বর্তমান পৃথিবীতে টাকার গুরুত্ব অপরিসীম। যেখানে একের পর এক মানুষ ফোব্স ম্যাগাজিনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। যেখানে দরিদ্ররা দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। আজ আমরা যাকে নিয়ে কথা বলব তিনি এই দু ধরনের মানুষকে এক সুতোয় গেথেছেন। তাকে কোটি কোটি মানুষ যাকে সৃষ্টিকর্তার পাঠানো দুধ বলে মনে করেন। লাখ লাখ মানুষের কাছে তিনি ভর্ষার একটি গাছ। 1937 সালের সুরাটের এক বিশাল অর্থশালী বংশে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোট থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন এবং বংশপরম্পরায় নির্ধারিত ছিল যে বড় হয়ে তিনি নিজের পৈত্রিক ব্যবসার হাল ধরবেন। কিন্তু বয়স যখন মাত্র 10 মা এবং বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ তাকে মানসিকভাবে আঘাত করে। সেই সময় থেকেই তাকে থাকতে হয় নিজের ঠাকুমার কাছে ক্রমেই মানসিক অবস্থা সামলে পড়াশোনা করতে চলে যান নিউইয়র্ক।
সেখানে প্রথমে রিভারডেল স্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন। তারপর হবার্ড থেকেই ম্যানেজমেন্ট সম্পন্ন করে ফিরে আসেন ভারতে। আমেরিকায় থাকা কালীন প্রথম 15 দিন চাকরি করেন আইবিএম কোম্পানিতে। দূর সম্পর্কে ঠাকুরদার কোথায় ভারতে ফিরে আসেন চাকরি ছেড়ে। নিজের পারিবারিক কোম্পানিতেই শপফ্লোর থেকে শুরু করেন কর্মজীবনে 1971 সালে ব্যবসার একটা ক্ষতিগ্রস্থ অংশ ন্যেলকোর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। আগামী 10 বছরে তিনি ব্যবসার হাল ফেরালেও তত্কালীন অর্থনৈতিক সমস্যা এবং শ্রমিক বিদ্রোহের ফলে সেই ব্যবসা আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডুবে যায়। এরপর থেকে এমন কিছু অংশের দায়িত্ব দেওয়া হয় যেখানে তাঁর পৈতৃক ব্যবসা ক্ষতির মুখোমুখি ছিল। সেখানে মুন্সিয়ানার পরিচয় দেন তিনি। এরপর ঠাকুরদার হাত ধরে নেমে পড়েন সেই অংশটা সামলাতে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিজয় যাত্রা শুরু হয় তার। 1998 সাল নিজের কোম্পানিতে তৈরি ইন্ডিকা গাড়িল চরম ব্যর্থতার পর আমেরিকার দ্বারস্থ হন ফোর্ড কোম্পানির সিইও উইল ফোর্ডের কাছে।
আরও পড়ুন:কেন কেঁদে ফেলেছিলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি ?
গাড়ি বানাতে না জেনেও গাড়ি বানিয়েছেন কেন, এই ধরনের অপমানজনক প্রশ্ন নিয়ে চরম হেনস্তা হতে হয় একটা মিটিংএ। অপমানিত হয়ে ফিরে আসেন ভারত বের করেন ইন্ডিকার দ্বিতীয় সংস্করণ 8 বছর পর ফোর্ড কোম্পানি ভারতে তাদের তৈরি ল্যান্ড রোভার এবং জাগুয়ার নিয়ে তুমুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবার ফোর্টকে দ্বারস্থ হতে হয় সেদিনের ইন্ডিয়া কম্পানি ডিরেক্টরের কাছে। হাসিমুখে গাড়িগুলো কিনে নেন তিনি। তিনি যদি চাইতেন তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় আরবপতি যেমন বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস, মুকেশ আম্বানির মত মানুষদের তালিকায় নিজের নাম জুড়তে পারতেন। কিন্তু তিনি দেশ এবং জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য এই মোহ থেকে পিছিয়ে এসেছিলেন। ঠিকই ধরেছেন আমরা কথা বলছি রতন টাটার ব্যাপারে তিনি সমগ্র টাটা কোম্পানির মোট আয়ের 66% বিলিয়ে দেন আম জনতার জন্য।
তার হাত ধরে এগিয়ে আসা টিসিএস কম্পানির আয়ের 53% চলে যায় ভারতের জিডিপি তে। কলকাতা এবং মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এ 70 শতাংশ দরিদ্র মানুষের ক্যান্সারের চিকিৎসা হয় বিনামূল্যে। এতকিছুর পর যখন তাকে বলা হয় তিনি চাইলেই হয়তো মুকেশ আম্বানির বদলে ভারতের প্রধান ধনী ব্যক্তি হতে পারতেন। তার উত্তরে তিনি হেসে বলেন, মুকেশ একজন ব্যবসায়ী আর আমি একজন শিল্পপতি। আমার কাজ শিল্পের মাধ্যমে গোটা ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। রতন টাটা সাধারণ মানুষের জন্য যে পরিমান অর্থ দান করেন, তা যদি তিনি না করতেন তবে তিনি মুকেশ আম্বানির থেকে আরো বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকায় এগিয়ে থাকতেন। ভারতবর্ষের ধনীতম ব্যক্তি দের তালিকা। সম্প্রতি কোভিড 19 ভাইরাসের আক্রমণে ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন প্রায় ছিন্নভিন্ন তখন তিনি দেড় হাজার কোটি টাকা দান করে ভারতবর্ষের মানুষের জন্য কুর্নিশ স্যার আপনাকে।
আপনার মতো শোনায় বাঁধানো হৃদয়ের মানুষ যেন আরও জন্ম নেয়, এই আমাদের প্রার্থনা।
Cradit- UltiMad Media (YouTube)/Sujoyneel
আরও পড়ুন:বিবি কি ভাইন্স ওরফে ভুবন বামের জীবনের গল্প !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন