পার্টনার একটা হোটেলে সামান্য মাইনে চাকরি করতো ছেলেটা। আর সেখানেই শুটিংয়ের কাজে কয়েকদিনের জন্য থাকতে এসেছিলেন বিখ্যাত বলিউড অভিনেতা মনোজ বাজপাই। মনোজ ওখান থেকে চলে যাওয়ার পর ছেলেটা তার ফেলে যাওয়া চপ্পল আগলে রেখেছিলে ইকলাব্বের গল্পের মত। সে হয়তো জানতো, কোন একদিন একই সিনেমায় একই ফ্রেমে কাজ করার সুযোগ পাবে। আর হলোও তাই অনেক লড়াই সংগ্রামের পর একদিন ছেলেটি সুযোগ পেল। একই সঙ্গে এক সিনেমায় কাজ করার। কার কথা বলছি চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ছেলেটা জন্ম এক মধ্যবিত্ত পন্ডিত পরিবারের। অর্থকষ্ট নিত্যদিনের সঙ্গী। নিজেদের গরু তো আছে, কিন্তু হাল চালানোর জন্য বলদ নেই। অন্যের থেকে তা ধার করে এনে, চাষের কাজ চালায় ছেলেটির বাবা। তাই ছেলের ছোট থেকে ইচ্ছে একটা ট্রাক্টর কিনবে। বাবার পাশে দাঁড়াবে পন্ডিত হওয়ার সুবাদে এপাড়া ওপাড়া থেকে পুজোর জন্য ডাক পড়ে বাবার। একদিন ডাক পড়লো পাশের গ্রামের একটা সিনেমা হল উদ্বোধনের পুজোয়।
বাবার সহকারি হয়ে সাথে গেল সেও। এই প্রথম তার সিনেমা হল দেখা। যদিও অভিনয় বলতে তখন গ্রামের নাটকে মেয়েদের নাচ ছাড়া কিছুই জানতো না সে। স্বপ্ন বলতে একটাই নিজেদের একটা ট্রাক্টর কেনা। যাতে অন্যের বলদ ধার না নিতে হয়। তাই হাই স্কুলের পর পড়াশোনা ছেড়ে মঞ্চাভিনয় শুরু। যাতে হাতে কিছু টাকা আসে। সেখানেই তাকে একজন বলল নেশনাল স্কুল অফ ড্রামা ভর্তি হওয়ার কথা। ওখান থেকে পাশ করলে নাকি অভিনয় করে আরো টাকা পাওয়া যাবে। সেই তাগিদেই আবার গ্রাজুয়েশনের পড়া শুরু তার সাথেই শুরু হলো কঠিন সময়। পয়সা রোজগারের তাগিদে এসে জয়েন করলো একটার পর একটা চাকরি। কখনো স্টিল ফ্যাক্টরি লেবার, তো কখনো হোটেলের রুম সার্ভিস বয়ের কাজ। এভাবেই লড়তে লড়তে শেষ হলো পড়াশোনা।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সে ছুটে চলল নেশনাল স্কুল অফ ড্রামা হয়ে স্বপ্নের শহর মুম্বাইতে। ভাবলো সিনেমায় অভিনয় করলে বোধহয় হাতে দেশ টাকা আসবে অভাব ঘুচবে। কিন্তু হলো উল্টোটা, ছোট শহর থেকে মাঝারি দেখতে একটা ছেলেকে কেউ পাত্তাই দিল না। দিনের পর দিন কয়েক সেকেন্ড বা 1-2 মিনিটের রোলে অভিনয় করেও টিকে রইল সে। সুযোগ খুজতে লাগলো নিজেকে প্রমাণ করার। সুযোগ এলো গ্যাঙ্গস অফ ওসিপুর সিনেমায় আর সেখানে করা তার অভিনয় তাক লাগিয়ে দিল সবাইকে। ওই শুরু। গ্যাঙ্গস অফ ওসিপুর, নউটন, ব্যারেলি কি ব্যারফি, স্ত্রী মতো সিনেমা হোক কিংবা মির্জাপুর, সিক্রেট গেমসের মত সিরিজে সর্বোচ্চ নিজেকে উজাড় করে দিলেও বিহারীরা চট্টগ্রাম থেকে উঠে আসা এই মানুষটা। মানুষটার নাম পঙ্কজ ত্রিপাঠী।
আরও পড়ুন:Red Notice রিভিউ, ডোয়াইন জনসন-গাল গ্যাডট-রায়ান রেনল্ডস ফিল্ম অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতি এবং কম বিতরণ
যেকোনো ধরনের চরিত্রে জার নৈপুণ্য এড়িয়ে যেতে পারবেন না কেউই। তার অভিনয় লেগে থাকা মাটির গন্ধে ছড়িয়ে থাকে সেসব শীতের রাত। যখন বাবার সাথে তিনি বেরিয়ে পড়তেন। ভোরের ট্রেন ধরতে ব্যাগ ভর্তি চাল আনাজ নিয়ে ট্রেনে চড়তেন পার্টনার উদ্দেশ্যে। সেকেন্ড ক্লাস কামড়ায় সেই কাঠের বেঞ্চ টিমে টিমে আলো তাকে যে এই অর্জিত সাফল্যের উচ্চতায় পৌঁছে দেবে তা হয়তো তখনও জানতেন না। নিজের দীর্ঘ অভিনয় জীবনে কাজ করেছেন প্রায় 40 সিনেমা এবং প্রায় 60 টি টেলিভিশন শো তে। শুধু তাই নয় জিতেছেন জাতীয় পুরস্কার ও। সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যাওয়া এই অভিনেতা হয়ত জানতেন বেলা সান্দের সেই ছোট্ট ছেলেটা নিজের পরিশ্রমের হয়ে উঠবেন সিনেমা জগতের বহুল পরিচিত নাম। তিনি বিশ্বাস করেন নদী গভীর হলে এবং তা পেরোবার সাঁকো না থাকলে মানুষ প্রয়োজনের সাঁতার শিখে যায়। আমরা যারা জীবনে বড় হওয়ার জন্য সমানে লড়াই করে চলেছে পঙ্কজ ত্রিপাঠীর জার্নিটা তাদের কাছে একটা গাইড বুক এর মত। তার এই লড়াইটা আমাদের চোখে চোখ রেখে লড়তে শেখায়.
আর শেখায় কিভাবে তারকা হওয়ার পরেও মাটির কাছাকাছি থাকতে হয় ভালো থাকুন ত্রিপাঠী আমাদের সকলের প্রিয় কালীন ভাইয়া।
Cradit- UltiMad Media(Sujoyneel)/youtube
আরও পড়ুন:মা হিসেবে কেমন সানি লিওনি? সানি লিওনের আনটোল্ড স্টোরি!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন