বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহালয়া সকালে শুরু হয় মাতৃবন্দনা। পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। একটা সিনেমার ডায়লগ তুলে বলাই যায় ভগবান সব জায়গায় থাকতে পারেন না। তাই তিনি মাকে পাঠান। আজ শুনবো এমনই এক মায়ের গল্প, যিনি কোনো সন্তানের জন্ম না দিয়েও হয়ে উঠেছেন বহু অসহায় শিশুর মা। 30 মার্চ হাজার 1992 মধ্যপ্রদেশের ইন্দরে জন্ম নিল এক ফুটফুটে মেয়ে। বাবার ইচ্ছেতে খুব ছোটবেলা থেকেই গান শেখা শুরু হলো মেয়েটার। ফলস্বরূপ  1996 সালে মাত্র চার বছর বয়সে কালিয়ান জি এবং আনান্দ জির লিটল স্টার নামক একটি গানের দলের সদস্য হয়ে গেল মেয়েটি। সাল 1999 বয়স মাত্র 7বছর কারগিল যুদ্ধের ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ালো মেয়েরটি বাবা মাকে সঙ্গে নিয়ে ইন্দ্রের বিভিন্ন দোকানের সামনে গান গাইতে লাগল সে। প্রায় 25000 টাকা ত্রান পেল তার কাজ।

 

এরপর একে একে এভাবেই ওড়িশা সাইক্লোন, গুজরাটের ভূমিকম্পের জন্য কয়েক লক্ষ টাকা ত্রাণ সংগ্রহ করলো মেয়েটি। এবারে তার সঙ্গী হলো তার ছোটভাই। একদিন নিধি বিনয় মন্দির স্কুলের শিক্ষকরা এই ক্ষুদে গায়িকার বাবার কাছে অনুরোধ করেন ত্রা সংগ্রহের জন্য একটি অনুষ্ঠান করতে। কারণ এই অনুষ্ঠানে সংগ্রহ হওয়া সব টাকাই একটি শিশুর হার্ট অপারেশন এর কাজে লাগবে। অনুষ্ঠান হয় ব্যবহার হয় রাস্তার পাশের একটি ঠেলাগাড়ি ছোট মেয়েটাকে সাহায্যের জন্য পথে নামতে দেখে উপচে পড়া ভিড় সংগ্রহ হয় প্রায় 51,000 টাকা। উপস্থিত কোন এক দর্শকের কাছে এই সমস্ত ঘটনা শোনেন ডক্টর দেবি প্রসাদ শেটি। উনি সেই বাচ্চাটির অপারেশন বিনামূল্যেই করে দেন। এই মহাশক্তির যাত্রা সেখান থেকেই শুরু। অবশিষ্ট টাকা বিভিন্ন হার্টের সমস্যায় ভুগতে থাকা শিশুদের দিকে এগিয়ে দিতে পেপারে  বিজ্ঞাপন দেয় বাবা। যোগাযোগ করে 33 টি পরিবার। 

আরও পড়ুন:চোখে জল আনা এক সাফল্যের গল্প, ব্যবসার বাইরে তাঁর পরিচয় !

আবার শো করে মেয়েটি, আবারো বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত। কখনো ব্যাঙ্গালোরের ভান্ডারী হাসপাতালে জন্য দু লক্ষ 25 হাজার টাকা। কখনো ইন্দোরের চইত্ররাম হাসপাতালের জন্য লাখখানেক টাকা তুলতে থাকেন নিজের গানের সাহায্যে। এই অনুষ্ঠান গুলো থেকে কখনো নিজের জন্য কোন পারিশ্রমিক ধার্য করত না সে বা তার পরিবার। বদলে অপারেশন সাকসেসফুল হওয়ার পর বাচ্চাগুলো পরিবারের কাছ থেকে একটা করে পুতুল নিত  মেয়েটা।



এরপর 2006 সালে তার নামে খোলা হয় একটি হার্ট ফাউন্ডেশন। কয়েক কোটি টাকা সাহায্য তোলা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। কয়েকশো ছেলেমেয়ের  হার্টের চিকিৎসা শুরু হয় সেখান থেকেই। এই অসম্ভব কাজ করার ক্ষমতা রাখে মেয়েটি 2011 সালে প্রথমবার বলিউডে গান গায়, দামাদামি অ্যালবামে। এরপর এক থা টাইগার' কিক্, আশিকি টু, খামোশিয়া এরকম সিনেমায় হিট গান তাকে ভারত ব্যাপী বিখ্যাত করে তোলে গায়িকা হিসেবেও।


এই মহাশক্তির নাম পালাক মুছাল। যিনি তার ভাই পলাশ মুছালের সাথে মিলে  আজ অব্দি প্রায় দুই হাজারেরও বেশি দরিদ্র শিশুর হার্ট অপারেশন করিয়েছেন। কয়েক কোটি টাকার ত্রান তুলে। তার সাহায্যে কাজ জায়গা করে নিয়েছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এবং লিমকা বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও। ওনার নাম জায়গা পেয়েছে সিবিএসই এবং মহারাষ্ট্রের সপ্তম শ্রেণীর নীতি বিজ্ঞান বইয়েও। পালক আজ বিখ্যাত বলিউড সেলিব্রেটি এবং তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তিনি গায়িকা না হলে কি হতে তার উত্তরে তিনি হেসে বলেন হাটের ডাক্তার। আজ অপারেশন সময় তিনি ডাক্তারদের অনুমতি নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে দাঁড়িয়ে থাকেন অপেক্ষা করতে করতে তার সুমধুর কন্ঠে গুন গুন করেন ভাগবত গীতার শ্লোক। যতদিন পৃথিবী আছে পালকের মতো মাত্রিরুপেনো আছি ততদিন পৃথিবীতে মানবতা নামক শব্দটা বেঁচে থাকবে। ভালো থাকুন পালক।  

 Cradit-UltiMad Media YouTube/Sujoyneel

আরও পড়ুন:সুন্দর পিচাই কিভাবে গুগলের সিইও হয়ে উঠলো, আনটোল্ড স্টোরি!



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন