স্মার্টফোনের ব্যবহার, শুধু যোগাযোগ আর বিনোদনের অংশ নয়। চমৎকার ফিচার এর সাথে সাথে কোন ব্রান্ডের ফোন আপনি ব্যবহার করছেন তা বেশ বড় একটি বিষয়। আর যখন ফোনের ক্ষেত্রে ব্রান্ড নিয়ে কথা বলা হয়, তখনই একটি ব্রান্ডের কাছে বাকি সবকিছুই ঠান্ডা। আর সেটি হল Apple বা iPhone।
আপনার কাছে হয়তো অন্য যেকোনো ফোন থাকতে পারে। তবে আইফোন হল আইফোন। এই কোম্পানিটির এতটি অভিজাত হয়ে ওঠার কারণ কি? কিভাবে শুরু হলো পৃথিবীর খ্যাতনামা একটি টেক কোম্পানির গল্প। জানতে হলে শেষ অব্দি পড়ুন এই পতিবেদন টি।
1576 সাল টেকনোলজিতে পৃথিবী তখন বেশ এগিয়ে। নামি-দামি সামাজিক যোগাযোগের জন্য যান বাহন ছিল। কিন্তু সেগুলো ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। কম্পিউটার নামক যে বিশেষ যন্ত্র আছে তা হয়তো সবাই জানত। কিন্তু নিজস্ব একটি কম্পিউটার থাকা ছিল দূর ভাবনার বিষয়। ঠিক এই সময় রোল্যান্ড ওয়াইন, স্টিভ ওজনিয়ার এবং স্টিভ জবস একটি কোম্পানি খোলার সিদ্ধান্ত নেন যা সাধারণ মানুষের কাছে এই নামিদামি যন্ত্র গুলো পৌছে দেবার মতো সুবিধা তৈরি করে দেবে।
আর এর পরপরই প্রতিষ্ঠা করা হয় অ্যাপেল। কোম্পানির পুরো নাম এপেল কম্পিউটার ইনকর্পোরেশন( Apple Computer, Inc.)। কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তব করার জন্য বিশ্বাসের প্রয়োজন হয়। যা হয়তো সবার থাকে না কোম্পানি খোলার মাত্র দুই সপ্তাহ পরে রোনাল্ড ওয়াইন অ্যাপল ছেড়ে চলে আসেন এবং তার শেয়ারের অংশ যা ছিল 800 ডলার তা বিক্রি করে দেন। এখন ভেবে দেখুন রোনাল্ড যদি ওই সময়ে অ্যাপল ছেড়ে চলে না আসতেন তাহলে আজকের দিনে তার শেয়ারের দাম হত প্রায় 60 বিলিয়ন ডলার যা প্রায় পাঁচ হাজার একশো কোটি টাকা সমান। যায় হোক রোনাল্ড এর কয়েক মাস কোম্পানি ছাড়ার পরই তারা তাদের প্রথম প্রডাক্ট অ্যাপল-1 লঞ্চ করে। স্টিভ ওজনিয়ার এটির অপারেটিং সিস্টেম এবং হার্ডওয়ার তৈরি করেন। অ্যাপল-1 ছিল প্রথম কম্পিউটার যাতে বিভিন্ন ধরনের রিটেন ক্যারেক্টার দেখা সম্ভব ছিল। অ্যাপল-1 এর রিলিজ করার এক বছর পরই স্টিভ ওজনিয়ার অ্যাপল-2 তৈরি করেন। অ্যাপল-2 ছিল পৃথিবীর প্রথম কালার কম্পিউটার। যাতে রঙ্গিন মনিটর ব্যবহার করা হয়।
এরপর 1984 সালে লঞ্চ করা হয় অ্যাপেল এর অন্যতম সেরা একটি প্রোডাক্ট Macintosh। Macintosh বাজারে আসার পর অ্যাপলের মোর ঘুরে যায়। মানুষের কাছে অ্যাপেল হয়ে ওঠে একটি পরিচিত ব্রান্ড। কিন্তু এর ঠিক পরের বছর অর্থাৎ 1985 সালে অ্যাপেল এর CEO John Sculley এর সাথে বিরোধ দেখা দেয় এবং বোর্ড অফ ডিরেক্টরস অফ স্টিভ জবস্ কে কম্পানি ছাড়া করেন। সত্যি ভাবতে অবাক লাগে যে নিজের তৈরি করা কোম্পানি থেকে এই মহান ব্যক্তিকে এভাবে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। স্টিভ জবসের এভাবে কোম্পানি ছেড়ে দেওয়াটা মটেই লাভজনক ছিল না। তার অ্যাপল ছেড়ে আসার পরেই কোম্পানিটি ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইসিসের পড়ে এবং এর প্রোডাকশন রেট নিচে নামতে থাকে। অন্যদিকে স্টিভ জবস অ্যাপল ছাড়ার পর নিজের আর একটি কোম্পানি খুলে বসেন যার নাম দেন নেক্সট।
নিক্সট থেকে তিনি মূলত বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ডিভাইস তৈরি করতে থাকেন। একইসাথে নেক্সট স্টেপ, ওপেন স্টেপের মতো সফটওয়্যার গুলি তার হাতে তৈরি হয়। নেক্সট সিকিউরিটির সফটওয়্যার গুলি ছিল মূলত ম্যাক অপারেটিং এর বিল্ডিং ব্লক। খুব অল্প সময়ের মধ্যে নেক্সট এর প্রডাক্ট খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অন্যদিকে অ্যাপেলের সুনাম ধিরে ধিরে মাটিতে নেমে আসে। কোন উপায় না দেখে অ্যাপল তখন নেক্সট কিধে নেয়। আর এগ্রিমেন্ট অনুসারে স্টিভ জবস আবার ফিরে আসেন তার নিজের তৈরি কোম্পানি অ্যাপলে। স্টিভ জবস অ্যাপেলে ফিরে আসার পরপরই সমস্ত প্রোডাকশন লাইন তিনি পরিবর্তন করে ফেলেন। তিনি একে একে বাজারে নিয়ে আসেন imac G3, mac os x, itunes এবং iPod এর মত প্রোডাক্ট। এর সবের মধ্যে iPod হয়ে ওঠে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আর এরই সুবাদে অ্যপেলের সুনাম হয়ে আকাশচুম্বী। 2007 সালের অ্যাপল রিলিজ করে অ্যাপল তাদের কোম্পানি তৈরি প্রথম স্মার্টফোন iPhone 3 । এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি অ্যাপলকে।অ্যাপেল হয়ে ওঠে সেরাদের সেরা। আর এ জন্যই পৃথিবী জুড়ে অ্যাপেলের এত সুনাম। আর এর প্রোডাক্ট ব্যবহারকারীরা হয়ে উঠেছেন অভিজাত শ্রেণীর একটি অংশ।
আরও পড়ুন: সফটওয়্যার কি, কত প্রকার, কীভাবে কাজ করে?
যাইহোক এবার চলুন অ্যাপ এ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।অ্যাপল লোগো হয়ত অনেকেরই বেশ কৌতূহলের বিষয়। অনেকে হয়তো প্রশ্ন করেন যে কি সম্পূর্ণ অ্যাপেলের না দিয়ে কেন অর্ধেক খাওয়া অ্যাপেল লোগো হিসেবে ব্যবহার করা হলো। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে অ্যাপেলের লোগো ডিজাইনের শুরুতে তারা লোগ হিসেবে বেছে নেন এটিকে।#₹&# যাতে বিজ্ঞানী নিউটন আপেল গাছের নিচে বসে আছেন কিন্তু এই লোগোটি পরে বাতিল করা হয়। কারন লোগোটি ছোট অবস্থায় বোঝার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই লোগো হিসেবে বেছে নেওয়া হয় অ্যাপেলকে কিন্তু একটি সম্পূর্ণ অ্যাপেলের লোগোকে একেবারে ছোট অবস্থায় চেরি ফলের মতো মনে মনে হয়।
তাই আধ খাওয়া অ্যাপেলকে চূড়ান্ত লোগো হিসেবে বাছাই করা হয়। যেটি সব অবস্থা তাতেই স্পষ্ট যে এটি একটি অ্যাপেল এর লোগো। আপনি হয়তো খেয়াল করলে দেখতে পাবেন যে আসলে অধিকাংশ অ্যাডভার্টাইজমেন্ট লঞ্চ করা হয় সকাল 9 টা 41 মিনিটে। অ্যাপলের প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপনি ঠিক এই সময়ে মিডিয়াতে প্রথম প্রচার করা হয়। এর কারণ হলো 2007 সালের 9 জানুয়ারি সকাল 9 টা 41 মিনিটে স্টিভ জবস প্রথম আইফোন লঞ্চ করেন যা ছিল কোম্পানির জন্য একটি বড় সাকসেস। আর সে সফল্য ধরে রাখতেই অ্যাপেলের সবকিছুতেই সকাল 9 টা 41 মিনিটে আশেপাশেই লঞ্চ করা হয়। অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের সবাই হয়তো গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর সঙ্গে পরিচিত আছেন আছে এটিকে পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর মত যে ভয়েস কমান্ড দিয়ে আপনি বিভিন্ন কাজ করাতে পারেন। আর ঠিক একইভাবে অ্যাপেল বা আইফোন ব্যবহারকারীরা পরিচিত আছেন siri এর সাথে যা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো একটি পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্ট। কিন্তু ভাবার মতো বিষয় হল এখন থেকে আপনি সিরিকে যা কিছু বলবেন একটু বুঝেশুনে বলবেন কারণ সিরিকে বলা যাবতিয় কথাগুলি সার্ভারে রেকর্ডিং থাকে এবং একজন অপারেটর ম্যানুয়ালি তা এনালাইসি করেন এবং এতথ্য প্রায় দুই বছর জাবং অ্যাপেলের সার্ভারে জমা থকে।তাই ভুল করে siri কে নিজের গোপন কিছু বলে বসবেন না। কারণ আপনার কথায় শুধুমাত্র ফোন নয় অন্য কেউ শুনছেন এই বিষয়টি যদি আপনার কাছে অযৌক্তিক মনে হয় তবে একটু সিরির লাইসেন্স এগ্রিমেন্ট পড়ে দেখতে পারেন। সেখানে স্পষ্ট ভাবে আপনার কথা রেকর্ডের বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। অ্যাপেলের সবকিছু যে সবসময় বাজারের রাজত্ব করেছে তা কিন্তু নয় অনেকে হয়ত জানেনা না যে অ্যাপেল একটি গেমিং কনসোল তৈরি করেছিল। 1995 সালে অ্যাপেল একটা গেমাং কন্সোল বের করে যার নাম দেওয়া হয় Apple Pippin। শুধুমাত্র জাপান এবং আমেরিকায় এই প্রোডাক্ট লঞ্জ করা হয়।
ওই সময় Sony PlayStation, Sega Saturn, Mintendo সাথে Apple Pippin এর কম্পিটিশন ফলে পিপিন শুধু ফ্লপ নয় চরম ভাবে অসফল হয়। 1995 সালে সময়কালেই এটির দাম রাখা হয় প্রায় 599 ডলার। আর বাজারে 42000 কপি বিক্রি করতে পারে। 1995 সালে অ্যাপেল পিপিন তৈরি করা সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অ্যাপেলের ফ্যানরা সবসময়ই একটু এক্টিম হয়ে থাকেন। আর আপনা যদি অ্যাপেল ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তবে নিজেকে দিয়ে বিষয়টা বাজিয়ে দেখতে পারেন। জাপানিজ একজন আইফোন ফ্যান আইফোন 6 লঞ্চ হওয়ার আগে আপেল স্টোরের সামনে অপেক্ষা রত অবস্থায় বসে থাকেন। তিনি অপেক্ষা শুরু করেন iPhone 6 লঞ্চ হওয়ার প্রায় ছয় মাস আগে। যদি দীর্ঘ সময় তিনি আপেল স্টোরের সামনে বসে থাকেননি কিন্তু তারপরও একটি মোবাইল ফোনের জন্য এভাবে অপেক্ষারত অবস্থায় বসে থাকা যেন এক্টিম ফ্যানরাই পারে।
আরও পড়ুন:৩টি গোল্ডেন নিয়ম YouTube এ সফলতা পাওয়ার, যা অনেকেই জানে না !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন