আজকের দিনে কেইবা চাই শুধুমাত্র কিছু টাকা কামানোর জন্য সকাল ন'টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অন্য একজনের গোলামী করতে। আজকের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যারা ইন্টারনেটের কল্যাণে নতুন নতুন স্টার্টআপ সম্বন্ধে অনেক ভালো নলেজ রাখে। তাদের বেশিরভাগই অন্যের চাকরি করাটা পছন্দ করে না। কিন্তু এই গোলামী থেকে বাঁচার জন্য কোন কিছু না শিখি এবং না জেনে নেমে পড়ায় 90% এর বেশি স্ট্যাটা আপ শুরুতেই ফেল হয়ে যায়। স্টার্টআপ যেমনই হোক, আর যেই ফ্লিড এই হোক এমন তিনটি গোল্ডেন নিয়ম রয়েছে যেগুলো যদি সঠিকভাবে ফলো করা যায়। তাহলে একটা সাকসেসফুল স্টার্টআপ বেল্ট করাটা গ্যারান্টেড।
এই ছবিটা দেখুন আপনার বাড়ির সাথে নিশ্চয়ই ছবিটির মিল রেয়েছে তাইনা? বড়ির সাথে তো মিল রয়েছে কিন্তু চিন্তা ভাবনাও কি মিল রয়েছে? এটাই হলো সবথেকে বড় প্রশ্ন। দুজন বন্ধুর এক্সাম্পল দিয়ে আজ এই ভিডিওতে আমি আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করবো যে কেন কিছু স্ট্যাট-আপ ফেল হয়ে যায়। আর কিছু সাকসেসফুল হয়।
তো দুজন বন্ধু ছিল রমেশ আর সুরেশ। দুজনেই সন্দীপ মাহেশ্বরী স্যারের হাউ টু আর্ন মানি ফ্রম ইউটিউব ভিডিওটা দেখলে। কিন্তু দুজনের মধ্যে সুরেশ ই একমাত্র সন্দীপ স্যারের কথাগুলো মন দিয়ে শুনল এবং প্রত্যেকটা ইম্পর্টেন্ট কথার নোট করে নিল। কিন্তু রমেশ কোনমতে দায় সারা ভাবে ভিডিওটা দেখলে আর ওপরে ওপরে বুঝে নিল যে হ্যাঁ ইউটিউব তাহলে একটা উপায় যেখানে জিরো ইনভেস্টমেন্ট একটা স্ট্যাটাস বিল্ড করা যায়। আর মাসে লাখ টাকা কামানো যায়। তো দুজনেই একটা করে ইউটিউব চ্যানেল খোলার সিদ্ধান্ত নিল।
স্টার্টআপে তিনটি গোল্ডেন রুলস এর মধ্যে সবার প্রথমে রয়েছে
1. Start with why - এখন আমরা দেখব রমেশ আর সুরেশ এর মধ্যে কে কিভাবে এই নিয়মটি পালন করল। রমেশ নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করল না এই চ্যানেল সে আসলে কেন খুলতে চায়। তার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল যে এখান থেকে সে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবে অর্থাৎ একদিক থেকে আমরা বলতে পারি তার Why ছিল নাম, খেতি এবং অর্থ। তো এই কারণে তার একশনস গুলো সে সেভাবেই ঠিক করল। সে রিসার্চ করে দেখল ইন্ডিয়াতে কোন কোন টপিক গুলো সব সময় ট্রেন্ডিং এ থাকে সে দেখল এক হল সেক্সুয়াল কন্টেন আর দুই হল কমেডি। প্রথমটা তো করা যাবে না কারণ ধরা পড়লে বাড়িতে জুতোর বাড়ি কপালে জুটবে। কিন্তু দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে তার জন্য পসিবল। সে দেখল বিবি কি ভাইনস, ক্যারিমিনাটি এরা অনেক অল্প সময়ে অনেক বেশি সাবস্ক্রাইবার পেয়ে গেছে। সে ভাবলো আচ্ছা তাহলে এরা যা করে আমাকেও তাই করতে হবে। আর তারপর এসে একটা কমেডি চ্যানেল খুলে ফেললো। সে একবারের জন্যও ভাবলো না যে আমার কমিটি নিয়ে কোন ইন্টারেস্ট আদও আছে কিনা। আমার মধ্যে কি ট্যালেন্ট আছে। সেইসব এ কিছু ভাব লই না কারণ তারা শুধু টাকা চাই। সেজন্য ইন্টারেস্ট গোল্লায় গেল।
এবার আসি সুরেশের কথায় সুরেশ যে কোনো ডিসিশন নেওয়ার আগে সন্দীপ স্যারের নোট গুলো সামনে রেখে বসলো। সেখানে প্রথম কথাটা লেখা ছিল তোমার ইন্টারেস্ট খুঁজে বার করো। এটাতে কিছু চিন্তা করতে লাগলো কিন্তু তার মাথায় কিছুই এল না। সে ভাবল আরে ভাই আমার তো কোনো কিছুতেই ইন্টারেস্ট নেই। এমন সময় পাশে রাখা তার ফোনের দিকে তার নজর গেল ইউরেকা পেয়ে গেছি ইন্টারেস্ট। সুরেশের মোবাইল ফোনের প্রতি খুব ইন্টারেস্ট ছিল নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট করা মার্কেটে নতুন নতুন ফনের সম্পর্কে আপডেট। বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে কালেক্ট করতো। মোবাইল ফোনের ব্যাপারে তার নলেজ অনেক গভীর ছিল। তার বন্ধুরা নতুন ফোন কেনার আগে তার কাছে এডভাইস নিতে আসতো। সে মনে মনে ভাবল এই কাজটা করা যেতে পারে। সে ইউটিউবে গিয়ে মোবাইল ফোন বিষয় একটা চ্যানেল খুলে ফেলল তার চ্যানেলের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল লোকেদের মোবাইল সম্বন্ধে সঠিক এবং আপডেটেড তথ্যগুলো জানানোর মাধ্যমে তাদেরকে ফোনের ব্যাপারে কিছুটা সাহায্য করা। এখন আসা যাক সেকেন্ড গোল্ডেন নিয়মে
আরও পড়ুন:সঠিক জীবনসঙ্গী খুঁজে নেয়ার সহজ উপায় !
2.Learn from masters - চ্যানেল খোলার পর রমেশ তার এক দাদার সাথে বিষয়টা নিয়ে ডিসকাস করতে গেল। যে নিজেই ব্যাংকে সকাল ন'টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চাকরি করে এবং ইউটিউব সম্বন্ধে তার ন্যূনতম নলেজ টুকু নেই। এবার তার দাদা জ্ঞান দিতে শুরু করলো সে বললো আমার কলেজের এমন অনেক বন্ধু ছিল ওরা ইউটিউব চ্যানেল খুলে ছিল এসবে টাকা পয়সা কিছুই আসে না বুঝলি। দেখবি লাখে একজন কি দুজনের লাক ফেভার করে ওরাই সব টাকা পয়সা কামায়। এসব ফালতু বিজনেস বাদ দিয়ে ভালো করে পড়াশোনা কর আর আমার মত ব্যাংকে একটা চাকরি নেওয়ার চেষ্টা কর বুঝলি। তারপর রমেশ তার কয়েকজন বন্ধুর সাথে ব্যাপারটা আলোচনা করলো। এদের মধ্যে আবার এমনও অনেকে ছিল যারা ইউটিউব কি জিনিস সেটা জানত না। তারা বলল আরে ভাই এতো অনেক ঝামেলার কাজ তার উপর তোর ভিডিও কে দেখবে। তুই তো আর ফেমাস না। আর এই সব কথা শোনার পর রমেশের মোটিভেশন লেভেলটা ডাউন হয়ে গেল। কিন্তু অন্যদিকে সুরেশ এমন কারো সাথে কথাই বলল না যারা ইউটিউব সম্বন্ধে কিছুই জানেনা। সুরেশ যেটা করলো সেই ইউটিউবে গিয়ে খুঁজে লাগলো যে এই টপিকের ওপর যাদের চ্যানেল আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাকসেসফুল চ্যানেল কোনগুলো। সে বেশ কয়েকটা চ্যানেল পেল তার পাশেই তাদের ভিডিওতে কমেন্ট করার মাধ্যমে পন্থা করা শুরু করল। তাদেরকে পার্সোনাল ইমেইল করে জিজ্ঞেস করতে লাগল শুরুতে তাদের ভিডিওতে কেমন ভিউ হত। তো প্রথমে তারা কিভাবে ভিডিও বানাতো তারপর কিভাবে তারা ইমপ্রুভ করল ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ সুরেশ এমন লোকদের কাছ থেকে শিখতে লাগলো যারা এই ফাইল টা একজন মাস্টার ছিল। রেজাল্ট তার মোটিভেশন লেভেল অনেকটাই বেড়ে গেল। যখন সে ঐ সব চ্যানেল গুলোতে গিয়ে থ্যাংক ইউ কমেন্ট গুলো পড়েতো তখন তার অনেক ভালো লাগতো। সে ঠিক করে নিল আমাকেও এই কাজটাই করতে হবে। এবার আসি তৃতীয় পয়েন্টে
3.Focus on excellence- রমেশ দিনে 50 বার তার রেভিনিউ চেক করতো। যেখানে সুরেশ চেক করতো সপ্তাহে একবার। স্বাভাবিকভাবেই দুজনেরই শুরুর দিকে অনেক কম ভিউজ আসতে লাগল। তখন রমেশের তার সেই দাদার কথা মনে পড়লো লাখে মাত্র একজন দুজনেরই লাক ফেভার হয়। আর এতে সে আরো বেশি ডিমোটিভেটেড হয়ে পড়তে লাগলো। কিন্তু এই সেম সিচ্যুয়েশন সুরেশের মাথায় আসলো সেই সাক্সেস্ফুল ইউটিউবার দের কথা। তারা তাকে বলেছিল যে শুরুর দিকে তাদের ভিডিওতে হার্ডলি 10 টা করে ভিউ হতো। যেখানে শুরু সে তো এখনই 50 হয়ে গেছে। ফলে এতে সে ডিমোটিভেটেড হওয়ার বদলে আরো বেশি মোটিভেটেড হয়ে গেল। এদিকে রমেশের ভিডিওতে অলরেডি নেগেটিভ কমেন্টস করতে শুরু করলো। স্বাভাবিকভাবেই তিন মাস পর তার মাত্র 10 ডলার রেভিনিউ জেনারেট হলো। সে ভাবতে লাগল এতো আমার বন্ধুরা ঠিকই বলেছিল আসলেই এই কাজ খুব ঝামেলার একটা কাজ। ফাইনালি মাত্র তিন মাস পরেই সে হাল ছেড়ে দিল। সে ভিডিও বানানো বন্ধ করে দিলে। সুরেশের ভিডিওতে ও নেগেটিভ কমেন্টস আসত কিন্তু সুরেশ অন্য দিকে মনোযোগ দিল। সে খুঁজতে লাগল তার ভিডিওতে ভুলগুলো আসলে কোথায় হচ্ছে। সে দেখল অডিওতে অনেক নয়েজ আসছে। তখন যে অডিওটা ঠিক করল। এরপর সে দেখল তার লাইটিং সেটআপে কিছু সমস্যা রয়েছে। কারণ তার ভিডিওতে অনেক শ্যাডো আসছে। অর্থাৎ শুরুতেই সে শুধু নিজের প্রডাক্ট কে আরো বেটার বানানো যায় কিভাবে সেদিকে খেয়াল করতে লাগল। সুরেশের তিন মাস পর রেভিনিউ আট ডলারের মতো হয়েছিল। কিন্তু সুরেশকে অলরেডি তার ভিডিওর জন্য 10 জন ভিউয়ার ধন্যবাদ জানিয়েছিল। আর সেই ডলারের বদলে সেই ধন্যবাদ গুলিকে সুরেশ কাউন্ট করেছিল। কারন তার আসল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সাহায্য করা। আস্তে আস্তে যখন তার ভিডিও আর উন্নত হতে লাগলো। সাথে সাথে তার subscriber's বাড়তে লাগলো। স্বাভাবিকভাবে তার রেভিনিউ ও আরো বেশি বেশি জেনারেট হতে লাগলো। কিন্তু সেই টাকা গুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের জন্য ইনভেস্ট করতে লাগলো। আর পাঁচ বছর পর আজকে সুরেশের চ্যানেলেও ওয়ান মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার। এখন যে মাসে দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা করে রোজগার করে। আর রমেশ এখন তার সেই দাদার সাথে ব্যাংকে সকাল ন'টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চাকরি করে। তার ইনকাম এখন মাসে মাত্র 30 হাজার টাকা। রমেশের জীবনটা বাঁশ বাগান কিন্তু তবু সে সেটা নিয়ে গর্বিত। আর মজার কথা কি জানেন যখনই তার সুরেশ এর সাথে দেখা হয় রমেশ সুরেশকে বলে ভাই তোর ভাগ্যটা সত্যিই দুর্দান্ত। আমি চাই আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে যারা সন্দীপ মাহেশ্বরী তাদের অনেক বড় ফ্যান এবং উনার কথাগুলো কি সত্যিই ফলো করতে চায় তাদের সাথে এই প্রতিবেদন টি শেয়ার করুন আর কমেন্ট করে আমাকে জানান এই প্রতিবেদনটি আপনার কেমন লেগেছে। যদি আপনি এমন আরো প্রতিবেদন পড়তে চান এমনি তবে আমাদের ইমেল সাবস্ক্রাইব গিয়ে নিজের ইমেল ইনপুট করে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন।
আরও পড়ুন:The Kashmir Files দেখে এলাম, কেমন হয়েছে সিনেমাটা !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন