Karim Lala
বাং
লায় রঘু বা বিশে ডাকাতের অনেক কাহিনী শুনেছেন, শুনেছেন তাদের দানধ্যানের কথা। কিন্তু এরা নেহাতই গ্রাম্য ডাকাত। এদের গল্পে না আছে শিহরণ, না যৌবনের উদ্দামতা। আজ শোনাবো এমন এক ডাকাতের কথা, যে থাকতো এক মহানগরীর বিলাসবহুল প্রাসাদে। তার অনুগ্রহ পাবার জন্য দরজায় ভীড় করতো নেতা অভিনেতা থেকে সমাজের ওপর তলার মানুষ। ভারতের প্রথম সংগঠিত অপরাধের বেতাজ বাদশা ছিল এই মানুষটি, এখন যাদের বলা হয় #ডন !

জন্ম ১৯১১ সালে আফগানিস্তানে কুনার প্রদেশে। পিতৃদত্ত নাম আব্দুল করিম শের খান (Abdul Karim Sher Khan)। ভাগ্যান্বেষণে একুশ বছর বয়সে পেশোয়ার থেকে চলে আসে মুম্বাই, সময়টা ১৯৩০ সালের কোন এক মাস। শুরুটা ছোট ব্যবসা দিয়ে তবে তাতে তার মন টেকেনি বেশি দিন। মুম্বাইয়ের গ্রান্ট রোড স্টেশনের কাছে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে চালু করলো এক জুয়ার ক্লাব (Gambling Club)। মহানগর আগে কখনো দেখেনি এ জিনিষ তাই অচিরেই জমে উঠলো ব্যাবসা। জুয়াতে যারা হারতো তাদের জন্য টাকা ধার নেয়ার ও ব্যাবস্থা ছিল। ডকের কুলি থেকে অফিসের বাবু, সবাই একসময়ে টাকা ধার নিতে শুরু করলো তার কাছ থেকে। সুদের ব্যবসা করতো বলে তখন থেকে তার নাম হয়ে যায় করিম লালা (Karim Lala) !

মুম্বাই বাসী পাঠানরা ধীরে ধীরে ভীড় করতে লাগলো তার পাশে। এবার তাদের দিয়ে সুদ উশুল থেকে অন্যান্য অপরাধ মূলক কাজ চালু করে দিলো করিম। তৈরি করলো অভিজাত জুয়ার ক্লাব যেখানে আনাগোনা ছিল অনেক বলিউড তারকার। শোনা যায় তাদের ব্যক্তিগত সমস্যায় তার 'পাঠান গ্যাং'(pathan gang) এর সদস্যদের পাঠিয়ে সাহায্য করতো। জুয়া, মদ, তোলা আদায়, উচ্ছেদ, সুপারি নিয়ে খুন এসব অবৈধ ধান্ধার পাশাপাশি প্রোমোটারি ব্যাবসার দৌলতে তার আনাগোনা ছিল সমাজের ওপরতলায়। পাঠানদের ওপর তার অবিশ্বাস্য নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজনীতির লোকজন ও তাকে সমঝে চলতো। সম্প্রতি শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত (Sanjay Raut) যিনি নিজেও একসময় রিপোর্টার ছিলেন, সাংবাদিকদের এক সম্মেলনে বোমা ফাটিয়েছেন। তার কথায় করিম লালার দর্শনার্থীদের তালিকায় দিলীপ কুমার, হেলেন, সুনীল দত্তের মতো যেমন অভিনয় জগতের লোকজন ছিলেন, তেমন ছিলেন খোদ ইন্দিরা গান্ধী(Indira Gandhi)।

ষাটের দশকের শেষদিকে মুম্বাইয়ে উত্থান হয় আরো দুই মাফিয়া ডনের..... মস্তান মির্জা ওরফে হাজী মস্তান (Haji Mastan) এবং বরদারাজন মুদালিয়র(Varadarajan Mudaliar)। মজার কথা পরবর্তী দুই দশক এরা তিনজনে মিলে মুম্বাই অন্ধকার জগত শাসন করলেও নিজেদের মধ্যে কখনো 'গ্যাং ওয়ার' হয়নি। পারস্পরিক সমঝোতায় এরা কেউ কখনো অন্যের এলাকায় ধান্ধা করতে যেতো না।

চিত্রটা বদলায় আশির দশকের গোড়ায়। মুম্বাই পুলিশের এক হাবিলদার ইব্রাহিম কাসকারের দুই তরুণ পুত্র চোরাকারবারীর ধান্ধায় নেমে পড়ে, তাও করিম লালার এলাকা ডোংরি তে। মুখের নিষেধে, কাজ না হওয়ায় করিমের লোকেরা বড় ছেলেকে ধরে বেদম পেটায়। জান বাঁচাতে দুই ভাই কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দেয়। কিন্তু এ ছেলেরা অন্য ধাতুতে গড়া। বছর খানেক পরে দলবল জুটিয়ে আবার তারা ময়দানে নেমে পড়ে এবং সেই একই জায়গায়। চরম শিক্ষা দিতে পাঠান গ্যাং প্রকাশ্য রাস্তায় খুন করে ছোট ভাই সাব্বির(Sabir Kaskar) কে।
 
 
১৯৮২ সালে এই ঘটনার পর মহানগরী সাক্ষী হয় এক নারকীয় গ্যাং ওয়ারের। আটবছর ধরে চলা এই লড়াইয়ে দু'পক্ষের খুন হয় বিস্তর মানুষ। সাতাশি সালে করিমের ভাই রহিম খান (Rahim Khan) খুন হতে কবরের শান্তি নেমে আসে মুম্বাই আন্ডার ওয়ার্ল্ডে। ততদিনে ঐ পুলিশ কনস্টেবলের ছেলের খ্যাতি(?) দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছেছে উপসাগরীয় দেশগুলিতে। নব্বইয়ের শুরু থেকেই মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠলো একটি মাত্র নাম.....দাউদ ইব্রাহিম, অপরাধ জগতের শাহেনশাহ ! ‌

তথ্যসূত্র, ‘Dongri to Dubai’,
 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন