কারোর মাথায় ঝোড়াভর্তি নারকেল। কেউ আবার নিয়ে যাচ্ছে ব্যাগভর্তি আলু কিংবা অন্য কোনো সব্জি। গন্তব্য, স্থানীয় এসুক এমবা বাজার। এক ঝলক দেখলে সকলকেই ব্যবসায়ী বলেই মনে হবে যে কারোর। কিন্তু বিষয় হল তাঁরা সকলেই ক্রেতা। তবে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া পণ্যগুলি? পারতপক্ষে সেগুলিই হল মুদ্রা। হ্যাঁ, দক্ষিণ নাইজেরিয়ার কালাবার অঞ্চলে বাণিজ্য চলে এভাবেই। পৃথিবীর একমাত্র অঞ্চল হিসাবে সেখানে এখনও স্বমহিমায় প্রচলিত রয়েছে বিনিময় প্রথা।
ক্রস রিভার স্টেটের রাজধানীতে এই প্রথার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। তখনও পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন চলছে নাইজেরিয়ায়। একদিকে যেমন শাসক ও শোষকদের কর আদায়ের প্রক্রিয়া, তেমনই অন্যদিকে ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি— এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে নাজেহাল হয়ে পড়েছিলেন স্থানীয় মানুষজন। জীবন নির্বাহের জন্য অর্থ কোথায়? তবে যে না খেতে পেয়ে মৃত্যু হবে মানুষের। সমস্যার সমাধান হিসাবেই গ্রামের সাধারণ মানুষ বেছে নিয়েছিলেন বিনিময় প্রথাকে। একে অপরের ওপর নির্ভর করেই শুরু হয়েছিল অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই। আর তারপর থেকেই সেখানকার আকপাবুয়ো সম্প্রদায়ের স্থানীয় সংস্কৃতির মধ্যে মিশে গেছে বিনিময় প্রথা।
আজ এত বছর পেরিয়ে এসেও এতটুকু বদল হয়নি পরিস্থিতির। বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়ের জন্য রয়েছে বিভিন্ন নিয়ম। এক কেজি মাছ আর এক কেজি শাকসবজির মূল্য সমান নয়। ঠিক যেমনটা হয়ে থাকে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে। তবে একেবারেই কি অর্থের ব্যবহার নেই? তা নয়। পর্যটক এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের বাইরের মানুষজন অর্থের পরিবর্তেই কেনাকাটা করেন সেখানে। আর সেটাই তাঁদের অর্থ উপার্জনের একমাত্র পথ।
তাছাড়া স্কুল-কলেজের মাইনে ভরতে ব্যবহৃত হয় নগদ অর্থ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বহির্বিশ্বের প্রভাব, গ্লোবালাইজেশনের দৌলতে বেশ বড়োসড় ধাক্কা খেয়েছে নাইজেরিয়ার এই বিনিময় প্রথা। বাইরে থেকে কোনো জিনিস আমদানি করতে গেলে তো আর এভাবে বিনিময় চলে না। দরকার হয় মোটা অঙ্কের নগদ অর্থের। আর সেই কারণে অনেকেই বাইরে ব্যবসা করতে ছাড়ছেন এই গ্রাম। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্প্রদায়ের প্রধান শাসক এডেম ডিউকের কাছে। ঐতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তিনি। বিশ্বাস, আফ্রিকার বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে একমাত্র কার্যকর হতে পারে এই প্রথাই। ডিউকের এই অভিমতকে সমর্থন করেন প্রদেশের সমস্ত বুদ্ধিজীবীরাও। তাঁরাও সমানভাবে একাধিক উদ্যোগের মাধ্যমে চেষ্টা করে চলেছেন এই সংস্কৃতিকে জীবিত রাখার…
আপনার মূল্যবান মতামত জানান কমেন্ট বক্সে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন