একটা সময়ে তার পরিবারকে মাত্র 10 টাকায় সারা দিনের খরচ চালাতে হতো। আর আজ সেই মানুষটাই 45 কোটি টাকার মালিক। সেই মানুষটাই আজকে ভারতবর্ষের অন্যতম সফল ক্রিকেটার। কিন্তু এই উত্থান একদিনে হয়নি। দিনের পর দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অভাবের সাথে লড়াই করে, শরীরের সমস্ত শক্তি নিংড়ে নেওয়ার ট্রেনিং করে আজ তিনি এই জায়গায়। চলুন শুনে নেওয়া যাক সেই হার না মানা যোদ্ধার কাহিনী।
উনার জন্ম 1988 সালের ডিসেম্বরে। গুজরাটের নবগায় ঘাট এলাকায়। ভীষণ কঠিন পরিস্থিতি দেখে বড় হওয়া এই ক্রিকেটারের বাবা সে সময়ে চাকরি করতেন বেসরকারি সংস্থার চৌকিদার হিসেবে। মা ছিলেন হাসপাতালে নার্স। সেই হাসপাতাল থেকে দেওয়া একটা ছোট্ট ঘরেই পাঁচজন মিলে থাকতেন একসাথে। বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে আর্মিতে যোগদান করবে। কিন্তু পড়াশোনায় মধ্যমেধার এই ভবিষ্যৎ তারকা নিজের অনেকটা সময় কাটাতেন খেলার মাঠে একজন দক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে। মাও চাইতেন ছেলে ক্রিকেট হোক।
পাড়ায় তার খেলা দেখে তাকে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে স্থানীয় পুলিশ অফিসার মাহেন্দ্র সিং চৌহান। পেশায় পুলিশ হলেও ভদ্রলোক ছিলেন ক্রিকেট ভক্ত । পাড়ার ছেলেদের তিনি ক্রিকেট শেখাতেন কম খরচে। উনার বয়স তখন 16 একটা দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল মায়ের। যে মাসে প্রতিদিন খেলতে যাওয়ার আগে নিজের হাতে খাবার তৈরি করে দিত, যে মা তাকে মানসিক দৃঢ়তা প্রদান করত সবসময়। সেই মায়ের চলে যাওয়ায় ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার এই সময় মানসিকভাবে ওনাকে সামলে নেন বড়দিদি নয়না। বাধ্য করেন ক্রিকেট চালিয়ে যেতে। সে সময় পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন দিদি। সংসার চলত তারই উপার্জনে, বহুকষ্টে। বেশকিছু রাত না খেতে পাওয়া একটি ছেলের পক্ষে ক্রিকেটের মত এত খরচসাপেক্ষ খেলা চালিয়ে যাওয়া ছিল ভীষণ কঠিন। কিন্তু শুধুমাত্র মৃত মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে অন্যার ব্যাট, প্যাড ধার করেও মাঠে নামতেন তিনি।
আরও পড়ুন:সাদিও মানের, এক ফুটবলারের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার গল্প !
একটার পর একটা হার্ডেল পেরিয়ে অবশেষে অনূর্ধ্ব 19 অলরাউন্ডার হিসেবে ভারতীয় দলে জায়গা করে নিলেন তিনি। সেই দলের অধিনায়ক এর নাম বিরাট কোহলি। ওই বিশ্বকাপ লেখা হলো ভারতের নামে অলরাউন্ডার সহ অধিনায়ক হিসেবে একটা বড় সফলতা যোগ হলো উনার নামের পাশেও। সে বছরই এল একটা সুখবর শ্রীলংকার সাথে টেস্ট সিরিজে সিনিয়র টিমে জায়গা হল তার। প্রথম বার প্রথম ম্যাচেই করলেন অনবদ্য 60 রান। ব্যস আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এরপর ভারতীয় টেস্ট দলে ডেবিউ। 2012 সালে আইপিএলে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার মুকুটের জুড়তে থাকলেও একের পর এক সাফল্যের পালক। মানুষটার নাম রবিন্দ্র সিং অনিরুদ্ধ সিং জাদেজা। ওনার নামের পাশে আছে একমাত্র ভারতীয় হিসেবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনটি ট্রিপল সেঞ্চুরি এবং টেস্ট ক্রিকেটে তালিকায় অনিল কুমলের পর দ্বিতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে এক নম্বর রেংকিং এর খেতাব। আর তিনি সেই তৃতীয় ভারতীয় অলরাউন্ডার.
যিনি 2000 রান এবং 150 উইকেট এর অধিকারী। এছাড়াও তার অনবদ্য ফিল্ডিং প্রতিভা তাক লাগিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। মায়ের মৃত্যু খারাপ আর্থিক অবস্থার মতো, একের পর এক বাধা সত্ত্বেও রবীন্দ্র জাদেজা থেমে যাননি কোনদিন। কারণ উনার নিউজার্সিতে ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলতেন নামার স্বপ্ন ও জেদ তাকে থেমে যেতে দেয়নি। সদা হাসি মুখ স্যার জাদেজা বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতের হয়ে খেলতে নামেন। তার স্ট্রাগেল তাকে প্রতিদিন ক্রমশ শক্তিশালী করে তুলেছে। যে শক্তি আজকে বিপক্ষ শিবিরকে গুড়িয়ে দিতে জানে এভাবেই মাথা উঁচু করে বাঁচুন এবং বাঁচতে শেখান।
Cradit-UltiMad Media YouTube/Sujoyneel
আরও পড়ুন:মহেশ বাবু, আসল পরিচয় কি জানা আছে ?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন