টাকার অভাবে ক্লাস সেভেনে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয় ছেলেটাকে। ফুটপাথে পেন বিক্রি করে বাবাকে সাহায্য করতেন একসময়। কিন্তু এই রোগা, কালো, বেঁটে লোকটাই একদিন হয়ে উঠল ভারতবর্ষের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ। ধারাবির বস্তি থেকে, রুপোলি পর্দার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা হয়ে ওঠার সফর আদতে একফোঁটাও মসৃণ ছিল না। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই ছেলেটার গল্প।


ছেলেটা জন্ম অন্ধ্রপ্রদেশে হলেও, মুম্বাই শহরের ধারাবি বস্তিতেই বড় হয়ে উঠে সে। বাবা ছিলেন সামান্য মাহিনের মোটর অপারেটর। যা বেতন পেতেন তা নিয়ে সাত সাতটা পেট চালাতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যেত। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই ছেলেটার কাঁধে বিরাট দায়িত্ব ছিল বাবার পাশে দাঁড়ানোর। মাত্র 15 টাকার জন্য ক্লাস সেভেনে পড়া শোনা ছেড়ে দেয় ছেলে। সিদ্ধান্ত নেয় কিছুটা হলেও সংসারের হাল ধরার। মাত্র 13 বছর বয়সে ছেলেটি মুম্বাইয়ের ফুটপাথে পেন বিক্রি করা শুরু করে।


সে সময় তার সমবয়সী অনেকেই পে বিক্রি করতো। তাই ছেলেটা পথচলতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য শুরু করে বিভিন্ন বলিউড স্টার এর নকল করা। কখনও দিলীপ কুমার, কখনো দেব‌ আনন্দ ওই শুরু। এরপর একটু বড় হয়ে বাবার কোম্পানিতেই অপারেটর হিসেবে কাজ আরম্ভ করে ছেলেটা। ধীরে ধীরে এই বিভিন্ন স্টারকে নকল করে লোক হাসানোর ক্ষমতাকে যোগাড় করে দেয় বিভিন্ন stand-up কমেডি শো। নানা অর্কেস্ট্রা থেকে ডাক আসতে শুরু করে। একসময় এত শো আসতে থাকে যে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয় ছেলেটি। এইসময় হঠাং একদিন অমিতাভ বচ্চনের সাথে একটা ফাংশনে সঞ্চালন করার সুযোগ আছে ছেলেটার। প্রথম শোতেই বাজিমাত। দর্শকরা হেসে গড়িয়ে পড়ে তার কথাবার্তা আদব কায়দায়। ব্যাস একের পর এক শো আসতে থাকে তারপর। এই শো থেকেই প্রথম সুনীল দত্ত, অর্থাং সঞ্জয় দত্তের বাবার নজরে আসেন তিনি। উনি প্রথম ছেলেটাকে সুযোগ দেন ক্যামেরার সামনে অভিনয় করার।

 আরও পড়ুন:M.A. পাশ মেয়ে কেন আজ Zomato ডেলিভারি গার্ল !

আর এই সিনেমা থেকে শুরু হয় এক কালো,বেঁটে মানুষের রূপকথা। আজ অব্দি প্রায় 350 এরও বেশী বলিউড সিনেমায় কাজ করে ফেলেছেন তিনি। কাজ করেছেন অমিতাভ, শাহরুখ, সালমান, অজয় দেবগনের মতো সুপারস্টারের সাথে।  জনি লিভার( Johnny Lever)  স্ক্রিনে আসলেই আট থেকে আশি সবাই গড়িয়ে পড়েন হাসতে হাসতে। জনি লিভার কিন্তু তার আসল নাম নয়, তার আসল নাম জন প্রকাশ রাও জানুমালা (John Prakash Rao Janumala) । তবে প্রতিটি রূপকথায় একটা খারাপ অধ্যায় থাকে। জনি লিভার তার ব্যতিক্রম নয় বড় ছেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। ছেড়ে দেন একটার পর একটা সিনেমা। তবে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ একসময় ক্যান্সারমুক্ত হয় ছেলে। আবার রুপোলি পর্দার দর্শক আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে জনি লিভারের ম্যাজিকে। সারা জীবনে লোক হাসালেও, আদতে জনি লিভার একজন যোদ্ধার নাম। আর তাই তিনি আজ বলতে পারেন ছোটবেলা থেকে আমি এতই খারাপ সময় দেখেছি যে আজ এই বিরাট বাড়িতে বসেও আমি সেই দিনগুলোর কথা ভুলতে পারিনি।

 

উপরওয়ালা সবসময় সৎ ও পরিশ্রমি মানুষের পাশে থাকেন। জীবনে যত বার খারাপ সময় এসেছে ততবার চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করেছি উনি শুনেছেন। যারা সত্যিই জীবনে বড় কিছু করতে চান তাদের প্রত্যেককে বলছি নিজের উপর ভরসা রাখুন আর প্রার্থনা করুন।‌‌ দেখবেন একদিন সব অন্ধকার কেটে যাবেই, পরিশ্রমী মানুষের লড়াই কখনো বিফলে যায়না।

Cradit-UltiMad Media YouTube/ Sujoyneel

 আরও পড়ুন:ব্যাঙ্কে পড়ে আছে বিপুল পরিমানে কালো টাকা, তবুও নিতে চায় না দেশটির নাগরিকরা!

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন