ভারতকে পূজা-পার্বণের দেশ বলা হয়ে থাকে। কারণ ভারত এমন একটা দেশ যেখানে সারা বছর পূজা পার্বণ হয়ে থাকে। তার মধ্যে একটু পুজো হল 'ছট' পুজো। কালীপুজোর ঠিক পরে পরে শুরু হয় এই পুজো।কিভাবে শুরু হল ছট পুজো? কি এর মাহাত্ম্য?
ভারতকে পূজো পার্বণ এর দেশ বলা হয়ে থাকে। আমাদের বাংলায় এর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হলো দূর্গাপূজা . এরপর আসে লক্ষ্মীপূজো, কালীপূজো, ভাইফোঁটা এবং সবশেষে আসে ছট পূজো। ভারতের বিহার এবং ঝাড়খন্ডে ছট পূজো সবথেকে জনপ্রিয়। তবে ধীরে ধীরে সারা দেশে এই পূজো ছড়িয়ে পড়েছে.
আমাদের বাংলাও এর ব্যতিক্রম নয়। কালীপুজোর ঠিক পরে পরেই শুরু হয় এই পূজো। মাথায় ঘোমটা কপালে মেটে সিঁদুর দিয়ে যখন দলে দলে মহিলারা কলার কাঁদি এবং ফলমূল নিয়ে রাস্তা দিয়ে যায় তখন আমাদের মত বাঙালিরা ভাবে এই এল বিহারীদের ছট পূজো। তবে এখন অনেক বাঙ্গালী ছট পূজো করে থাকেন।
কিভাবে শুরু হল ছট পূজো, এর পিছনে রয়েছে কিছু ঐতিহাসিক কাহানি। পুরাণ অনুসারে একসময় প্রিয়বদ নামে একজন রাজা ছিলেন। তাঁর কোন সন্তান ছিল না। এজন্যই মহর্ষি কাশ্যপ একটি যজ্ঞ করেছিলেন এবং রাজার স্ত্রী মালিনীকে উপাসনার জন্য তৈরি ক্ষীর দিয়েছিলেন এবং মালিনী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই সন্তানটি ছিল মৃত। প্রিয়বদ সেই মৃত পুত্রকে নিয়ে শ্মশানে যান এবং নিজের প্রাণ ত্যাগ করার কথা ভাবেন। ঠিক সেই সময়ই ভগবানের মানুষ পুত্রি দেবসেনা প্রকট হয় এবং বলেন যে তিনি মহাবিশ্বের ষষ্ঠ অংশ থেকে জন্মগ্রহণ করেছেন। এ কারণে তাকে ছটি বলা হয়। আপনি আমার উপাসনা এবং অন্যদের আমার উপাসনা করতে অনুপ্রাণিত করুন.
তাহলে আপনার পুত্রের প্রাপ্তি ঘটবে। রাজা প্রিয়বদ পুত্র সন্তান লাভের আশায় তাঁর পূজো করেন এবং পুনরায় পুত্র সন্তান লাভ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় এই ছটপূজা। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে ভগবান রাম এবং মাতা সীতা 14 বছর বনবাসে থাকার পর রাবণ বধ করে যখন অযোধ্যায় ফিরে আসেন। ঠিক সেই সময়ই রাবণ বধের পাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য ঋষিগণের আদেশে সূর্য পুজো করেন। মাতা সীতা কার্তিক শুক্লা এই ষষ্ঠী ব্রত রেখেছিলেন এবং ছয় দিন ধরে সূর্য দেবতার পূজা করেছিলেন। এরপর থেকেই শুরু হয় ছট পুজো।
আর এক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে সূর্যপুত্র কর্ণ সর্বপ্রথম ছট পূজো শুরু করেছিলেন। তিনি সূর্যদেবতার প্রতি খুব বিশ্বাসী এবং শ্রদ্ধাশীল ছিলেন তিনি সর্বদা কোমর পর্যন্ত জলে দাঁড়িয়ে সূর্যকে অর্ঘ্য অর্পণ করতেন এবং সূর্য দেবতার কৃপার কারণেই তিনি বিশ্বের প্রচুর সম্মান পেয়েছিলেন। এরপর থেকেই শুরু হয় ছট পূজো। অনেকের মতে মহাভারত কালে দ্রৌপদীকে ছট পূজা করেছিলেন। তিনি তার পরিবারের উন্নতি এবং ভালো স্বাস্থ্যের জন্য এই ব্রত রেখেছিলেন। দীর্ঘ জীবনের জন্য তিনি নিয়মিত সূর্য উপাসনা করতেন। ছট পুজো উপবাস শুরু হয় 'না হায় খাই' নামক এক অনুষ্ঠান দিয়ে।
ব্রত শুরু হওয়ার প্রথম দিন বাড়ি ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে পবিত্র করা হয়। এই ঋণের উপবাসীরা খাঁটি নিরামিষ খাবার খায়। এই দিনেই উপবাসীরা কুমড়ো শাক সবজি মসুর ডাল এবং ভাত খান। হট পুজো উপবাসের দ্বিতীয় দিন কার্তিক মাসের শুক্লা পঞ্চমী তে পড়ে। সারাদিন উপবাস থাকার পর সন্ধ্যা বেলা খাবার খাওয়া হয়। একে 'খরনা' অনুষ্ঠান বলা হয়। এই দিন প্রতিবেশী এবং পরিচিতদের প্রসাদ গ্রহণের জন্য ডাকা হয়। ছট পুজো উপবাসী তৃতীয় দিনটি কার্তিক মাসের ষষ্ঠ দিনে পড়ে। এতে উপবাসীরা সন্ধ্যায় নদী বা পুকুরের দাঁড়িয়ে সূর্যকে অর্ঘ দেয়। সূর্যদেবকে দুধ ও জল দিয়ে অর্ঘ্য দেওয়া হয়। এছাড়াও একটি বাসের ঝুড়িতে ময়দা দিয়ে বানানো ঠেকুয়া, চালের লাড্ডু,আখ এবং বিভিন্ন ফলমূল রাখা হয়। এই প্রসাদটি অর্ঘের পরে সূর্যদেব এবং ছট মাকে দেওয়া হয়ে থাকে ছট পুজো উপবাসের শেষ দিনটি.
কার্তিক মাসের শুক্লা পঞ্চমী তো পড়ে। এইদিন উপবাসীরা সূর্যোদয়ের আগে নদী বা পুকুরে যায় এবং সূর্য দেবতা কে অর্ঘ দেয়। পুজোর পরে উপবাসীরা কাঁচা দুধের শরবত এবং কিছু প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে উপবাস শেষ করে। এই প্রক্রিয়াটিকে 'পরান' বলা হয়। ছট পূজোর উপবাস খুবই কষ্টসাধ্য এতে সকল উপবাসীদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা ত্যাগ করতে হয়। সকল উপবাসীদের মাটিতে কম্বল এবং চাদর বিছিয়ে ঘুমতে হয়। মহিলারাই বেশিরভাগেই এই উপবাস পালন করে থাকে। তবে বর্তমানে কিছু পুরুষ এই উপবাস পালন করছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন