লোক তাকে পছন্দ করতে থাকে। তামিলের সাথে সাথে তেলেগু এবং কান্নাড় সিনেমায় কাজ করতে শুরু করেন তিনি। আর তার উপর ভিত্তি করে প্রথম হিন্দি ছবি করেন শাহিদ আজম (Shaheed-E-Azam) । যেখানে সনু সুদ ভগৎ সিং এর চরিত্রে অভিনয় করেন। তারপরও এমন না যে পরপর বলিউডের সিনেমা পেতে থাকেন সনু। এটা ঐ সময় ছিল না যে স্ক্রিপ্ট সনু সুদ নিজেই বাছাই করতে পারতো। যে অফার আসতো সেই ও নয় তাকে মানিয়ে নিতে হতো এবং তাকেই দিতে হতো তার বেস্ট অভিনয়। সেটা একশন বা রোমান্স বা কমেডি বা নেগেটিভ কারেক্টর।
আর এই অভিনয় সংগ্রামের সময় তার মা তাকে চিঠি লিখতেন। তিনি বলতেন একদিন তুমিও বড় সিনেমা করবে। তুমি কাজ করে যাও কঠোর পরিশ্রম করা বন্ধ করবে না তোমারও সফলতা আসবে। সনু কে খুবই উৎসাহ যোগাতেন তার মা। সনু বলতেন তার মাকে যে তিনি চিঠি কেন পাঠান। আমরা তো প্রত্যেক দিন ফোনে কথা বলি। চিঠি পাঠানোর কি আবশ্যকতা আছে? উনার মা বলতেন যখন আমি থাকবো না তখনো তুই এই চিঠিগুলোকে পড়তে পারবি। ফোনের কথাগুলো তো তুই ভুলে যেতে পারিস। অজস্র সুদের কাছে তার মায়ের লেখা প্রত্যেকটা চিঠি সযত্নে গুছিয়ে রাখা আছে আর সেগুলো তিনি প্রত্যহ পড়েন। বিশেষত তিনি যখন সমস্যায় থাকেন অথবা জীবনের প্রতি নিরাশ হয়ে যান। আর ওই চিঠি থেকে তিনি তার উত্তর খুঁজে পান।
sonu sood, Monika Sood & Malavika Sachar(Younger) |
সনু সুদ এর কথায় তার মা তার কোনো বড় সিনেমা দেখতে পাইনি। কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছে যার কারণে আমার মা আমার বড় সিনেমার দেখে যেতে পারিনি। আর এর জন্য আফসোস সারা জীবন থাকবে। কিন্তু যখন মায়ের চিঠি গুলো তিনি পড়েন। তিনি পরে বুঝতে পারেন তার মা আগে থেকেই জানতো তারে সফলতার কথা। যে কথা তার মা আগেই লিখে রেখে যায়। আর সনু সুদ সেটি আজ রিলেট করতে পারে তা বাস্তবতার সাথে।
আরও পড়ুন:একটা পরমাণু দুর্ঘটনায় (বোমা না, এক্সিডেন্ট) মিনিমাম কতগুলো প্রাণ যেতে পারে?
সনু সুদ আজতো একটা বড় মোকামে বসে আছে। তিনি আজ সিনেমা বাছাই করে করতে পারেন। যত বড়ই সিনেমা হোক যদি তার চরিত্র পছন্দ না হয় তাহলে হয়তো তাকে পরিবর্তন করতে বলবেন না হলে করবেন না। প্রথমে ভাগ্যের ভরসায় প্রচুর সিনেমা করেছেন তিনি। এখন তার অভিজ্ঞতা এবং চিন্তাশক্তির দিয়ে বিচার করে সিনেমায় সাইন করেন। অনেক হিট সিনেমা তিনি দিয়েছেন । অনেক রকমের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষ তাকে নেগেটিভ চরিত্রেই বেশি পছন্দ করে। তবে বলে দিই সনু সুদের স্বপ্ন হিরো হওয়ার ছিল। আর আজও তিনি একটি বড় সিনেমার অপেক্ষায় আছেন যেখানে ডিরেক্টর তার চরিত্র কে হিরোর মতো করেই দর্শকদের কাছে দেখায়। তিনি মনে করেন কোন সুপারস্টার এইজন্য সুপারস্টার হন কেননা সেই সিনেমার ডিরেক্টর সেই লেভেলের কাজ করেছে ওই সিনেমায়।
তিনি তামিল,তেলেগু, কান্নাড়, বলিউড ছাড়াও হলিউডি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। শাহরুখ খানো সনু সুদ এর তারিফ করতে কম করেন না। শাহরুখ খান বলেছেন, হ্যাপি নিউ ইয়ারে আমি সোনু সুদের এর সাথে কাজ করেছি। ওয়ার্ল্ড ট্যুর করেছি অনেক শো করেছি। সেখানে সনুর ডিসিপ্লিন এবং ওয়ার্কআউট দেখে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি। সালমান খানও দাবাং সিনেমায় সনু সুদ এর বডি দেখে সালমান খান বলেন, আমার আরও বেশি কসরত করা উচিত। এদিকে দেখতে গেলে সনু এই দুজনের কাছ থেকেই মোটিভেট হন।
![]() |
Eshaan Sood with father Sonu Sood mother Sonali Sood and Brother Ayaan Sood |
যদি বলি আজকের কথা তবে প্রত্যেকটি ভারতীয়দের বুকে যে অভিনেতা জায়গা করে আছেন। সনু সুদের কাছে এমনও টাকা ছিল না যাতে প্রত্যেককে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয় করোনার সময়। তবুও করোনা কালে নিজের জীবনের পরোয়া না করে পরিয়ায়ি শ্রমীদের ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছে। যতটা পেরেছেন ততটা করেছেন মানুষের জন্য। করোনার সময় তার অবদান কথায় বলে শেষ করা যাবেনা। এখান থেকে মানুষটির কাছ থেকে একটি ব্যাপারে শেখার যে যতই বড় হোক মানুষ হয়ে মানুষের উপর কর্তব্য কে কখনো এড়িয়ে যেতে নেই।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানে 6000 পাকিস্তান তালেবান সন্ত্রাসবাদী, UN রিপোর্টে বলেছে সেই কথা !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন