মাদের বাড়িতে বাইরে বা কাজের জায়গায় সারাদিন অনেক লোকের সঙ্গে ওঠাবসা করতে হয়। বিজনেস করলে কর্মচারীদের কে ম্যানেজ করতে হয়। চাকরি করলেও অফিসের বস এবং সহকর্মীদের সঙ্গে মিশতে হয়। তাই হিউম্যান রিলেশনশিপ আমাদের জীবনে উন্নতির পথে চরম ভূমিকা পালন করে। আর আমাদের কিছু ভুল আচারনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে অন্য কারোর ঝামেলা হয়ে যায়। যার বাজে‌ প্রতিফলন আমাদের পার্সোনাল এবং প্রফেশনাল লাইফে উপর পড়ে। আমাদের উন্নতির পথে এই গুলি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আবার অন্যান্য মানুষের সঙ্গে আমাদের ভালো রিলেশন আমাদের উন্নতির পথ কী সব দিক থেকে এগিয়ে নিয়ে চলে। তাই আজ আমি ডেল কার্নেগীর( DALE CARNEGIE ) এর লেখা HOW TO WIN FRIENDS & INFLUENCE PEOPLE থেকে তিনটি প্রাথমিক নীতি আপনাদের কাছে শেয়ার করব। যেগুলো অন্য অন্য মানুষের সাথে মেলামেশার সময় অবশ্যই আমাদের মেনে চলা উচিত। তাই আপনি যদি আপনার আশেপাশে থাকা সমস্ত মানুষের মন জিতে নিতে চান এবং আপনি যদি চান যে সবাই আপনাকে পছন্দ করুক আপনাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিক।  তাহলে আজকের এই প্রতিবেদন টি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।  


No.1 DON'T CRITICIZE কাউকে সমালোচনা করা কখনোই ঠিক না। এটা ভালো কোন‌রেজাল্ট দেয়না । কাউকে সমালোচনা বা নিন্দা করলে সে তাকে চেঞ্জ  করার পরিবর্তে নিজেকে ডিফেন্সিঢ করে তোলে। ক্রিটিসিজম খুবই ভয়ংকর জিনিস। একটি মানুষের আত্মসন্মানে আঘাত করে।  তার নিজের সম্পর্কে গুরুত্ব কে আঘাত করে তার মনের বিরক্তি জাগিয়ে তোলে। একজন ওয়ার্ল্ড ফেমাস সাইকোলজিস্ট পশুদেরকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করেছিলেন যে সমস্ত পশুদের ভালো ব্যবহারের জন্য পুরস্কৃত করা হচ্ছে তারা কোন কিছু ভালোভাবে ট্রেনিং দিলে খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিচ্ছে। কিন্তু যে পশুদের খারাপ ব্যবহারের জন্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছে তারা অনেক কম শিখছে। পরবর্তীকালে দেখা গেছে যেটা মানুষ দের ক্ষেত্রেও একই ভাবে প্রযোজ্য। সমালোচনার দ্বারা আমরা কাউকে পরিবর্তন করতে পারি না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।‌‌ অর্থাৎ এই সমালোচনা কর্মচারী, ফ্যামেলি মেম্বর  সবাইকে নীতিভ্রষ্ট করে দেয়। অথচ খারাপ পরিস্থিতি কে কখনো ঠিক করতে পারেনা। জর্জি বি জেম্সটন একজন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সেফটি কো-অর্ডিনেটর ছিলেন তার দায়িত্ব ছিল ওই কোম্পানির কর্মীদেরকে দেখাশোনা করা। যে তারা কাজের সময় তাদের মাথায় সেফটি টুপি বা হেলমেট পরে থাকছে কি না। যখন তিনি কাউকে টুপি না পরা অবস্থায় দেখতেন তখন তিনি তাদেরকে খুব বকাবকি করতেন এবং সেফটি রুলস রেগুলেশন নিয়ে বলতেন। এতে কোনো কাজ হতো না তারা তাঁর অবর্তমানে টুপি পড়তো না এবং তাকে খারাপ ভাবেও দেখতো। জেমস্টোন সিদ্ধান্ত নিলেন এটা তিনি অন্যভাবে অ্যাপ্রচ করবেন। তারপর থেকে যখনই কাউকে তিনি হেলমেট ছাড়া দেখতেন তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করতেন যে হেলমেটটা কি তোমার মাথায় আনকম্ফোর্টেবল মাথায়কি এটা ভালো ভাবে ফিট হচ্ছে না। আর তার পরে তিনি সুন্দর ভাবে‌ এটাও জানাতেন যে হেলমেটটা এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যেটা তাদেরকে একটা ভীষণ ইনজুরি থেকে রক্ষা করবে এবং এই জন্য একটা সব সময় পরে থাকা উচিত। আর এটাতে ভীষণভাবে কাজ হয়েছিল এবং এটা কাওকে অখুশি করে নি। এমনকি আব্রাহাম লিংকন ও বেশ কিছু বার‌ তার বিরোধীদের সমালোচনা করেছিলেন। যার কারণে একবার একজন বিরোধি তাকে ডুয়াল যুদ্ধের চ্যালেঞ্জও দিয়েছিলেন। আর তারপর থেকে তিনি আর কখনোই কাউকে সমালোচনা করেন না। সফল ব্যক্তিরা কখনও ‌‌‌‌‌‌কাউকে সমালোচনা  করেন‌ না, এমনকি নিন্দা করেন না। কাওকে সমালোচনা করা বা নিন্দা করার‌ আগে তাকে বোঝার চেষ্টা করুন‌ তারা কেন এমন‌ করছে। যেটা সমালোচনার থেকে বেশি প্রফিটেবল  যেটা সহানুভূতি জায়গায় এবং উদারতা ও সহ্য শক্তি বাড়ায়।


No.2 GIVE HONEST AND SINCERE APPRECIATION সমস্ত মানুষ নিজের‌ সম্পর্কে বাহবা শুনতে চাই। আর কাওকে দিয়ে কোন কাজ‌ কারনোর  একমাত্র উপায়। হ্যঁ আপনি কারর মাথায় বন্দুক ধরে কোন কাজ করিয়ে নিতে পারেন বা আপনার কর্মচারীদের চাকরি ছাড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকে রিয়েল co-operation বাড়ির ঠিকঠিট কাজ কোনদিনও পাবেন না। এটা একমাত্র উপায় তাদের ভাল কাজের জন্য তারিফ করা। কোন মানুষের কাছে ভুল ধরার পরিবর্তে তাদের ভাল কাজের জন্য তারিখ করুন বাহবা দেন আর দেখুন তারা কেমন আগ্রহ সঙ্গে ওই কাজগুলো করতে থাকে। সাথে সাথে আপনাকে তারা পছন্দ করবে। একজন সফল আমেরিকা এবং বিজনেসম্যান চার্জ বলেছেন তিনি এত টাকা পান তার কারণ তিনি মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে ডিল করতে পারেন। তিনি বলেন, যে তিনি মানুষদেরকে উৎসাহিত করতে পারেন তিনি কারোর কাছ থেকে তার চিন্তাভাবনাকে কয়েকটা বার করে আনতে পারেন শুধুমাত্র তাদের তারিফ করে তাদেরকে উৎসাহিত করেন। তাদের ভুল‌ধরার পরিবর্তে।  আর এগুলো চাল্চকে  সফল করেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষেরা‌ কি করে‌‌ ঠিক তার উল্টটা তারা তার সহকর্মীদের ভুল ধরানোর জন্য সবসময় ব্যাস্ত থাকেন।অথচ তারা কিছু ভালো কাজ করলে সে বিষয়ে কিছুই বলে না।সফল ব্যবসায়ী এন্ডু কার্নিগ বলেছেন যে তিনি তার সহ কর্মীদের সবার সামনে প্রশংসিত করতেন আর এটাই ছিল তার সফলতার প্রধান কারণ। আমরা আমাদের ডেলি লাইফ কাউকে প্রশংসা করতে ভুলে যায় আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের ভালো রিপোর্ট নিয়ে এলে আমরা প্রশংসা করতে অবহেলা করি। তারা কোনো ভালো কাজ করলেও তাদের প্রশংসা করার কোন প্রয়োজন বোধ করি না। এমর‌ সন বলেছিলেন,' EVERY MAN I MEET IS MY SUPERIOR THAN ME IN SOME MAY, IN THAT I LEARN OF HIM.'  অর্থাৎ তিনি যে কোন মানুষকে কোন না কোন পয়েন্ট থেকে তার থেকে বড় ভাবতেন এবং তাদের কাছ থেকে কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করতেন। তাই আমাদের কেও কোন মানুষের দোষ ধরার পরিবর্তে তাদের ভাল কাজগুলো বের করার চেষ্টা করতে হবে। আর মন থেকে তাদের প্রশংসা করতে হবে। তাদের উৎসাহিত করতে হবে।

আরও পড়ুন: ভারতীয় মেয়েদের এই গোপন কথাগুলি কেউ আপনাকে বলবে না !

 No.3 গ্রীষ্মকালে ডেল কার্নিগ প্রায়ই মাছ ধরতে যেতেন তার পছন্দের জিনিস ছিল স্ট্রবেরি এবং ক্রিম কিন্তু তিনি মাছের টোপ হিসেবে কেঁচো এবং ফড়িং বর্ষিতে দিতেন। কারণ মাছেরা কেঁচো বা ফড়িং পছন্দ করে যেটা ডেল কার্নিগের পছন্দ নয়। আর একই ভাবে  মানুষের ক্ষেত্রেও এটা সত্যি প্রত্যেক মানুষ তার নিজের পছন্দের জিনিস নিয়ে ভাবে তাদের নিজেদের পছন্দের জিনিস নিয়ে কথা বলতে চায়। সুতরাং অন্য মানুষদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে গেলে তারা যেটা চায় সেটা নেই কথা বলুন। আপনি যেটা চান সেটা নিয়ে নয় একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।  ধরুন আপনি চান যে আপনার ছেলে ধুমপান না করুক, তাহলে কখনই তাকে বলবেন না যে আমি চাই যে তুমি ধুমপান করো না। বরং তাকে এটা বলুন যে ওই সিগারেট টা তার প্রিয় খেলা ক্রিকেট টিম থেকে বাদ দিয়ে দেবে বা রোগ গ্রস্ত করে দেবে, তাকে সাকসেস হতে দেবে না। এন্ড্রু কার্নিগ একজন গরিব ছেলে ছিলেন, যে ঘন্টায় 2সেন্টে কাজ শুরু করেছিলেন। আর পরবর্তীকালে তিনি 365 মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পেয়েছিলেন। তিনি জানতেন যে কিভাবে মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে হয়। আর এটা হল মানুষ যেটা চায় সেটা নেই কথা বলা। একটা মজার ঘটনা বলা যাক, একবার নাকি শালী কার্নেগী কে বলেছিলেন যে তিনি তার দুই ছেলেকে নিয়ে খুব দুঃচিন্তা করছেন। কারণ তারা বাইরে থাকে আর তার চিঠির কোনও উত্তর দিচ্ছে না। তখন কার্নিগ চ্যালেঞ্জ করেন যে তার দুই ছেলের কাছ থেকেই তিনি উত্তর এনে ছাড়বেন। কার্নিগ তখন তার দুই বোনপোকে দুটি চিঠি লেখেন। প্রত্যেক চিঠিতে তিনি জানান যে এই চিঠির সঙ্গে তিনি $5 করে পাঠালেন। কিন্তু তিনি চিঠির সঙ্গে কোন টাকা পাঠালেন না। আর কিছুদিনের মধ্যেই চিঠির উত্তর এল ডিয়ার আংকেল এন্ডু আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন, যে চিঠিতে কি লেখা ছিল!

 

ফোর্ট মটরের প্রতিষ্ঠতা হেনরি ফোর্ট বলেছিলেন, 'IF THERE IS ANY ONE SECRET OF SUCCESS, IT LIES IN THE ABILITY TO GET THE OTHER PERSON'S POINT OF VIEW AND SEE THINGS FROM THAT PERSON'S ANGLE AS WELL AS YOUR OWN.'  অর্থাৎ সফলতার  একটা গোপন সূত্র থেকে থাকে তবে সেটা হল কোন জিনিসকে অন্য মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ক্ষমতা এবং একই সঙ্গে নিজের দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখতে পারা। কিন্তু সত্যটা হল 90% শতাংশ মানুষই 90% টাইম এটা করে না। তারা সবকিছু শুধু নিজের দৃষ্টিকোণ থেকেই  দেখে অর্থাৎ কাউকে দিয়ে কোন কাজ করাতে গেলে তার মধ্যে তীব্র ইচ্ছা তৈরি করতে হবে। আর আপনি তখনই সেটা পারবেন যখন আপনি তার দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা দেখবেন এবং সে কি চায় সেটা বুঝবেন। সুতরাং আশা করছি আপনাদেরকে বুঝাতে পেরেছি এবং সবশেষে এই তিনটি পয়েন্ট কে একত্রে করা যায়। 1. DON'T CRITICIZE TO ANYONE  অর্থাৎ কাউকেই তার কাজ নিয়ে বা  দুর্বলতা নিয়ে কখনোই ক্রিটিসাইজ করবেন না। 2. অন্যর সফলতাকে সন্মান করুন মন থেকে মানতে শিখুন। 3. আপনার ইচ্ছা অনিচ্ছার কে সরিয়ে রেখে। সামনের মানুষটির ইচ্ছা, অনিচ্ছা সে কি চায় সেদিকে খেয়াল করুন এই তিনটি সহজ টিপস্ কে ব্যবহার করে যেকোন মানুষের মনকে সহজেই জিতে নিতে পারবেন আপনি। এমনকি আপনার নিজের কোন কাজ তাকে দিয়ে স্বেচ্ছায় করিয়ে নিতে পারেন এবং সবশেষে কমেন্ট করে এটা অবশ্যই জানিয়ে যান যে আপনাকে নিয়ে বা আপনার উইটনেস  নিয়ে আপনাকে কি কেউ সমালোচনা করে? যদি করে থাকেন তাহলে তাদেরকে প্রতিবেদনটি শেয়ার করে নিজেদেরকে শুধরে নেওয়ার একটা সুযোগ করে দিন। 


আরও পড়ুন:একজন মেয়ে কোন কথাকে 47 ঘন্টা 15 মিনিটে নিজের মনে চেপে রাখতে পারে !

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন