একজন রিক্সা চালান শুনলেই নাক সিঁটকে ফেলি আমরা। অথচ একজন বিমান চালান শুনলে সম্ভ্রমের সাথে তাকাই। আমাদের কি উচিত নয় সমাজের এই ভেদাভেদ টুকু দূর করার। কথাটা যার দিক থেকে ভেসে আসে তার বয়স বড়জোর 23। পরনে জোম্যেটোর ট্যাগ লাগানো লাল পোশাক। হাত রাখা রয়েছে নিজের স্কুটির হ্যান্ডেলের ওপর অন্য হাতে শক্ত করে ধরে রয়েছে হেলমেট। যেন একটু পরেই যুদ্ধক্ষেত্রে নামতে চলেছেন তিনি। আর যুদ্ধ নয় বা কেন? ফুট ডেলিভারি পেশায় কজন নারী নেমেছেন এখনো পর্যন্ত। মেয়েটির নাম সংগীতা সরকার বাড়ি বেলঘড়িয়া। বর্তমানে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। নাটক নিয়ে তিনি পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স করছেন সেখানে। বাবা কলকাতা পুলিশের কর্মচারী। সঙ্গীতার বাড়ির আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ তাহলে কেন এই কাঠফাটা গরমের মধ্যে স্কুটি নিয়ে বাড়ি বাড়ি খাবার ডেলিভারি করছেন সঙ্গীতা?
কারণ তিনি শুধুমাত্র নাটক নিয়ে পড়াশোনা করছেন তাই নয়, তিনি শম্ভু মিত্রের বহুরূপী নাট্য দলের সদস্যা। সারাবছর নানা জায়গায় তাদের দলের শো চোললেও বর্তমানে সে সবকিছুই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। আর এই জন্য দায়ী কোভিদ 19 নামের মারণ রোগ। কোরণার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ফলে যখন রাজ্যবাসী নাজেহাল অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তখন খানিকটা হলেও এই সংক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে রাজ্যব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। ফলে আরো বহু অস্থায়ী পেশার মতোই বন্ধ হয়ে যায় নাটকের শো। অসহায় হয়ে পড়ে নাট্যকর্মীরা। আগের পুজি ভেঙে কিছুদিন চললেও খুব বেশি দিন টানা সম্ভব হবে না তাদের কারও পক্ষে। এই কথা মাথায় রেখে এগিয়ে আসেন সঙ্গীতা এবং তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও বেশকিছু জন বন্ধু। সকলে মিলে নাট্যকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তৈরি করেন একটি তহবিল।
আরও পড়ুন-মেদিনীপুরের সাধারন ছেলেটা আজ সারা বাংলার ক্রাশ !
এই সময় সঙ্গী তা ঠিক করেন তিনি ফুড ডেলিভারীর কাজ শুরু করবেন যেমন ভাবা, তেমন কাজ। জোমেটোর পোশাক গায়ে দিয়ে স্কুটি চেপে তিনি বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। প্রতিদিনই যখন তিনি কোন দোকান থেকে খাবার পিকআপ করেন দেখেন বহু মানুষ একজন মেয়েকে ফুড ডেলিভারীর কাজ করতে দেখে বিস্মিত চোখে তাকাচ্ছে। যেসব বাড়িতে তিনি খাবার নিয়ে যান ওখানে এমন বহু অবাক দৃষ্টি সম্মুখীন হতে হয় তাকে। তবে শুধু বাইরের লোকেরা নয়, আত্মীয়দের কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন বাবার নিশ্চিত চাকরি থাকা সত্যেও মেয়ের এমন কাজ করার প্রয়োজনীয়তা কি। এমনকি বন্ধুদের কারও কারও কাছ থেকেও কটাক্ষে সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। তবে এসব শুনে পিছিয়ে পড়লে তো আর সঙ্গীতা চলবে না। কারণ এই ফুড ডেলিভারীর কাছ থেকে যে টাকা তিনি উপার্জন করেন তার একটুখানি নিজের জন্য রেখে, বাকি সবটা দিয়ে দেন নাটক কর্মীদের জন্য তৈরি ওই তহবিলে। ছোট থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও এগিয়েছিলেন সঙ্গীতা। বেলঘড়িয়া অ্যাথলেটিক্স ক্লাবে 100 এবং 200 মিটার দৌড়ের চর্চা করেছেন বহু দিন।
স্কুটির পাশাপাশি বাইক বেশ দক্ষতার সাথে চালাতে পারেন তিনি। সঙ্গীতা স্বপ্ন দেখেন লক ডাউন মিটলেই বাইকে চড়ে ভুটান ঘুরতে যাবেন। সঙ্গীতা জানিয়েছিল কিছু মানুষ যেমন বিপক্ষে গেছিল, তেমনি বউ মানুষ পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাই এই মুহূর্তের জন্য ভালো টুকু নিয়েই এগিয়ে যাওয়া যাক। ভালো থাকুন সংগীতা সরকার এভাবেই এগিয়ে যান আরো বহুদূর আপনাকে দেখে অনুপ্রেরণা পাক আগামী প্রজন্ম।
Cradit-UltiMad Media YouTube/ Sujoyneel
আরও পড়ুন-স্টান্টম্যান ছেলে থেকে বলিউডের সিঙ্ঘম সুপারস্টার! (Ajay Devgan Life Story)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন