রাশিয়া এমনিতে খেলতে নামে RUS শব্দের কান্ট্রিকোড নিয়ে, খেয়াল করে দেখেছেন কিনা জানিনা রাশিয়া এবার অলিম্পিকে নেই। মানে, অফিশিয়ালি রাশিয়া বা RUS কোডের দেশ এই অলিম্পিকে নেইই। রাশিয়ার ন্যাশনাল স্পোর্টস ফেডারেশনের আন্ডারে খেলার বদলে ফেডারেশন ব্যান হয়ে বসে থাকায় রাশিয়ান এথলিটরাই নিজেরা একটি আলাদা সংগঠন ROC নাম নিয়ে খেলেছিল যার ফুল ফর্ম Russian Olympic Committee. এর আগে 2018 সালে পিয়ংচ্যাঙে রাশিয়া খেলেছিল OAR নাম নিয়ে যার ফুল ফর্ম Olympic Athletes from Russia.

কিন্তু এরকম করা হয়েছে কেন?
 
আসলে ডোপিং ব্যাপারটাকে রাশিয়া ভীষণ উঁচু মানের শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছিল। 2015 সাল থেকে রাশিয়ার মধ্যে ঘটে চলা ডোপিং প্রকাশ্যে আসতে থাকে কয়েকজন এথলিটের অভিজ্ঞতা সামনে আসায়। Rio2016 তেই রাশিয়াকেই ব্যান করার কথা প্রথম উঠলেও নানা কারণে সেই মুহূর্তে তদন্ত চলার জন্য সেটি স্থগিত হয়ে যায়, বদলে কিছু এথলিটকে দল থেকে সরিয়ে দল ছোট করে দেওয়া হয়। এর পরেও যখন বিশ্ব এন্টি ডোপিং এজেন্সি বা WADA রাশিয়ার কাছে তাদের ন্যাশনাল ডোপিং টেস্ট ল্যাবের ডেটা চায় তখন তারা দেখে খোদ সেই টেস্ট ল্যাব থেকেই পাঠানো ডোপিং পজিটিভ ডেটাতে রীতিমত কারচুপি করে দেওয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস লবি 2019 থেকে 2022 অব্দি চারবছর সব খেলা থেকে রাশিয়ান ফেডারেশনকে নিষিদ্ধ করে।

Pripyat, July, 1987 চেরনোবিলের (Chernobyl) পরমাণু দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত হয় রাশিয়ার ভেতরেই। তদন্তের ফলাফল বাইরে আসতে দেওয়া হয়নি। অবশেষে গ্লানিতে ভুগে চেরনোবিল দুর্ঘটনার ঠিক দুই বছরের মাথায় তদন্তকারী চিফ সায়েন্টিস্ট তাঁর কথামতো বাকী রিয়াক্টর গুলোতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করা হয়নি বলে সুইসাইড করে নেন। সেই সুইসাইড থেকে সায়েন্টিস্টদের আন্দোলন শুরু হয়ে চেরনোবিলের আসল ঘটনা বিশ্বের সামনে আসে। কয়েক বছর পরেই সোভিয়েত গর্বাচেভ সরকারের পতন ও USSR বা সংযুক্ত সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার জন্যেও এটি অন্যতম মুখ্য কারণ।

ঘটনায় আসি,যেকোনো পরমাণু দুর্ঘটনায় মিনিমাম প্রায় কয়েকশো মানুষের প্রাণ হারানো খুব কমন ব্যাপার, আর চেরনোবিলের আগে সাধারণ শিক্ষিত মানুষ আদৌ জানতোই না পরমাণু দুর্ঘটনা হলে কী কী সতর্কতা নিতে হবে। ফলাফল, যদি সত্যি হিসেবটা করাই হয়, তাহলে ডিরেক্ট ইনভলভমেন্টের জন্যে কয়েকশো কিছু মাসের মধ্যেই, আর এখনো অব্দি ধরলে কয়েক হাজার প্রাণ হারিয়েছেন, কয়েক লাখ মানুষ হাসপাতালে ভর্তি থেকেছেন কোনো না কোনো জটিল রোগে দীর্ঘ সময়ের জন্য, এমনকি হিরোশিমার মতো এখনো প্রচুর শিশু অসুস্থ বা বিকলাঙ্গ জন্মায়।আরো স্পষ্ট একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চেরনোবিলের খুব কাছে থাকা ও রাশিয়ার বাইরে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাইরের দেশ ইউক্রেন নিজের তরফ থেকে নিজের দেশের তথা তৎকালীন সংযুক্ত সোভিয়েতের চেরনোবিলে দুর্ঘটনার সাহায্যে গিয়ে তেজস্ক্রিয়তার জন্যে প্রাণ হারানো কয়েক হাজার ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারের পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে।


এবার আসল অদ্ভুত ব্যাপারটা জানাই, 
 
এখনো অব্দি রাশিয়া চেরনোবিল সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রাণ হারানো মানুষদের সংখ্যার লিস্টের একটুও আপডেট করেনি, এবং সেই 87 সাল থেকেই তাদের অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট অনুযায়ী, চেরনোবিলে কেবলমাত্র 31 জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাকী সব "এমন তো কতই হয়" ব্যাপার।

জুলাইয়ের চেরনোবিল থেকে জুলাইয়ের টোকিও অব্দি, বিজ্ঞান থেকে নিয়ে খেলা অব্দি, রাশিয়ার গর্বের 34 বছর কেটে গেছে, অথচ তথ্য গোপনের ধারা কিন্তু রাশিয়া এখনো সেম রেখেছে, একজন মহান বিজ্ঞানীর সুইসাইডও মানসিকতার কিছু বদলাতে পারেনি। 
 
কোথায় ফ্রিডম অফ প্রেস? 
কোথায় ব্যক্তিস্বাধীনতা? 
কোথায় মতামতের মূল্য দেওয়া?

লেবানিজ সমাজকর্মী মিয়া খলিফা(Mia khalifa)যেমন ইউএস গিয়ে সেখানে বা ভারতে সমাজ সংস্কার করার পাশাপাশি বলে লেবানন খুবই ভালো দেশ আর ওদিকে লেবাননের রাস্তাতেই লেবানিজ মহিলারা বিশ্বের অন্যতম বড় প্রটেস্ট করে লেবাননের করাপ্ট সরকারকে সরানোর জন্যে, বা মালালা যেমন লন্ডনের বসে শান্তিপূর্ণ পাকের পাঠশালায় পাঠ্যক্রম শেষ করে, 
ঠিক একইভাবে সবসময় মনে রাখবেন, 
কমিউনিস্ট দেশের বর্ডারের এপারে যারা থাকে, কমিউনিস্ট দেশের প্রশংসা কেবলমাত্র তারাই করে

(সাথে দেওয়া ছবিটির পেছনেও একটা গল্প আছে, রাশিয়া যেহেতু তথ্য গোপন করেছিল, তাই তারা কাওকে বলতে পারেনি ঠিক কতটা ভয়ানক পরিমাণের রেডিয়েশনে ভর্তি এলাকা তাদের পরিষ্কার করতে হবে, বদলে একটি 'ছোট ঘটনা' বলে যে যন্ত্র আমদানি করেছিল ইউরোপ থেকে, সেটি কাজ শুরু করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেটির প্রসেসর নিজের লিমিটের অনেক অনেক বেশি রেডিয়েশন এর জন্যে ঝলসে যায়, ফলে প্রায় 400 জন লেবার ডাকতে হয় যারা পর্যাপ্ত প্রটেকশন ছাড়াই সবথেকে বেশি ক্ষতিকর জায়গাগুলোতে এভাবে হাতে হাত দিয়ে কাজ করে, ফলাফল হিসেবে, বেশিরভাগ লেবারই দুই দশক অব্দিও বাঁচেনি।
শ্রমিকদের জীবনের দাম না কী যেন শুনি একটা?)

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন