ওয়েব সিরিজ টা দেখে কেউ প্রশ্ন তুলেছেন এটা ছোটখাটো অসঙ্গতিগুলো নিয়ে। কেউ বা সিরিজটিতে অতিরিক্ত তামিল ভাষার ব্যবহারে বিরক্ত হয়েছেন। তবে অন্য যে বিষয়ে দর্শকরা দ্বিমত হন না কেনো। এক জায়গায় এসে মিলে গেছে তাদের সবার দৃষ্টি ভঙ্গি। আর তা হলো এই সিরিজের রাজি নামের চরিত্র তার অসামান্য অভিনয়ের। আজ আমরা বলতে চলেছি এই দুর্ধর্ষ চরিত্রটির পিছনে থাকা এক অসাধারণ অভিনেত্রীর কথা। যিনি হয়তো আজ সাফল্যের শিখরে বসে রয়েছেন। কিন্তু একটা সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে হয়ে এত দূর আসা টা নেহাত সহজ ছিল না তার পক্ষে।
মেয়েটির জন্ম হয়েছিল তামিলনাড়ুর চেন্নাই শহরে। দিনটা ছিল 1987 সালের 28 এপ্রিল। শৈশবের খানিকটা সময় আলাপোজায় থাকবার পর। তার পরিবার চেন্নাইয়ের পাল্লাভারামে চলে আসে। সে সময় তাদের আর্থিক অবস্থা যে বিশাল সচ্ছল ছিল এমনটা নয়। ছোট থেকেই ভীষণ মেধাবী ছিল মেয়েটি স্কুল-কলেজ সর্বত্র একেবারে প্রথম সারির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নাম থাকত তার। কিন্তু মেয়েটি যখন কলেজে পড়ে সে সময় খুব দ্রুতই তাদের আর্থিক অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতে লাগল।
এই সময় মেয়েটির কোন এক বন্ধু তাকে পরামর্শ দেয় মডেলিং করার। যাতে কিছুটা হলেও সে নিজের পরিবারে সাহায্য করতে পারে। মেয়েটির কাছে ভাবার সময় ছিল না খুব বেশি। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম মডেলিং করতে শুরু করে। এমন একটি ছোট ব্র্যান্ডের জন্য মডেলিং করার সময় বিখ্যাত ফিল্ম ডিরেক্টর রবি বর্মনের চোখে পড়ে যায় সে। রবি সে সময়ে নিজের প্রথম সিনেমার জন্য একদম আনকোরা নতুন মুখের অভিনেত্রী খুঁজছিলেন। মেয়েটিকে দেখামাত্র নিজের ফিল্মের অফার দিয়ে বসলেন। তিনি আচমকা এমন অফার স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল মেয়েটির কাছে। সে রাজি হয়ে যায়। মাসকুইন কাবেরী নামের একটি সিনেমার কাজ 2007 শুরু হয়ে গেলেও বাজেটের সমস্যা দেখা দিতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেল কাজ কিন্তু মেয়েটিকে থেমে থাকতে হয়নি। তার অভিনয় দক্ষতার কথা ততদিনে ইন্ডাস্ট্রি অনেকেই জেনে গেছিলেন। ফিল্ম ডিরেক্টর গৌতম মেনন ইয়ে ম্যায়া চ্যেসাভি(Ye Maaya Chesave) সিনেমাটি অফার করে মেয়েটিকে।
আরও পড়ুন-জুনিয়ার এনটিআর নন্দামুরি হরিকৃষ্ণার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান, সিনেমাকে হার মানাবে এনার পরিবার !
এই সিনেমাটি হয়ে দাঁড়ায় তার জীবনের ডেবিউ ফিল্ম। নিজের প্রথম কাজ ভালো হোক এমন কে না চায়। তবে এই সিনেমাটি রিলিজ সাথে সাথে সুপারহিট হয়ে যাবে এমনটা হয়তো কেউ ভাবেনি। প্রথম সিনেমাতেই মেয়েটির জিতে নিল ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। এরপর আর থেমে থাকার দরকারই হয়নি তার। রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে গেছিলেন সামান্থা আক্কিনেনি( Samantha Akkineni )। কিছুসময়ের মধ্যেই এনটিআর জুনিয়ার, কিংবা মহেশ বাবুর মতো বিখ্যাত একসাথে কাজ করতে দেখা গেল তাকে। 2012 সালে ইগা এবং নিথানে এন প্রভাস্থাম এই সিনেমা দুটির জন্য একইসাথে তামিল এবং তেলুগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সেরা অভিনেত্রী নির্বাচিত হন। বর্তমানে সামান্থা আক্কিনেনি কে সাউথ ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যতম বেস্ট অ্যাক্ট্রেস দের মধ্যে গোনা হয়। তবে তার জনপ্রিয়তা আরো একধাপ এগিয়ে যায় সম্প্রতি রিলিজ হওয়া ওয়েব সিরিজ 'ফ্যামিলি ম্যান' এর কারণে। সকলের প্রিয় এই অভিনেত্রীকে দেখতে পাওয়া যায় রাজলক্ষী শেখনন নামের একটি শ্রীলংকার তামিল মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকায়।
সামান্তা যে এখানে ভালো অভিনয়ের জন্য চর্চায় উঠে এসেছেন তাই নয় তার অভিনীত রাজ লাক্সমি ওরফে রাজি চরিত্রটি এক লহমায় ভেঙে দেয় ভারতীয় সিনেমার চিরাচরিত লাস্যময়ী অভিনেত্রীর ধারণাটা। সিরজটির শেষ দিকে যখন সামান্থা বলে ওঠেন মেরি কাহানি সাজ হ্যে। তখন রীতিমত গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে দর্শকদের। একটি ধনুক নাও সামান্তা আক্কিনেনি আর এভাবেই একের পর এক জট ধরা চিন্তাভাবনাকে ভেঙে এগিয়ে চলুন নিজের লক্ষ্যে।
Cradit-UltiMad Media YouTube/ Sujoyneel
আরও পড়ুন-মা হিসেবে কেমন সানি লিওনি? সানি লিওনের আনটোল্ড স্টোরি !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন