হাভারতের শকুনি কি সত্যি খারাপ লোক ছিল? 

শকুনি (shakuni) খারাপ লোক হলে শকুনিকে 
পুজো করা হয় কেন?

আজ সেই একরাশ প্রশ্নের উত্তরের  সন্ধানে। 

শকুনিরা ছিল একশো ভাই। 
শকুনির বোন হল গান্ধারী।

শকুনির বাবা  সুবল  ছিলেন  গান্ধার ( এখন আফগানিস্তান) দেশের রাজা।

ভীষ্ম ধৃতরাষ্ট্রের জন্য পাত্রী হিসাবে 
গান্ধার রাজকন্যা  সুন্দরী  গান্ধারীকে পছন্দ করলেন।
 ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে বিয়েও হয়ে গেল।
 শকুনির কিন্তু এই বিয়েতে মত ছিল না। 

গান্ধার রাজ জ্যোতিষ বিচার করে জানতে পারলেন  যে গান্ধারীর বিয়ের পর স্বামী মারা যাবে। 

তাই বৈধব্য দশা কাটানোর জন্য বিয়ের আগে একটা ছাগলের সঙ্গে গান্ধারীর বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 

বোনের  বিয়ের পর শকুনিও  কৌরবদের রাজবাড়িতে এসে থাকতে শুরু করল।

 একদিন কৌরবরা  জানতে পারল  গান্ধারীর বিধবা হওয়ার খবরটা রাজা সুবল গোপন করেছিল। 

কৌরবরা  ক্ষিপ্ত হয়ে গান্ধার  রাজ্য আক্রমণ করল।
রাজা সুবল ও তার একশো ছেলেকে বন্দী করে নিয়ে এসে  কারাগারে রাখল।
শকুনিও ছিল।
কারাগারে প্রতিদিন  মাত্র এক সরা করে ভাত দেওয়া হত সবাইকে খাবার জন্য।

সুবল জানতেন এই এক সরা ভাত খেয়ে তারা কেউ বাঁচবে না।
তাই তিনি ঠিক করলেন এই এক সরা ভাত শুধু  শকুনি খাবে।
কারণ রাজা সুবল জানতেন   শকুনি  তাঁর সব ছেলেদের চেয়ে বুদ্ধিমান।
সেই পারবে এই অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে।

 রাজা সুবল শকুনিকে  বললেন, 
আমি চাই তুমিই বেঁচে থেকে কৌরবদের ধ্বংস কর।
 আমার মৃত্যুর পর আমার হাড় দিয়ে তুমি পাশা বানাবে।
আর এই মন্ত্রপুত পাশা 
তোমাকে সব খেলায় জেতাবে। 

এরপর একে একে  সবাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে লাগল।
 বাবার মৃত্যুর পর শকুনি বাবার শরীরের  হাড় দিয়ে পাশা বানাল।

শকুনি  আবার দুর্যোধনদের সঙ্গে সব ঝামেলা মিটিয়ে নিয়ে  কৌরবদের বাড়িতে  থাকতে লাগল ভাগ্না দুর্যোধনের পরামর্শদাতা হিসাবে।

শকুনি কিন্তু বাবা ও তার ভাইদের মৃত্যুর  কথা ভোলেনি।
 তাই বুকে জ্বলত  সবসময়   প্রতিশোধের আগুন।
বদলা চাই!  বদলা!  

 এরপর যুধিষ্ঠির  পাশা খেলায় শকুনির মন্ত্রপুত পাশার কাছে হেরে গেল।
মহাভারতের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।

অবশেষে কৌরব বংশ ধ্বংস হল।

শকুনির মনের জ্বালা মিটল।
এতকিছুর পরে একটা কথা মনে রাখতে হবে শকুনির চরিত্র কিন্তু নিষ্কলঙ্ক ছিল। 
কোন কিছুর প্রতি তার মোহ ছিল না। 
শকুনি শিবের ভক্ত ছিল।
শকুনি শুধু অন্যায়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল।
একমাত্র শ্রীকৃষ্ণ এসব ঘটনা জানতেন।

এরপরও  কি বলা যাবে শকুনি খারাপ লোক ছিল?

কেরালার কোল্লাম জেলায়   
পবিত্রাশরণে শকুনির একটি  মন্দির আছে।
শকুনিকে সেখানে একটি সম্প্রদায়ের মানুষ পুজোও করেন।
সেই মন্দিরের ফটো দেওয়া হল।

পুনশ্চঃ 
মহাভারত নিয়ে লোকগাথায় এই ঘটনা  পাওয়া যায়।
যদিও ব্যাসের মহাভারতে এই ঘটনার উল্লেখ নেই।
মহাভারত একটি মহাকাব্য।  মহাভারতের ঘটনার প্রামাণিকতা  নিয়ে আলোচনায় গেলাম না।
বরং নানা ঘটনা ও লোকগাথায় সমৃদ্ধ একটি মহাকাব্য  পাঠের  আনন্দটুকুই গ্রহণ করাই শ্রেয়।
" মহাভারতের কথা অমৃতসমান"

★বেশ কিছু বছর আগে চলচ্চিত্র অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ও অভিনীত
" শকুনির  পাশা " নাটকে শকুনির এই চরিত্রের বিশেষ দিকটি নিয়ে একটি মঞ্চসফল নাটক নির্মাণ করা হয়েছিল।
নাটকটি দেশ ও বিদেশের নানা জায়গায় অভিনীত হয়েছিল।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন