ধুর আমার সব বন্ধুরাই সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হয়ে যাচ্ছে। আমি যে কি করি কিভাবে যে একটা সঠিক লাইফ পার্টনার বাছাই করব সেটাই তো বুঝে উঠতে পারছি না। যদি আপনিও এই একই কনফিউশনে ভুগছেন, তাহলে আজকের প্রতিবেদনটি একদম শেষ অব্দি দেখতে থাকুন। কারণ আজ এই ভিডিওতে আমি আপনাকে বলবো যে লাইফ পার্টনার বাছাই করার সময় বেশিরভাগ মানুষ ঠিক কি কি ভুলগুলো করেন এবং লাইফ পার্টনার বাছাই করার সঠিক উপায় টা ঠিক কী? তো চলুন এই জীবন সমস্যার সমাধান দাও জেনে নেওয়া যাক।
সমস্যা নাম্বার 1 শারীরিক সৌন্দর্যের ভিত্তিতে বাছাই করা লাইফ পার্টনার বাছাই করার সময় আমরা যে জিনিসটা কে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিই সেটা হল শারীরিক সৌন্দর্য। যেটাকে কিনা আসলে সবথেকে কম গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা লাইফ পার্টনার মানে নিজের সারা জীবনটা আপনি তার সাথে কাটাতে চলেছেন এবার আপনি যদি তাকে শুধুমাত্র শারীরিক সৌন্দর্যের ভিত্তিতে বাছাই করেন তো সে যতই সুন্দর সুন্দরই হোক না কেন তার বদনটা যখন প্রতিদিন সকালে উঠে বছরের-পর-বছর দেখতে হবে তখন একটা সময়ের পর সেই শারীরিক সৌন্দর্যটা আপনার চোখে মলিন হয়ে যাবে। আর তাছাড়া শারীরিক সৌন্দর্য তা ক্ষণস্থায়ী। একটা সময় পরে গিয়ে সকলের ক্ষেত্রেই তার বিকৃতি ঘটে। হ্যাঁ তার মানে আমি এটা বলছি না যে শারীরিক সৌন্দর্য টা একেবারেই জরুরী না। কারণ ভালোবাসার সূচনা হয় আকর্ষণ থেকে আর আকর্ষণ তৈরি করার জন্য অনেকের ক্ষেত্রেই শারীরিক সৌন্দর্য টা কাজে আসে। কিন্তু একটা সারা জীবনের সম্পর্ক শুধুমাত্র আকর্ষণের উপর ভর করে চলতে পারে না। সেখানে দরকার পড়ে ভালোবাসার এখানে আকর্ষণ আর ভালোবাসার মধ্যে তফাতটা একটু বুঝিয়ে বলা দরকার। আকর্ষণ মানে যখন আপনার সামনের জন্য শুধুমাত্র ভাল দিক গুলো চোখে পড়ে আর সেই কারণে আপনার তাকে ভালো লাগে। অন্যদিকে ভালোবাসা মানে যখন আপনার সামনের জনের ভালো এবং মন্দ সমস্ত দিক গুলোই আপনার চোখে পড়ে। কিন্তু তবু আপনার তাকে ভালো লাগে।
সমস্যা নাম্বার 2 টাকা পয়সা বা সম্পত্তির ভিত্তিতে বাছাই করা লাইফ পার্টনার বাছাই করার সময় শারীরিক সৌন্দর্যের পর যে জিনিসটাকে আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিই সেটা হল তার কত টাকা বা সম্পত্তি আছে। ভাবুন আপনি একজন রাজাকে বিয়ে করলেন যার প্রচুর ধনসম্পত্তির রয়েছে কিন্তু তার সাথে সাথে তারা 14টা রানিও রয়েছে এবং রাজামশাই একদিন রাতে এক এক জন রানীর সঙ্গে রাত কাটান। তাহলে কি আপনি সেই রাজামশাই-এর রানী সেজে রাজমহলে সোনা গয়না গায়ে দিয়ে বসে থেকে খুশি থাকতে পারবেন। যদি পারেন তাহলে কোন অসুবিধা নেই সেটা আপনার ব্যাপার। দ্বিতীয় কথা হল এই রাজামশাই কি নিজের কর্তৃত্ব এত ধনসম্পত্তি জোগাড় করেছেন নাকি তার বাবা দাদু রাজামশাই ছিলেন এবং সে উত্তরাধিকারসূত্রে এ ধন সম্পত্তির দখল পেয়েছেন। যদি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে থাকেন তাহলে প্রবল সম্ভাবনা আছে যে যদি কোনো অঘটন এর দরুন এই সম্পত্তি তার হাত ছাড়া হয়ে যায়ৎতাহলে সে আর সারাজীবনেও নিজের কর্তৃত্বে এই বিপুল পরিমান ধনসম্পত্তি কখনোই আবার জোগাড় করতে পারবে না।
সমস্যা নাম্বার 3 পারসোনালিটির ভিত্তিতে বাছাই করা আসলে ও না আমাকে খুব হাসায় জানিস তো, ওই জন্য আমার ওকে খুব ভালো লাগে। অনেকে আছে এভাবেও লাইফ পার্টনার বাছাই করেন। এরকম খেতে অনেক সময় ব্যাপারটা এরকম দাঁড়ায় যখন বয়স কম থাকে তখন মাথার উপর চাপ ও কম থাকায় মজায় দিন কাটে কিন্তু বিয়ের পরে হয়তো চাকরি তে গিয়ে রোজ বসের গালাগালি শুনে বাড়ি এসে তখন সেই মানুষটা নিজে হাসতে পারে সাথে সাথে অন্যকে হাসানোর ভুলে যায়। হঠাৎ তখন পার্সোনালিটি টাও বদলে যায়। মানুষের লাইফের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের পার্সোনালিটি বদলাতে থাকে। পারসোনালিটির ভিত্তিতে বাছাই করলে নিশ্চিত ভাবে হতাশ হতেই হবে। যেহেতু সম্পর্কটা সারাজীবনের হতে চলেছে তাই বাছাইটাও এমন কিছুর উপর ভিত্তি করে করা উচিত যা সারা জীবন একই থাকবে। শারীরিক সৌন্দর্য বা টাকা পয়সা, কিংবা পার্সোনালিটি এগুলো সবই ক্ষণস্থায়ী। তো আমাদের মানুষের মধ্যে এমন কিছু গুণ খুঁজে বার করতে হবে যেগুলো সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে এবং সেগুলোর ভিত্তিতেই বাছাই করতে হবে। তো সেই দীর্ঘস্থায়ী গুণগুলো ঠিক কি কি চলুন জেনে নিই।
আরও পড়ুন: STARTUP নয় BUSINESS করুন, কিভাবে নিজের ব্যবসা শুরু করবেন?
সমাধান নাম্বার এক মানসিক সৌন্দর্যের ভিত্তিতে বাছাই করা শারীরিক সৌন্দর্যের মতো মানসিক সৌন্দর্য কিন্তু অতটা ক্ষণস্থায়ী না এটা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে কিন্তু দুঃখের বিষয় শারীরিক সৌন্দর্যের মতো মানসিক সৌন্দর্য সহজে নজর কাড়তে পারে না। এটা মন দিয়ে লক্ষ্য করলে তবেই নজর কাড়ে। আচ্ছা তার আগে বলে মানসিক সৌন্দর্য বলতে কি বোঝানো হচ্ছে। একজন মানুষের স্বভাব, আচার-ব্যবহার, বিচারবুদ্ধি এবং চিন্তাভাবনার ধরন এই সবকিছু মিলেই ফুটে ওঠে তার মানসিক সৌন্দর্য। এই গুনগুলো শারীরিক সৌন্দর্যের মত অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মলিন হয়ে যায় না। এই গুণগুলো সারা জীবন আমাদের চোখে প্রাণবন্ত থেকে যায়। তাই লাইফ পার্টনার বাছাই করার সময় শারীরিক সৌন্দর্যের তুলনায় মানসিক সৌন্দর্য্যকে আসলে চারগুণ বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
সমাধান নাম্বার দুই রোজগার করার ক্ষমতার ভিত্তিতে বাছাই করা যেহেতু ব্যাপারটা সারাজীবনের তাই এই মুহূর্তে তার কাছে কত টাকা বা সম্পত্তি আছে সেটা বড় কথা নয় বড় কথা হলো তার মধ্যে রোজগার করার ক্ষমতা কতখানি আছে। কেননা যদি রোজগার করার ক্ষমতা থাকে তাহলে আজ নয়তো কাল সে প্রচুর টাকা বা সম্পত্তির মালিক ঠিকই হতে পারবে। কিন্তু যদি রোজগার করার ক্ষমতা না থাকে তাহলে আজ নয়তো কাল তার পথে বসার সম্ভাবনা থেকেই যাবে।
সমাধান নাম্বার তিন লাইফ স্টাইল এর ভিত্তিতে বাছাই করা আপনিও হয়তো একটা সুস্থ স্বাভাবিক লাইফ স্টাইলে বাঁচতে চান। মানে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে এক্সারসাইজ করা ননভেজ খাবার খাওয়া, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া, এই ধরনের আর কি। অন্যদিকে আরেক জন রয়েছেন জিনি লেট নাইট বার বা ডিস্ক তে পার্টি করে কাটানো, সকালে দশটার পর ঘুম থেকে ওঠা, প্রায় প্রতিদিন বাইরের কিছু না কিছু জাঙ্কফুড খাওয়া এই ধরনের বেপরোয়া লাইফ স্টাইলে বাঁচতে চান। অথবা আপনি হয়তো সারা বিশ্বঘুরে যাযাবরের মতো জীবন যাপন করতে চান। আর তিনি একটা নির্দিষ্ট জায়গায় থেকে নির্ঝঞ্ঝাট জীবনযাপন করতে চান। তাহলে এরকম হলে অর্থাৎ দুজনার লাইফ স্টাইল লিট করার ইচ্ছা যদি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী হয়। তবে আপনাদের দুজনের সারা জীবন একসাথে খুশি থাকতে পারা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
আশা করি আপনি এটা মানবেন এই পৃথিবীতে কেউই পারফেক্ট না। না তো আপনি পারফেক্ট আর নাইবা আমি পারফেক্ট। আমরা সবাই পারফেক্টলি ইনপার্ফেক্ট। আর তার মানে বাছাই করার উদ্দেশ্যে এটা নয় যে একজন পারফেক্ট লাইফ পার্টনার খুঁজে বার করা। বাছাই করার উদ্দেশ্যে এটাই যে সেই ইমপারফেকশন গুলো যেন গ্রহণযোগ্য হয়। কোন সম্পর্কই এরকম হবে না যেখানে কোনদিনও ঝগড়া ঝামেলা হবে না। তফাতটা হল কিছু সম্পর্ক এমন হয় যেখানে হাজার ঝামেলা হলেও সেই সম্পর্ক গুলোকে আমাদের হৃদয় দিয়ে আগলে রাখতে মন করে। আর কিছু সম্পর্কে কোন ঝামেলা না হলেও সেগুলো কাটার মত সারাক্ষণ খোঁচা দিতে থাকে। সর্বোপরি আপনি যাকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে বেছে নিন না কেন, একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন আপনি তার কাছ থেকে যা যা আশা করবেন আপনাকেও কিন্তু ঠিক সেই সেই জিনিসগুলোই তাকে দিতে হবে। তবেই আপনাদের সম্পর্কটা সুন্দর হবে। আশাকরি এবার আপনি নিজের জন্য একটা সঠিক লাইফ পার্টনার খুব সহজেই বেঁছে নিতে পারবেন। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল। প্রতিবেদনটি একদম শেষ অব্দি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের সাথে জুড়ে থাকুন ডান দিকে Follow বাতনটা চেপে।
আরও পড়ুন: Job Interview দিতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একবার পড়ুন , চাকরির ইন্টারভিউ সহজেই পাশ করার কৌশল !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন