বলা যায় একতরফা যুদ্ধে জয় লাভ করছে ইজরায়েল । বিধ্বংসী এবং ক্রুদ্ধ ষাঁড়ের মতো হামলা করে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে ফিলিস্তিনীকে। কিন্তু কেন, কার চাপে পড়ে ইসরাইল করলো সিস ফায়ারের ঘোষনা ?  হামাস অথবা
ফিলিস্তিনের আমজনতার উপর এমন অত্যাচার এর পরেও তারা কিভাবে উল্লাস দেখাচ্ছে?

সিস ফায়ার(ceasfire)  কি ? 

যে চুক্তির ফলে হাতিয়ার অর্থাৎ আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অর্থাৎ দুই দেশই তাদের হাতিয়ার কোনরকম প্রয়োগ না করে । এক প্রকারের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয় তাকে সিসফায়ার বলে। যেহেতু সেনাবাহিনীতে টেকনিক্যাল ওয়ার্ড চলে এককথায় বোঝাতে সিসফায়ার বলা হয়ে থাকে।


সিস ফায়ার কেন এবং কার চাপে পড়ে ইসরায়েল পিছু হাটলো?

 ইজরাইল এবং ফিলিস্তিনির  এই সংঘর্ষের রেশ UNO পর্যন্ত পৌঁছায় কিন্তু আশানুরূপ কোন ফল হয়নি। সাধারণত ইউএনওর  মুখ্য ৫ ভেটো দাতারই ক্ষমতা আছে সেই জন্য  তাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা যায় ।   আমেরিকায় ডোনাল ট্রাম এর সরকার থাকা কালিন মুসলিম দেশগুলি তেমন সমর্থন পেত না । কিন্তু জো‌বাইডেন এর ডেমোক্রেটিক পার্টি  আসার পর  আরব ইরান দেশগুলির উপর সমর্থন করে । কিন্তু ট্রাম এর  রিপাবলিকান পার্টি  সেখানে খোলাখুলি ইসরায়েল কে সমর্থন করতো । তবে এই নয় সরকার পরিবর্তন‌হলে পুরো নীতি পরিবর্তন হয়ে যায় । 
 

তবে  এখানে‌ জানা দরকার ইসরায়েল উপর দুই দিক দিয়ে হামলা হচ্ছিল । গাজা (Gaza) থেকে আক্রমন করছিল হামাস এবং সিরিয়া থেকে ইসলামিক জেহাদ নামক এক আতঙ্কবাদি সংগঠন। অপর দিক থেকে ইসরায়েল ও সিরিয়ার সেই আংশে আক্রমন করতো পাল্টা । এবার সিরিয়ার সেই অংশে রাশিয়ার সৈন্যঘাটি থাকায় রাশিয়ারও তাদের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। যার ফরে যুদ্ধ বড় হতেও পারে । এই আশঙ্কা নিয়ে রুশও চাপ সৃষ্টি করে ইজরায়েলের উপর । তবে সব থেকে বেশি চাপ সৃষ্টি করে এই যুদ্ধবিরতির জন্য যে দেশ সে হলো মিশর। কারন গাজা সংলগ্ন এরিয়া মিশরের সাথে যুক্ত । আর ইসরায়েল যদি বারংবার  মিসাইল আক্রমণে গাজাপট্টি কে বিধ্বস্ত করে। প্যালেস্টাইনি গাজাবাসীদের  শরণার্থীদের চাপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে মিশর। ১১ দিন জাবৎ চলা এই হামলায় ফিলিস্তিনি  ২৫০ জনের বেশি মারা গেছেন। ১৪০০ অধিক আহত হয়েছেন। শুধু তার নয় যদিও ইজরায়েলের ক্ষতি কোম হয়েছে তা সত্ত্বেও  ১২ জন প্রান হারিয়েছে এবং একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তবে এবার গাজায় ঢুকে ইজরায়েলি বিমান বাহিনী হামাজের প্রচুর ক্ষতি সাধন করেছে।


বিশেষত হামাজ জঙ্গী সংগঠন চায় ইজরায়েল কে কি ভাবে ইকোনমিকালি ক্ষতি করা যায়। তবে হয়েছে ঠিক উল্টোটা ইজরায়েরি বিমান বাহিনী গাজাপট্টি  তে প্রবেশ করে‌ এবং যেসব সুরঙ্গ তে হামাজের ঘাটি ছিল সেগুলি পুরো নষ্ট করে দেয় । তাছাড়া বলা যায় ইজরায়ের গাজার যেখান থেকে হামাজ‌ ইনধন পায় তার  পুরো পরিকাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া আর হামাজ যেন উঠে না দাড়াতে পারে তার জন্য গাজাপট্টির যেসব বিদুৎ সাপ্লায়ার ,‌‌‌‌‌ ওয়াটার সাপ্লায়ার এবং ইজরায়েলের কামানের গোলা‌‌ বারনবার গাজা পট্টির ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় পড়তে থাকে যার করনে‌ প্রচুর কল-কালখানা ধুলর সাথে মিশে‌ গেছে। এমনভাবে ধ্বংসসাধন হয়েছে যে এই পরিকাঠামকে দাড় করাতে ২০ বছর লেগে যেত পারে। ইজরায়েল  এমনভাবে গাজাপট্টিকে বিধ্বস্ত করেছে যে গুগল ইমেজে গাজার মানচিত্র ঝপসা দেখা যাচ্ছে।
 

 
ইসরায়েল হামাসকে সম্পূর্ণ বিনাশ করেই শান্ত হত কিন্তু এমন বিধ্বংসী রূপ দেখে হামাস ঘাবড়ে যায় এবং আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু হামাস দুটি শর্ত প্রদান করে। শর্তটি হলো,  প্রথমত শেখ জার্রা থেকে মুসলিম যে ২০০ পরিবার বসবাস করে তাদের উৎখাত যেন না করা হয়। এবং দ্বিতীয়তঃ আল-আকসা মসজিদে (Al-AqsaMosque)  সেনা তদারখ না করে ইজরায়েল । এই দুটি শর্ত মানলে হমাস যুদ্ধবিরতি করবে বলে। পরিবর্তে ইসরাইল প্রধান নিতিন ইয়াহু  এই দুটি শর্ত মানতে নারাজ। তবে এনার উপরে আন্তর্জাতিক  চাপের কারণে । সিসফায়ার করতে একপ্রকার বাধ্য হয় ইজরায়েল। 



সিস ফায়ার হওয়ার পর ২১ তারিখ শুক্রবার আল- আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনি মুসলিমরা  জড়ো হয়  তখন ইজরায়েলি  পুলিশ  সেখানে পৌঁছে  যায় এবং স্ট্যান্ড গ্রেনেড, রবার বুলেট  ছুড়তে থাকে এর ফরে মৃত্যু হয় কার , তবে আহত হন অনেকে। ইসরাইল কথায়, ফিলিস্তিনি এর মুসলিমরা সেলিব্রেট করছিল যে তাদের জয় হয়েছে। এরা পুলিশেকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে। তার ফলস্বরূপ এই ঘটনা ঘটে যায়। যেখানে ফিলিস্তিনিদের কথায় ইসরায়েলি সৈনিক সরাসরি মসজিদে ঢুকে আসে কোন কারন ছাড়াই।


ইসরাইল হোক বা ফিলিস্তিনি এখানে জয় অর্থাৎ যুদ্ধজয় কারো দিকে যায় না। বারাবরি আল-আকসা মসজিদ কে নিয়ে ফিলিস্তিনিদের কে উস্কাতে থাকবে। ভুল করেও এই ফাঁদে পা দিলে ফিলিস্তিনিদের হারাতে হতে পারে ভূখণ্ড।  এখানে দুটি দেশ দু দিক দিয়ে দুই পক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করছে। এখানে UNO তাঁর ক্ষমতা বলে সেনসিটিভ এরিয়েগুলিতে তাদের প্রতিনিধি দল প্রেরণ করতে পারে এবং যথাযথ পর্যবেক্ষণ করে কি সমস্যা তৈরি করছে তা নজরে আনতে পারে গোটা বিশ্বের। তবে সব থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে এত মৃত্যু-মিছিল এরপরেও ফিলিস্তিনি বাসীদের মধ্য এত উল্লাস কিসের? ইসরাইলি বিমান হামলায় গোটা গাজা যখন থর থর করে কাঁপছে। তখন একটু বাঁচার রসদ পেল ফিলিস্তিনি গাজাবাসী। আর সেজন্য এত উল্লাস।  




সবথেকে বড় কারন, নিতিন ইয়াহু ঘোষণা করে পুরো গাজাপাট্টি দখল করবে ইসরায়েল। সেখানে হামাজ সংগঠন ভেবেই নেয় তাদের দিন শেষ । কোন মুসলিম রাষ্ট্র তাদের বাঁচাতে পারবে না । কারন ইতিহাসে লেখা আছে six day war 1967 যেখানে ইসরাইল একসাথে সাতটি দেশের  সাথে যুদ্ধ করে এবং জয়লাভ করে। আর আজ ২০২১  ইসরাইল অনেকে এগিয়ে ৫৭ টি মুসলিম দেশ এখন ইসরায়েরকে  সমিহা করে চলে । তবুও ইজরায়েল সিসফায়ার করলে তাদের মনে আশা জাগে তাদের গাজা বেঁচে গেছে। কিন্তু নীতি ইয়াহু সাফ জানিয়ে দেয় যদি আবার হামলা হয় ইসরাইলের উপরে তাহলে পিছু হটবে না ইসরাইল। গাজা কে ভুলে যেতে হবে ফিলিস্তিনীকে। 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন