র পর দুটি ব্যাসার্ধ প্রথমটি লেখা রয়েছে 85 আর পাশেরটায় 95। দিনটা 2021 সালের 7ই আগস্ট  ঘড়ির কাঁটা ঠিক পৌনে ছটা । সমগ্র ভারতবাসীকে নজর তখন টিভির পর্দায় আর ঠিক এরপর নাম ঘোষণা হল 2020 টোকিও অলিম্পিকের ভারতের হয়ে সোনার অন্যতম দাবিদার নীরাজ চোপড়ার। 

অলিম্পিকের সরকারি ওয়েবসাইটে নীরাজের কোচ জানিয়েছিলেন যে বয়সে নীরাজ তার কাছে প্রশিক্ষণ নিতে আসে এই বয়সের ছেলেরা সাধারণত 20 মিটার বর্ষা ছুটতে পারতো। কিন্তু নীরাজ প্রথম থ্রতেই 25 মিটার ছুঁড়ে দেয়। কোচ তখনই বুঝতে পারে এই ছেলেটির ভিতরে ক্ষমতা আছে। আর তারপর থেকে শুরু হয়ে ট্রেনিং। কোচের প্রচেষ্টা আর নিচের কঠোর ট্রেনিং এ নীরাজ পারদর্শী করে তোলে জাগলিন থ্রোতে । আর তারপর থেকে নীরজকে কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই খেলার মাধ্যমে একের পর এক সোনা নিজের ঝুলিতে তুলেছেন তিনি। 2016 সালে পোল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছেন নিরাজ। সেই প্রথম জুনিয়ার হিসেবে আন্তর্জাতিক পদক জয়। 

আর ওই বছরই সাউথ এশিয়ান গেমসে 84.23 মিটার জাগলিন ছুড়ে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক এনেছিলেন নীরাজ। টোকিও স্টেডিয়ামে ছেলেটার হাত থেকে জ্যাগলিনটি যখন উড়ে যাচ্ছে যখন রুদ্ধশ্বাসে বসে কোটি কোটি ভারতবাসী।
 


হরিয়ানার পানিপথে ছোট্ট একটি গ্রাম খান্ডারা সেখানেতো‌ সময় প্রায় থমকেই গিয়েছিল। প্রথম প্রচেষ্টায় জ্যাগলিন অতিক্রম করল 87.03 মিটার পথ। এর দ্বিতীয় প্রচেষ্টা এবার জ্যাগলিন 87.57 মিটার দুরে গিয়ে সবুজ ঘাসে গিয়ে বাধলো। আর তার সঙ্গী সৃষ্টি হলো নতুন ইতিহাস। 13 বছর পর প্রথম অলিম্পিক অ্যাথলেটিক্সে পদক পেলো ভারত। মুষ্টিবদ্ধ হাত নিল আকাশের দিকে করে দাঁড়িয়ে আছেন নীরাজ চোপড়া  সোনা জিতে ইতিহাস গড়লেন তিনি । এবার অলিম্পিকে এটি প্রথম সোনা ভারতের। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হলো শুভেচ্ছা বার্তা। সূর্য উদয়ের দেশ নীরাজ চোপড়ার সৌজন্যে ভারতীয় অ্যাথলেটিক ইতিহাসে লেখা হয়ে গেলো এক নতুন অধ্যায়। নীরাজ চোপড়ার জ্যাগলিন‌ এর পেছনে তার পরিবারের হাত অনেক। 

কি করে শুরু হয়েছিল নীরাজের পথ চলা। 1997 সালের 24এ ডিসেম্বর হরিয়ানার পানিপথে খান্ড্রা নামক এক গ্রামে জন্ম হয়েছির নিরাজ চোপড়ার । নিরাজ চোড়ার মায়ের ধাম সরজ দেবি(Saroj Devi) এবং বাবা সতীশ কুমার(Satish Kumar) যিনি একজন কৃষক। নিরাজের দুটি বোন আছে তবে নীরাজ হলেন সব থেকে বড়। যার জন্য পরিবারের সব থেকে আদরের ছিলেন নীরাজ। 


ছোট থেকেই খাবারের প্রতি ছিল বিরাট আকর্ষন। তার সব থেকে প্রিয় খাবার ছিল ফুচকা। মাত্র 12 বছর বয়েসে তার ওজন হয়ে গিয়েছিল 85 কেজির মতো । ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে । যখন‌ই সে বাড়ি থেকে বাইরে বার হতো তাকে শুনতে হতো নানারকম বঞ্চনা। যা দেখে বাড়ির লোকেরাও বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। এরপর তারা এক কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়। নীরাজের এক কাকা সুরেন্দের চোপড়ার কথায় তাদের বাড়ি থেকে 15 কিলোমিটার দূরে একটি স্টেডিয়াম ছিল যার নাম পানিপথ শিবাজী স্টেডিয়াম। সেখানে একজন ট্রেনের ছিলেন নাম জিতেন্দর জাগনাম। তার কাছে নীরজ কে পাঠানো হয়। 
 


শিবাজী স্টেডিয়ামে জিতেন দারের সেই ফিটনেস ক্লাবে যোগ দিয়ে, খুশি ছিলেন নীরাজ। কারন কোচ সেখানে নীরাজ শুধু দৌড় করাত। দৌড়ানোর সময় চোঁখ চলে যেত  তার পাশে অনুশীলন করা ছেলেগুলোর দিকে যারা বর্ষা ছুঁড়তো। নীরাজকে বর্ষা ঝরার দিকে আকর্ষিত হতে দেখে নীরাজ কে জিজ্ঞাসা করে। সে বর্ষা ছুঁড়তে চায় কিনা। নীরাজ এক কথায় রাজি হয়ে যায়। আর প্রথমবার তার বর্ষা ছোড়া দেখে হতবাক হয়েছিল কোচও। 2017 সালে এশিয়ান অ্যাথলিট চ্যাম্পিয়নশীপে 85.23 মিটার বর্ষা ছুঁড়ে  সোনা জয় করেছিলেন নীরাজ এছাড়াও‌ কমনওয়েলথ গেম, ফ্রান্স অ্যাথলেটিক, এশিয়ান গেমস এ সোনা জেতেন তিনি। একাধিক সোনার পদক রয়েছে তার ঝুলিতে। আর এবার জীবনের প্রথম অলিম্পিকে সোনা ছিনিয়ে নিলেন তিনি। 2008 সালে প্রথম সোনা জিতেছিল ভারত ।13 বছর পর মিরাজের হাত ধরে ভারতে এলো দ্বিতীয় সোনা।
 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন