তালিবান পরিবর্তন করে দিলো আফগানিস্তানের নাম। 3কোটি 80 লক্ষ একটি গুরুত্বপূর্ণ জনগণের দেশ আফগানিস্তান আজকের সময় নিয়ন্ত্রণ করেছে তালেবান। ধীরে ধীরে এই আফগানিস্তানে যে পরিচয় ছিল, যে পতাকা ছিল  সমস্ত কিছু পরিবর্তন হচ্ছে তালিবানের হাত ধরে। যে আফগানিস্তানকে আমরা জানতাম যেখানে আশরাফ গানী প্রেসিডেন্ট ছিলেন।  

আফগানিস্তানের আনুষ্ঠানিক নাম যেটি,  সেটি হল Islamic republic of Afghanistan। যেমনভাবে আমরা সংক্ষেপে বলে থাকি ইন্ডিয়া কিন্তু যার আসল নাম, অফিশিয়াল নাম সেটি হল republic of India। তার সাথে সাথে রাশিয়ার যে অফিশিয়াল নাম আছে সেটি হল Russian federation। আর ঠিক তেমনভাবেই আফগানিস্তানের অফিসিয়াল নাম Islamic republic of Afghanistan আর এটি রাখা হয়েছিল আমেরিকার অধীনে আসার পর 2004 সালে। যার অবসান হলো 2021 এর আগস্টে। 



আর এরপর তালিবানরা এই নাম পরিবর্তন করে দিল আর এখন আফগানিস্তানের নতুন নাম Islamic Emirate of Afghanistan‌। শুধু তাই নয় এদের যে প্রতীক (Emblem) ছিল সেটিও পরিবর্তন হয়ে গেছে। সবকিছু আরো বেশি ধার্মিক বানানো হচ্ছে। আফগানিস্তানের 2004, 9 আগস্ট থেকে 2013,19 আগস্ট পর্যন্ত একটি জাতীয় ফ্লাগ ছিল। তার পর তার অল্প কিছু পরিবর্তন করে পতাকার মাঝের লগোটিকে বড় করা হয়। যেটা 2013 এর 19 আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত যেটা আমরা দেখে এসেছি। তবে যদি আপনি দেখেন UN council এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের বর্তমান ফ্ল্যাগের মান্যতা দিচ্ছে। তবে তালিবানরা প্রকাশ করেছে তাদের নতুন ফ্ল্যাগ। 



আফগানিস্তানের যে প্রেসিডেন্ট ছিলেন আশরাফ গানি তিনি পালিয়েছেন  আমেরিকায়। তালিবান ঘোষণা করেছে আফগানিস্তানের নতুন যে প্রেসিডেন্ট হবে তিনি হলেন মোল্লা আবদুল ঘানি বারাদার(Mullah Abdul Ghani Baradar) । যার ইতিহাস খুব লোমহর্ষক। কারণ এই ব্যাক্তির সম্বন্ধে যদি আপনি অল্প কিছু অনুসন্ধান করেন তবে পেয়ে যাবেন, 2010 এর কাছাকাছি ISI এই ব্যক্তিকে অ্যারেস্ট করে। আর তারপরে আট বছর পাকিস্তানি জেলে  থাকে। 8 বছর পর 2018 সালে আমেরিকা অনুরোধ করে পাকিস্তানকে যে একে ছেড়ে দেওয়া হোক। তারপরই আমেরিকার অনুরোধে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমিরকা এর কারণ দেখায় তাদের কোনো উপায় ছিল না কারণ আমেরিকান কিছু সেনা তালিবানদের অধীনে ছিল।

 



কিন্তু বিশ্ব রাজনীতি কোন না কোন দিক দিয়ে দেখছে যে আমেরিকার হাত আব্দুল ঘানি ব্রাদার মাথায় ছিল। যার জন্য এত তাড়াতাড়ি এত বড় সাফল্য তালেবানদের। তবে এটি শুধুমাত্র একটি থিওরি এর কোন বাস্তব ভিত্তি এখনো পর্যন্ত নেই। 



তাহলে এখানে যে প্রেসিডেন্ট পদে দেওয়ার বসবেন মোল্লা আবদুল ঘানি ব্রাদার ইনি যে নাম পরিবর্তন করেছেন এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তালিবান প্রথম ক্ষমতায় এসেছিল 1996 এ আর ক্ষমতায় ছিল 2001 সাল পর্যন্ত। যখন পর্যন্ত নাইন-ইলেভেন হয়নি। আমেরিকার নাইন ইলেভেন ঘটনার পর আফগানিস্থানে আক্রমণ করে দেয় ইউএসএ সেনা । আর্থিক ওই সময় 1996-2001 এও নাম ছিল ইসলামিক এমরেট অফ আফগানিস্তান। এনাদের সিম্বল, ফ্ল্যাগ, ন্যাশনাল অ্যানথেম সবকিছুই ভিন্ন ছিল। আর তালিবানের বক্তব্য তালিবান কুড়ি বছর পেছনে পৌঁছে গেছে।  1996-2001 পর্যন্ত তালিবান দখল করেছিল আফগানিস্তানের 90 শতাংশ। কারণ বাকি 10 শতাংশ ছিল কারণ আফগানিস্তানের নর্থদান এরিয়ায় তখন করে বসেছিলেন নর্থদান অ্যালায়েন্স যার মধ্য ছিল রাশিয়া, আমেরিকা, ইন্ডিয়া, ইরান বিভিন্ন দেশের সেনারা মিলে আফগানিস্তানের নর্থদান পাটকে তালিবানদের হাত থেকে আলাদা রাখত।

 


এখন একটাই কথা তালিবানরা তো আফগানিস্তান দখল করে নিল কিন্তু সব দেশকি তাদের মান্যতা দেবে? এখানে সব কথা বলতে গেলে একটা সমাধান সেটি হল UN security council এর হাতে অর্থাৎ বাংলায় যাকে বলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের। ওখানে কেমন ভোটিং হবে কোন কোন দেশ তাদের কে মান্যতা দেবে সেটা খুব জরুরী। 16আগস্ট UNSC এ জরুরী মিটিং ডাকা হয়। ইন্ডিয়া নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হয় মিটিংটি পরিচালনা করে। আর সেখানে বিভিন্ন দেশ ও তাদের মতামত জানায়‌  তালিবানকে মাথায় রেখে। কিছু দেশ আছে যারা প্রস্তুত তালিবান কে মান্যতা দিতে যেমন চায়না তো সরাসরি বলে দেয় আমরা তালিবান কে মানতে কোন অসুবিধা নেই। আমরা তালিবানদের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই। ইউনাইটেড কিংডম অর্থাৎ যাকে ইংল্যান্ড হিসেবে চিনি ‌ তাদের বক্তব্য আমরা তালিবান কে সমর্থন করি না বা মান্যতা দেইনা। আমরা অপেক্ষা করবো এবং দেখব তালিবানের কেমন আচরণ থাকে মানুষের প্রতি। আর ঠিক একই কথা শোনা যায় রাশিয়ার মুখেও। তাদের বক্তব্য এক বছরের মধ্যে বোঝা যাবে এই জঙ্গী সংগঠন গুলি কতটা সক্রিয় হয়েছে। আর তালিবান এখনো পর্যন্ত যেসব পরিবর্তন করেছে তা এখনও পর্যন্ত ইউ এন কাউন্সিল মান্যতা দেয়নি। । যে এটা আলাদা কথা চায়না ব্যক্তিগতভাবে এবং কিছু অন্যদেশ যেমন পাকিস্তান এদের সাথে মিলিত হয়ে দিতে পারে তাদের পরিবর্তিত পতাকা এবং প্রতিটি চিহ্ন কে সম্মতি।

 



শুধু পতাকা অথবা প্রতীক চিহ্ন পরিবর্তন হচ্ছে না পরিবর্তন হচ্ছে আফগানিস্তানের আইন ও। আফগানিস্তানের চালু হচ্ছে শরিয়াং আইন । শরিয়া আইন বহু দেশে আছে আপনারা জানবেন সৌদি আরব, পাকিস্তানের সংবিধানেও উল্লেখ আছে তারাও শরীয়ত আইন মেনে চলার চেষ্টা করে। আর তাদের সংবিধানে উল্লেখ আছে কোথাও না কোথাও তাদের সংবিধানের সাথে কুরআনের শরিয়া আইনের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেখানে এত কঠোর নিয়ম পালন করা হয় না। যতটা দেখা যায় সৌদি আরবে। শরীয়ত আইনে আলোচনা এই জন্যই হয় কেননা ‌ তালিবান শরীয়ত আইনের হাত ধরে প্রচুর পরিমাণে অত্যাচার চালায়।


আরও পড়ুন:হিরোশিমা দিবস ৬ই আগস্ট, একটি কলঙ্কিত দিন, যেখানে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কান্নার কেউ ছিল না!

তবে এখানে তালিবানদের বক্তব্য যে কিছুটা হলেও শরীয়ত আইন কে আমরা শিথিল করব। মহিলাদের পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবো না। মহিলাদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি থাকবে। তবে এখানে আরো বলে দেন তারা এখানে যেসব পড়ানো হবে সেগুলি ইসলামিক সিস্টেম এর মধ্য দিয়ে চলতে হবে। স্কুলে যাওয়ার সময় সম্পূর্ণ বোরখা দিয়ে ঢেকে যেতে হবে। সবথেকে বড় আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো যদি এই তালিবানি আইন কেউ অমান্য করে তাহলে তার শাস্তি হয় খুবই অমানবিক হয় তাকে মরতে হয় গুলির আঘাতে না হলে চাবুক দিয়ে বা লাঠি দিয়ে পেটানো‌ হয়। শেষমেষ বলাই যায় মানবাধিকার এর জন্য তালিবান একটি বিশেষ বড় হুমকি। 

তালিবান কাবুল দখলের আগে এবং পরে


তাছাড়া তালিবানদের যে মুখপাত্র তিনি যাই বলেন,  তাদের চেয়ে বিশিষ্ট বিশিষ্ট সদস্য যাদেরকে কোর মেম্বার বলা যায়। সব সময় তারাই মিডিয়ার সামনে আসে না। কোন কোন সময় তাদেরকে দেখা যায় তাদের কাছে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনারা কি শরিয়া আইন পুনরায় আনবেন আফগানিস্থানে? তাদের জবাব 'ইসলামিক আইন অবশ্যই আসবে আফগানিস্থানে, শুধু আফগানিস্থান নয় পুরো বিশ্বে'। তাহলে এই যে মতাদর্শ এটি ভয়ানক গোটা আধুনিক বিশ্বে। এটা ঠিক যে তাদের দেশে অর্থাৎ আফগানিস্থানে এর বাস্তবায়ন করছে তারা, তবে এরা আল-কায়দাসহ আরো ইসলামিক আতঙ্কবাদী দের যদি গোটা বিশ্ব দখল এবং শরীয়ত আইনের জন্য বলিদান দিতে থাকে সেটি হবে গোটা বিশ্বের কাছে একটি চিন্তার বিষয়।

আরও পড়ুন:চীন নিষিদ্ধ করলো ভারতীয় নাবিকদের, 21,000 চাকরি হারাতে হতে পারে !


সুত্র- Forbes, Hindusthan Times, 





Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন